অনলাইন ডেস্ক: প্রচণ্ড ভয়ে শরীরের মধ্যে যে অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হয় চিকিৎসাশাস্ত্রের ভাষায় সেই অবস্থাকে প্যানিক অ্যাটাক বলে। এটি একধরনের মানসিক সমস্যা। কারও প্যানিক অ্যাটাক হলে তাঁর মনে হতে থাকে যে, সে মারা যাচ্ছে কিংবা হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। যে কারণে বাঁচার জন্য সে হাঁসফাঁস করতে থাকে, যার প্রভাব শরীরেও পড়ে। হুট করেই হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়, ঘাম, কাঁপুনি, শ্বাসকষ্ট—প্রতিটি উপসর্গই মনে হয় মাত্রাতিরিক্ত। মনে হয় মৃত্যু অতি সন্নিকটে।
উপসর্গ
অ্যানজাইটি অ্যান্ড ডিপ্রেশন অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকার মতে, প্যানিক অ্যাটাকের উল্লেখযোগ্য উপসর্গ হলো বুক ধড়ফড় বা দ্রুত হৃদস্পন্দন, ঘেমে যাওয়া, শরীর কাঁপা, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসরোধ হচ্ছে মনে হওয়া, বমিভাব, পেট কামড়ানো বা টাইট হওয়া, মাথা ঘোরানো বা চেতনা হারাচ্ছে মনে হওয়া, অসাড়তা বা শরীর ঝিনঝিন করা, ঠান্ডা বা গরম লাগা, আশপাশের সবকিছুকে অবাস্তব মনে হওয়া, মানসিক অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা ও মৃত্যু হতে যাচ্ছে এমন মনে হওয়া।
এসব উপসর্গের মধ্যে চারটি বা ততোধিক উপসর্গে ভুগলে ধরে নিতে পারেন যে, আপনার প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর চেয়ে কম উপসর্গ নিয়েও প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, প্যানিক অ্যাটাকের ক্ষেত্রে শরীরের সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম অত্যধিক সক্রিয় হয়ে যায়। সাধারণত প্যানিক অ্যাটাকের স্থায়িত্ব হয় ১০ মিনিট। এরপর শারীরিক প্রতিক্রিয়া কমতে থাকে। চিকিৎসকেরা জানান, প্যানিক অ্যাটাককে ভয়াবহ মনে হলেও শরীরের ক্ষতি হয় না। তবে প্যানিক অ্যাটাকের শিকার হলে খুব দ্রুত তা থামানোর চেষ্টা করতে হবে।
বাড়িতে দ্রুত যা করবেন
হঠাৎ প্যানিক অ্যাটাকের শিকার হলে তা থামানার জন্য আপনার কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এগুলো হলো-
১. প্রথমেই নিজেকে শান্ত করতে জোরে জোরে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারেন। এতে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায়।
২. যে মুহূর্তে এ ধরনের ভয় ধাওয়া করবে তখনই নিজের যে কাজটা সবচেয়ে ভালো লাগে সেটাই করা উচিত। হতে পারে সেটা গান গাওয়া বা স্রেফ টিভি দেখা ইত্যাদি।
৩. দিনে কিছু সময় নিয়মিত মেডিটেশন করুন। এতে উপকার পাবেন। সেই সঙ্গে মানসিক প্রশান্তির জন্য নিয়মিত যোগাসন করার অভ্যাস করতে পারেন।
৪. দুঃখজনক হলেও সত্যি দিনের মধ্যে বেশিরভাগ সময় আমরা অকার্যকরী চিন্তা করে কাটাই। যা আমাদের জীবনকে অতিষ্ট করে তোলে। তাই যতোটা সম্ভব দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
৫. শরীর ও মনকে ভালো রাখতে নিয়মিত শরীরচর্চা করার অভ্যাস করতে পারেন। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের শরীরচর্চা মানসিক স্ট্রেস অনেকটাই কমিয়ে আনে।
৬, যার সঙ্গে কথা বলে আরাম পান তার সঙ্গেই কথা বলুন। চারপাশে এমন কিছু মানুষ থাকেই যাদের কথা বলার কোনও মাপকাঠি থাকে না। ভালো না লাগলে তাদের এড়িয়ে চলুন।
৭, প্যানিক অ্যাটাক ঠেকাতে একটি চেয়ারে সোজা হয়ে বসুন। পায়ের পাতা মাটিতে চেপে রাখুন। এভাবে পাঁচ মিনিট বসে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিন। এ ছাড়া নিজেকে ভালো করে হাইড্রেটেড রেখেও অনেক সময় এই অবস্থার মোকাবিলা করা যায়।
আরও পড়ুন:
হঠাৎ শরীর অবশ হয়ে যাওয়া রোগ জিবিএস, লক্ষণ আর চিকিৎসা কী


