রাতভর অভিযানেও উদ্ধার হয়নি শিশু সাজিদ, খোঁড়া হচ্ছে সুড়ঙ্গ

Posted on December 11, 2025

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : রাজশাহীর তানোরে পরিত্যক্ত গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে যাওয়া দুই বছরের শিশু সাজিদকে উদ্ধারে টানা ২১ ঘণ্টা ধরে চলছে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার অভিযান। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর ২টার দিকে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। ফায়ার সার্ভিসের ৫ ইউনিট ৩টি স্কেভেটর দিয়ে সাজিদকে উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। ৩০-৩৫ ফুট গভীর ওই গর্তের পাশে এই অভিযান চালানো হয়। এরপর রাত পেরিয়ে সকাল হলেও শিশুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে শিশুটি যে গর্তে পড়ে গেছে সেদিকে সুড়ঙ্গ খোঁড়া শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তবে এখনো শিশুটির সন্ধান মেলেনি।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে উপজেলার কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামের ধানখড়ের মাঠে মা রুনা খাতুনের পিছু পিছু হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ ৪০ ফুট গভীর একটি পরিত্যক্ত নলকূপের গর্তে পড়ে যায় শিশু সাজিদ। মাত্র ৮ ইঞ্চি ব্যাসের সেই অন্ধকার গর্তে পড়ার পরপরই শিশুটিকে উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট কাজ শুরু করে।

প্রাথমিকভাবে দড়ি, পাইপ ও অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহার করে উদ্ধার চেষ্টা চালানো হলেও গর্ত অতিরিক্ত সরু হওয়ায় উদ্ধারকর্মীরা গভীরে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পরে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন এক্সকেভেটর দিয়ে পাশেই আরেকটি গর্ত খননের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু পুরো তানোর উপজেলায় কোনো এক্সকেভেটর পাওয়া না যাওয়ায় উদ্ধার কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।

অবশেষে রাত ৮টার দিকে পাশের উপজেলা মোহনপুর থেকে ছোট দুটি এক্সকেভেটর এনে মাটি খনন শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। রাতভর প্রচেষ্টার পর বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে ৪০ ফুট গভীর নতুন গর্ত খনন সম্পন্ন হয়। এরপর সেখান থেকে শিশুটি যে গর্তে পড়ে গেছে, সেই দিকে সুড়ঙ্গ খোঁড়া শুরু করে উদ্ধার কর্মীরা।

তানোর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ম্যানেজার আব্দুর রউফ জানান, আমরা ৪০ ফুট গর্ত করেছি। সেই গর্ত থেকেই শিশুটি যে গর্তে পড়েছে সেদিকে সুড়ঙ্গ করা হচ্ছে। এখনো শিশুটির দেখা পাইনি। তবে শিশুটিকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের উদ্ধার অভিযান চলবে।

শিশুটির বাবার নাম রাকিব। তিনি ঢাকায় একটি কোম্পানিতে কাজ করতেন। ঘটনার পরই ঢাকা থেকে তিনি রওনা দেন এবং সন্ধ্যা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তাদের বাসা তানোর উপজেলার কলমা ইউনিয়নের কোয়েলের হাট এলাকায়।

তিনি বলেন, ছেলে গর্তে পড়ার অনেক পরে আমি খবর পেয়েছি। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রওনা দিয়েছিলাম। এখনো আমার ছেলেকে এখনো দেখতে পেলাম না। বেঁচে আছে কি না, কিছুই জানি না। তিনি আরও বলেন, আমি কিছু বলতে পারি না। এখন আল্লাহর উপরই ভরসা। ছেলেকে আল্লাহর জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছি। তিনি যা ভালো মনে করবেন, তাই করবেন।

এদিকে, রাতভর ঘটনাস্থলে সাজিদের পরিবার ও এলাকাবাসী অবস্থান করেন। তারা সাজিদকে ফিরে পাওয়ার জন্য সেখানে অশ্রুসিক্ত নয়নে দোয়া ও মোনাজাত করেন।