কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : ৩৩টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)। এর ফলে সরকারের ওষুধ কেনায় প্রায় ১১৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
বুধবার (১৩ আগস্ট) এসেনসিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আ. সামাদ মৃধা সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ৩৩টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম কমানো হয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। এতে সরকারের ওষুধ ক্রয়ে ১১৬ কোটি টাকার মতো সাশ্রয় হবে। দাম কমানো ওষুধের মধ্যে রয়েছে ট্যাবলেট, ক্যাপসুল ওরস্যালাইন, ইনজেকশনসহ ৯টি ধরন। এছাড়া বর্তমান সরকারের মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদনে গতি আনতে সিন্ডিকেট, দুর্নীতিসহ বেশ কিছু সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ভবিষ্যতে টিকা এবং বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্ট উৎপাদনে প্রতিষ্ঠানটির নতুন প্লান্ট স্থাপনের কথাও জানান সামাদ মৃধা।
তিনি বলেন, আমাদের নতুন দুটি প্লান্ট হচ্ছে। এরমধ্যে একটি ভ্যাকসিন উৎপাদনমুখী বায়োটেক প্লান্ট। এই প্লান্টের আওতায় সানতনি পদ্ধতির ওষুধ উৎপাদনের বাইরে গিয়ে ইনসুলিনসহ বায়োলজিক্যাল পণ্যের উৎপাদন বাড়ানো হবে।
প্রতিষ্ঠানের খরচ কমানোর পাশাপাশি লাভজনক অবস্থা দাঁড় করাতে কাজ চলছে জানিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, উৎপাদন বাড়াতে এবং প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করতে সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া, দুর্নীতি দমন এবং প্রায় ৭০০ অপ্রয়োজনীয় কর্মচারী ছাঁটাই করার মতো বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫৯ কোটি টাকার সমপরিমাণ। এছাড়াও কাঁচামাল কেনায় টেন্ডার প্রক্রিয়া উন্মুক্ত করায় কম খরচে কাঁচামাল ক্রয় সম্ভব হয়েছে, যা প্রতি মাসে প্রায় ১৮ কোটি টাকা সাশ্রয়ের সুযোগ করে দিয়েছে।
মো. আ. সামাদ মৃধা আরো বলেন, অ্যাজমা বা হাঁপানি প্রতিরোধে মন্টিলুকাস্ট ট্যাবলেটের দাম পাঁচ টাকা করা হয়েছে। আগে এর মূল্য ছিল ১০ টাকা ৬৭ পয়সা। পাকস্থলীর এসিড নিঃসরণে ব্যবহৃত ওমিপ্রাজল ক্যাপসুলের দাম পাঁচ পয়সা কমে দুই টাকা ৭০ পয়সা, ব্যথা সারানোর ইনজেকশন কেটোরোলাক ভায়াল ৩০ থেকে কমে ২৩ টাকা হয়েছে। এমিটোজেনিক ক্যান্সার কেমোথেরাপির ক্ষেত্রে বমি প্রতিরোধী অনডানসেট্রন ইনজেকশন ভায়ালে কমেছে তিন টাকা, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবহৃত সেফট্রিয়াক্সোন ইনজেকশনের দাম ১১৫ থেকে ৯০ টাকা করা হয়েছে। নিউমোনিয়া চিকিৎসায় ব্যবহৃত সেফটাজিডিম ইনজেকশনের দাম কমিয়ে ১৫০ থেকে ১০০ টাকা এবং শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধী সেফট্রিয়াক্সোন ইনজেকশন ১৭৫ থেকে ১৬০ টাকা করা হয়েছে। সেফুরোক্সিম ইনজেকশনে কমেছে ১০ টাকা। গ্যাস্ট্রিক এসিড নিঃসরণে ব্যবহৃত ইসোমোপ্রাজল ইনজেকশনের দামও ১০ টাকা কমেছে। মেরোপেনের দাম ৪৫০ থেকে ৩৪৩ টাকা করা হয়েছে। ওমিপ্রাজল ইনজেকশনের দাম ৬৪ থেকে কমিয়ে ৫২ টাকা করা হয়েছে।
১৪০টির মতো ওষুধ উৎপাদন করে ইডিসিএল। ধীরে ধীরে সব ওষুধের দাম কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও এসেনসিয়াল ড্রাগসের যৌথ উদ্যোগে দাম নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। মূলত ক্রয় প্রক্রিয়ায় পূর্ববর্তী সিন্ডিকেট ভাঙার কারণে দরপত্রে অধিক সংখ্যক দরদাতা প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে অংশগ্রহণ করছেন, ফলে কাঁচামাল আগের তুলনায় কম দামে কেনা সম্ভব হচ্ছে।
সরকারি ওষুধ উৎপাদন আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা জানিয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, নিজেদের কারখানায় উৎপাদন বাড়িয়ে টোল ম্যানুফ্যাকচারিং বন্ধ করা হবে এবং সরকারি চাহিদার ৭০ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশে উন্নীত করা হবে।


