December 14, 2025 - 8:07 pm
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeস্বাস্থ্য-লাইফস্টাইল'স্ক্যাবিস' কী ও কীভাবে ছড়ায়?

‘স্ক্যাবিস’ কী ও কীভাবে ছড়ায়?

spot_img

অনলাইন ডেস্ক: ‘স্ক্যাবিস’ একটি প্যারাসাইটিক বা পরজীবী চর্মরোগ। ‘সারকোপটিস স্ক্যাবিয়া’ নামে এক ধরনের পরজীবীর আক্রমণে এ রোগ হয়। ‘স্ক্যাবিস’ হয়েছে এমন কারো সরাসরি সংস্পর্শ, আক্রান্ত ব্যক্তির জামা-কাপড়, বিছানা, তোয়ালেসহ ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মাধ্যমে জীবাণু একজন থেকে আরেক জনের শরীরে ছড়ায়।

মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “সাধারণত গরমের সিজনে এখন বিভিন্ন ধরনের চর্ম রোগ, স্ক্যাবিস বেশি ছড়ায়। সারা বছরই থাকে। কিন্তু এই সিজনে বেশি ছড়ায়।”

এ রোগ কীভাবে ছড়ায়, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “যে স্থানে ঘনবসতিপূর্ণ যেমন বস্তি এলাকা, হোস্টেল- যেখানে অনেকে একসঙ্গে থাকেন, সেখানে স্ক্যাবিস বেশি হয়। যারা নিয়মিত কাপড়-চোপড় ধোয় না, নিয়মিত গোসল করে না অর্থাৎ যারা অপরিচ্ছন্ন থাকে, তাদের মাধ্যমে এই পরজীবী বেশি আক্রমণ করে।”

স্ক্যাবিসের লক্ষণ বা উপসর্গ কী?
‘স্ক্যাবিস’ এর প্রধান উপসর্গ হলো এ রোগে আক্রান্ত হলে সারা শরীর চুলকাতে থাকে।

চিকিৎসকরা জানান, শরীরের বিভিন্ন ভাঁজে ভাঁজে যেমন দুই আঙুলের ফাঁক, কোমর, ঘাড়, নিতম্বে, যৌনাঙ্গে, হাতের তালুতে, কবজিতে, বগলের নিচে, নাভি ও কনুইয়ে এ রোগের সংক্রমণ বেশি হয়। এসব স্থানে ছোট ছোট লাল দানাদার র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি ওঠে। যা খুব চুলকায়। এগুলো থেকে পানির মতো তরল বের হতে পারে।

সাধারণত রাতে চুলকানি বেশি হয়। আক্রান্ত স্থানে চুলকানির ফলে ক্ষত হতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে অন্য সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি দেখা দেয়। তবে এ রোগের উপসর্গ পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক সময় ভিন্ন হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অন্য ধরনের উপসর্গ নিয়ে এ রোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়।

শিশু বিশেষজ্ঞ মামুন বলেন, “দেখা গেছে একটা বাচ্চা ঠাণ্ডা – কাশি, জ্বর নিয়ে আসছে সাথে স্ক্যাবিস আছে। একটা বাচ্চা নিউমোনিয়া নিয়া আসছে সাথে স্ক্যাবিস। আবার ডায়রিয়ার সাথে স্ক্যাবিসও আছে- এমন শিশু রোগী বেশি।”

কিন্তু পূর্ণবয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে লাল দানা দানা স্ক্যাবিস হলেও ‘সেকেন্ডারি ইনফেকশন’ হলে জ্বর বা অন্য উপসর্গ পাওয়া যায় বলে জানান চিকিৎসকরা।

চিকিৎসা কী?
চিকিৎসকরা বলছেন ‘স্ক্যাবিসের’ দুই ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়। একটা প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা, আরেকটা প্রতিকার।

সাধারণত প্রতিরোধমূলক পরামর্শগুলোই চিকিৎসকরা বেশি দিয়ে থাকেন।

মামুন বলেন, “যাতে স্ক্যাবিস না হয় বা না ছড়ায়, সেজন্য প্রতিরোধমূলক পরামর্শগুলোই আমরা দিয়ে থাকি। কারণ পরিবারের একজন সদস্যের স্ক্যাবিস রোগ হলে অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে যায়। তাই সচেতন থাকতে হবে। একজনের শুধু চিকিৎসা নিলে হবে না, কারণ এটা যেহেতু ছোঁয়াচে একজনের থেকে আরেক জনের শরীরে ছড়ায়- তাই সবারই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।”

*পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
*গরম পানি দিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে গোসল করতে হবে।
*সাবান দিয়ে গোসল করার পর শরীর ভালো করে মুছে শুকাতে হবে।
*চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গলা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের সব জায়গায় লোশন বা ক্রিম লাগাতে হবে। এরপর ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পর আবার সাবান দিয়ে গোসল করতে হবে। এক সপ্তাহ এভাবে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।
*চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মুখে খাওয়ার ওষুধ খেতে হবে।
*রোগীর বিছানার চাদর, বালিশের কভার, গামছা- তোয়ালেসহ ব্যবহৃত অন্যান্য কাপড় নিয়মিত গরম পানিতে ফুটিয়ে পরজীবী-মুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনে পোশাক আয়রন করে নিতে হবে। কারণ জীবাণুগুলো কাপড়ে লেগে থেকে সংক্রমণ ঘটায়।
*ঘর-বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
*যেসব খাবার খেলে রোগীর অ্যালার্জি হয়, সেসব এড়িয়ে চলতে হবে।
*স্ক্যাবিস আক্রান্ত ব্যক্তিকে পুষ্টিকর খাবার ও ফলের রস খেতে হবে।
*প্রচুর পরিমাণে পানি পান ও তরল খাবার বেশি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
*রোগ সেরে যাওয়ার পরও রোগীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র এভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

শরীরে পানিশূন্যতা না হলে চর্ম রোগ কম হয় বলে চিকিৎসকরা আক্রান্তদের সুষম ও তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আক্রান্ত রোগী সুস্থ হতে সাধারণত সাতদিন লাগে।

তবে কারো কারো ক্ষেত্রে সুস্থ হতে পনেরো্ দিন থেকে মাস-খানেক বা ইনফেকশন হলে তারও বেশি সময় লেগে যেতে পারে বলে জানান চিকিৎসকরা।

চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ মাসিউল আলম হোসেন বলেন, “প্যারাসাইটটা চামড়ার উপরিভাগে থাকে। এরা ভেতরে যায় না। চামড়ার উপরিভাগেই চলাচল করে, ডিম পাড়ে, বাচ্চা দেয়। নিয়মানুযায়ী প্রথম যে ট্রিটমেন্ট দেয়া হয়, তাতে এগুলো মারা যাবে।”

“তারপরে আবার পাঁচ বা সাতদিন পরে রিপিট করাই। সেক্ষেত্রে প্যারাসাইটের ডেড যে উপাদানগুলো থাকে সেটা আবার চুলকানি বাড়ায়। তখন এটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আবার মেডিসিন দিতে হয়।”

তবে চুলকানি হলেই তা ‘স্ক্যাবিস’ রোগ নয় বলে জানান চিকিৎসকরা। তাই রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য চর্ম রোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় ?
ছোঁয়াচে এ রোগটির সংক্রমণ এড়াতে বা প্রতিরোধে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। সুস্থ ব্যক্তিদের আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে।

আক্রান্ত ব্যক্তির পোশাক, বিছানা ও সাবান ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

পরিবারের বা ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে একজন আক্রান্ত হলে অন্যদেরও স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই একজন আক্রান্ত হলে তার সঙ্গে থাকা অন্য সবার চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

চর্ম রোগ মাসিউল আলম হোসেন বলেন, “এই প্যারাসাইটটা (সারকোপটিস স্ক্যাবিয়া) যখন শরীরে ঢোকে, ঢোকার পরে সিম্পটম্প পাওয়া যায় দুই থেকে তিন সপ্তাহ পরে। অলরেডি আপনি ইনফেক্টেড কিন্তু টেরই পাবেন না। সমস্যাটা এ জায়গায়। আর এ কারণেই একজন আক্রান্ত হলে ওই স্থানের সবার চিকিৎসা শুরুর পরামর্শ দেই।”

মাসিউল আলম হোসেন জানান এ রোগে প্রথম থেকেই সচেতন না হলে সেকেন্ডারি ইনফেকশনের কারণে অনেক সময় কিডনি জটিলতাও দেখা দিতে পারে।

” এ রোগে সচেতন না হলে সেকেন্ডারি ইনফেকশন হয়। এটা হওয়ার পর কেউ যদি ট্রিটমেন্ট না নেয়, নেগলেক্ট করে, তবে আলটিমেটলি এটা কিন্তু কিডনিকে ইনভলভ করে। কিডনি ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে ” বলেন তিনি।

“বিপদটা এখানে। তবে একটু লং টার্মের ব্যাপার। এটার খারাপ সাইডটা হলো এটা। এজন্য আমার কাছে যখন রোগী আসে আমি কিডনিটা চেক করে নেই,” বলেন এই চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ। সূত্র-বিসিসি।

এদিকে কুমিল্লা ও রাজশাহীতে ছোঁয়াচে রোগ ‘স্ক্যাবিস’-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এই দুই মহানগরের সরকারি হাসপাতালগুলোয় খোস-পাঁচড়া জাতীয় এ রোগে আক্রান্ত রোগীর ভিড় বাড়ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

কুমিল্লার মুরাদনগরে সাত বছর বয়সী এক শিশু এই ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তাকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে।

শিশুটির মা আয়শা খানম বলেন, “ছোড মাইয়ার (মেয়ে) গত সপ্তাহে প্রথমে জ্বর আসছে, ডাক্তারের কাছে নেই নাই, ওষুধ দিছি। পর দিন দেখি ডান হাতের আঙ্গুলে খালি চুলকায়। আঙ্গুলের চিপায় চিপায় লাল লাল ফোস্কার মতন।”

“তখনও পাত্তা দেই নাই। পরেরদিন দেখি এগুলা ভইরা গেছে শরীরের চিপায় চিপায়। তিন দিনের দিন উপজেলা হেলথ সেন্টারে নিছি। ডাক্তাররা কয় এটা ছোঁয়াচে, সবার থেকে আলাদা রাখন লাগবো মাইয়ারে। ওষুধ দিছে, ক্রিম, লোশন দিছে। সাত দিন চলে এখনও ভালো হয় নাই, ” বলছিলেন আয়শা খানম।

চিকিৎসকরা বলছেন, সাধারণ মানুষ অনেক সময় ‘স্ক্যাবিস’কে খোস-পাঁচড়া বলে উল্লেখ করে।গরমের সময়ে এই ছোঁয়াচে রোগটির প্রাদুর্ভাব বেশি হলেও এখন সারা বছরই দেখা দেয়।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ

ওসমান হাদির অবস্থা অপরিবর্তিত : মেডিকেল বোর্ড

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক: সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ মো. ওসমান...

এমবিবিএস ভর্তির পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাসের হার ৬৬.৫৭

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক: ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এবার পাসের হার ৬৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। রোববার...

হাদির ওপর হামলাকারী মূল আসামি দেশেই আছে: ডিএমপি

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলাকারী মূল আসামি দেশেই আছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা...

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ৩৮৭ জন ডেঙ্গু রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে...

নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিরাপত্তা প্রটোকল দেবে পুলিশ

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিরাপত্তা প্রটোকল দেওয়া হবে। এই প্রটোকলে রাজনৈতিক...

সূচকের পতনে লেনদেন শেষ

পুঁজিবাজার ডেস্ক: সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন সূচকের সাথে কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার...

এন্টারপ্রাইজ কানেক্টিভিটি ও ডিজিটাল সল্যুশনে পিটিসি-এক্সেনটেকের কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি

কর্পোরেট ডেস্ক: পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানি পিএলসি (পিটিসি)-এর সাথে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এক্সেনটেক পিএলসি। করপোরেট সার্ভিস, সিম-ভিত্তিক এন্টারপ্রাইজ সল্যুশন এবং ডিজিটাল সক্ষমতা...

গ্রাহক সন্তুষ্টির প্রত্যয় নিয়ে দেশের ১৬ অঞ্চলে ইউসিবির টাউনহল

কর্পোরেট ডেস্ক: একই দিনে, একই সময়—দেশের ১৬টি অঞ্চলে একসাথে টাউনহল। কোথাও ব্যাংকের চেয়ারম্যান, কোথাও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কোথাও এএমডি, ডিমডি কিংবা সিনিয়র কর্মকর্তারা। পুরো দেশের...