কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেছেন, নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া দরকার, সে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ডিএমপি ৩৬৫ দিনই চ্যালেঞ্জের মধ্যে থেকে কাজ করে থাকে এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুলিশের তৎপরতার কারনে চলমান অবরোধে যত নাশকতা হচ্ছে, তা নাশকতাকারীদের চেষ্টার তুলনায় অনেক কম হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ককটেল এবং বিস্ফোরক বিভিন্ন সরঞ্জামসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বুধবার রাতে রাজধানীর ভাষানটেক এলাকা থেকে ৮ জন, শাহআলী থেকে ১ জন ও শাহবাগ এলাকা থেকে ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো মাহফুজ হোসেন মুনা (২০), মো. ইয়াছিন (১৯), মো. ফরহাদ (১৯), মো. মাহি (১৮), মো. আউলাদ হোসেন (১৮), মো. নাছিম (১৮), মো. আমজাদ আলী হোসেন (১৮), মো. তানভীর হোসেন (১৮), মো. নিজাম উদ্দিন জসিম, নূর মোহাম্মদ শিকদার (২৩), মোহাম্মদ বখতিয়ার চৌধুরী ওরফে শাহীন (২৪) ও মো. রুবেল (২০)।
এদের মধ্যে নিজাম উদ্দিন জসিম রূপনগর থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। বাকিরাও অবরোধের কর্মসূচির সমর্থক, তবে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, ডিএমপি সভা সমাবেশসহ ঢাকায় বিভিন্ন কর্মসূচির বিষয়ে অনেক আন্তরিক। গত ৪ মাস ধরে ঢাকায় রাজনৈতিক-সামাজিকসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে ডিএমপি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এরপরেও আমাদের কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে।
আমরা বেশ কিছু জায়গায় বিস্ফোরক জাতীয় বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহারের প্রচেষ্টা লক্ষ্য করেছি। গতকাল ভাষানটেকে একটি নির্মাণাধীন ভবনে বিস্ফোরক সামগ্রীসহ জমায়েত হওয়া ৮ জনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে নাশকতামূলক সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে, সেসব ব্যবহার করতে পারলে নাশকতার ব্যাপকতা আরও বাড়তে পারতো।
তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নাশকতার প্রয়াস বেড়েছে। কয়েকটি এলাকায় ককটেল ছুড়ে মেরেছে, তবে পুলিশি তৎপরতার কারণে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
রাজধানী ঢাকার নিরাপত্তার প্রচেষ্টা সুদৃঢ় রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগামী দিনগুলোতে এ ধরনের নাশকতার চেষ্টা করলে ডিএমপি পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে নিরাপত্তা প্রদান করবে।’
তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গ্রেফতারকৃতদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে। তারা সবাই অবরোধের সমর্থনে এসেছে, তবে আমরা প্রত্যেকের পদবি যাচাই-বাছাই করছি।’
তিনি আরও বলেন, ঢাকায় ৪ থেকে ৫ হাজার বাস চলাচল করে, লাখ লাখ যানবাহন রয়েছে। এরমধ্যে কিছু যানবাহন যত্রতত্র পার্কিং করা থাকে। অরক্ষিতভাবে অনেক জায়গায় যে গাড়িগুলো থাকে, নাশকতাকারীরা এ সুযোগটা কাজে লাগায়। তবে নাশকতা যা করেছে, পুলিশের তৎপরতার কারনে সেটা তাদের প্রচেষ্টা বা উদ্যোগের চেয়ে কম।
তবে চোরাগোপ্তা হামলার শতভাগ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। আমাদের পক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টাই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন থাকে। আমাদের সব অফিসাররাও চেষ্টা করছে, নাশকতা যতে না হয় সেদিকে কঠোর নজর রাখছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির এ কর্মকর্তা বলেন, শহরে যে পরিমাণ যানবাহন সে পরিমাণ পার্কিংয়ের জায়গা নেই। যদি সিকিউরড জায়গায় পার্কিং সিস্টেম থাকতো, তাহলে এক জায়গায় আমরা নিরাপত্তা দিয়ে রাখতাম। কিন্তু গাড়িগুলো ছড়ানো ছিটানো থাকে, আর তারা সুযোগটা নেয়। এরপরেও আমরা ১৯ জনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করেছি, এটা এত সহজ কাজ নয়।
বিস্ফোরক সামগ্রী কোথা থেকে সংগ্রহ করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা জোগাড় করতে চায় তারা ঝুঁকি নিয়েও জোগাড় করে। এরপরেও আমরা লুজ পেট্রোল বিক্রির বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। বিভিন্ন কেমিকেল যেগুলো গার্মেন্টসে ব্যবহার করা হয়, দেখা গেছে তারা সেগুলো কোনোভাবে সংগ্রহ করে বিভিন্ন সামগ্রী মিশিয়ে বিস্ফোরক তৈরি করে।
বাসগুলোর নিরাপত্তায় নির্ধারিত স্থানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান থেকে প্রচেষ্টার ঘাটতি নেই। তারপরেও বাস্তবতা দেখেন। ঢাকায় যে পরিমাণ মানুষ, সে পরিমাণ জায়গা নেই। পর্যাপ্ত পার্কিং সিস্টেম নেই স্বীকার করতেই হবে। বড় টার্মিনালে অনেক বাস থাকেই। তারপরেও সাড়ে চার হাজার ৫ হাজার বাস চলাচল করে, যেগুলোর জন্য পর্যাপ্ত পার্কিং নেই। তবে আমাদের প্রচেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই।