তিমির বনিক, স্টাফ রিপোর্টার: দেশের অনতম বৃহৎ মৌলভীবাজারের হাইল হাওরে শিল্পায়নের নামে ১ হাজার একর কৃষি জমি খনন করে ফিসারী করা হচ্ছে। সরকারি জায়গা দখল, জোরপূর্বক অসহায় কৃষকদের কৃষি জমি দলিল করে নেয়ারও অভিযোগ উঠেছে। কৃষি জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে ফিসারী করায় চাষাবাদে ব্যাঘাত ঘটছে। গত কয়েক দিন যাবত ১০০ টিরও বেশি এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে মাটি খনন করা হচ্ছে।
কৃষি জমি (যথাযথ ব্যবহার ও সংরক্ষণ) আইন, ২০২২” এর ৪ ধারা অনুযায়ী জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা দন্ডণীয় অপরাধ। এরকম কাজের ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর ও কৃষি অফিস থেকে অনুমোদন নিতে হয়। তাও নেয়নি এ চক্রটি। কৃষি জমি রক্ষা করার জন্য স্থানীয় কৃষকরা জেলা প্রশাসক সহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন ও প্রতিবাদ সভা করলেও পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। প্রশাসন ভুমিকা নিলে এমনটি হতো না বলে মন্তব্য করছেন স্থানীয় সচেতন কৃষকগণ।
জমির রকম পরিবর্তন করে প্রকল্প গ্রহণের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্থানীয়দের স্বাক্ষরসহ লিখিত অভিযোগ দিয়েছে মোঃ খাইরুল ইসলাম নামের এক বক্তি। অভিযোগে তিনি বলেন, উল্লেখিত হাওর এলাকার ছোট ছোট গোপাট, ছড়া, খাল, নদী-নালা, গো-মহিযাদি চলাচলের রাস্তা ইত্যাদি বন্ধ ও নিশ্চিহ্ন করে বাউন্ডারী, অবৈধ সীমানা দিয়ে ব্যরিকেড করে হাওরের পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসীর প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার সাধারণ কৃষকদের কৃষি কাজ সহ গো-মহিষ চড়ানোতে বাঁধা প্রদান করে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে।
জানা যায়, মৌলভীবাজার সদর এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলা নিয়েই হাইল হাওর। এ হাওরের অতলে মাছের অভয় আশম বাইক্কা বিল রয়েছে। হাওররের আয়তন ১০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে ২ হাজার একর সরকারি খাস জমি রয়েছে। হাওরে ১৪’শ হেক্টর বিল এবং পানি নিস্কাশনের জন্যে ১৩টি বড় নদী রয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই হাওর থেকে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন।
স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের আবেদন থেকে জানা যায়, আরএফএল কোম্পানী, ডা. আনোয়ার হোসেন ও ডা. আলমগীর সরকার প্রথম দিকে কয়েকজন কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে কিছু জমি কিনেন। এই কৃষি জমির মাঝে মধ্যে অনেক সরকারি জায়গাও রয়েছে। আবার অনেক কৃষকরা জমি বিক্রি করতে না চাইলে স্থানীয় দালাল চক্রের মাধ্যমে জায়গা বিক্রি করতে তাদেরকে বাধ্য করানো হয়।
এর প্রতিবাদে স্থানীয় কৃষকরা গত ১৫ই মার্চ সদর উপজেলার ইমাম বাজারে প্রতিবাদ সভা করেন। এসময় পুলিশের সাথে স্থানীয় কৃষকদের বাকবিতন্ডা হয়। পরেরদিন মৌলভীবাজার মডেল থানার এসআই মোঃ জাকির হোসেন রুবেল বাদী হয়ে মামলা করেন। এ মামলায় স্থানীয় কৃষকদের আসামী করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আব্দুল্লাহ মিয়া ও মোঃ আফতাব মিয়াকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এ মামলায়ও ফোসে উঠেছেন স্থানীয় কৃষকরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, হাওর তীরবর্তী আনীকেলী বড় গ্রামের শরীফা বেগম ও তামান্না আক্তার তাদের জায়গা বিক্রি না করলেও হবিগঞ্জ এগ্রো লিমিটেডের পক্ষে জায়গা দলিল করে নিয়েছেন মোঃ হাবিব মিয়া, মোঃ নাঈমুর রহমান নাহিদ, আম্বিয়া বেগম। দলিলে হবিগঞ্জ এগ্রো লিমিটেডের স্থায়ী ঠিকানা দেয়া হয়েছে প্রাণ আরএফএল সেন্টার গুলশান ঢাকা।
হাইল হাওরের মোহাম্মদপুর গ্রামের কৃষক নুরুল আমিন, সালেহ আহমদ মুন্না, সিকন্দর মিয়া, আনিকেলীবুদা গ্রামের সুরমান মিয়া ও তাজুল ইসলাম বলেন, “কিছুদিন পরে হাওরের নাম নিশানা থাকবে না। হাওরের ছোট ছোট গোপাট, ছড়া, খাল, নালা, গো-চর ও মহিষাদি চলাচলের রাস্তা নিশ্চিহ্ন করে ১০০ টি এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে কৃষি জমির মাটি কেটে ফিসারী করা হচ্ছে। বাউন্ডারী, অবৈধ সীমানা দিয়ে ব্যরিকেড করে কৃষি কাজ ও গো-মহিষ চড়ানোতে বাঁধা প্রদান করা হচ্ছে। স্থানীয় কতিপয় দালাল চক্রের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি, হুমকি ও মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানী করা হচ্ছে।
কাউয়াদিঘি হাওর রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক খছরু চৌধুরী বলেন, হাওরে খনন করে ফিসারী করা সম্পন্ন বেআইনী। এগুলো আওয়ামী স্টাইলে চলছে। হাওর ধ্বংসের পরিকল্পনা বন্ধ না হলে আমরা আন্দোলনে নামব। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ ইসরাইল হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।