মাহিদুল ইসলাম: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা অন্যান্য কর্মচারীদের তুলনায় অনেক বেশি হারে বেতন নিচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কোম্পানির এমডির বেতন অস্বাভাবিক হারে বাড়লেও সেই তুলনায় কোম্পানির মুনাফা বাড়েনি দেয়নি ডিভিডেন্ট।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে লিজিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) প্রতিমাসে যে পরিমাণ আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত এবং কোম্পানিগুলোর মুনাফা বৃদ্ধি, ডিভিডেন্ট ঘোষণা এবং খেলাপি ঋণ আদায়ে সাফল্যের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে এই রিপোর্টে।
দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশের পর, তৃতীয় পর্যায়ে আজ তুলে ধরা হলো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেসের ২০২০-২০২৩ সাল পর্যন্ত।
২০২০ সালে কোম্পানিটির এমডি মো: মশিউর রহমান পারিশ্রমিক ও অন্যান্য সুবিধা নিয়ে সর্বমোট নিয়েছেন ২২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। ঐ সময় কোম্পানিটির নিট ক্ষতি কমে দাড়ায় ৬৯৪ কোটি ২২ লাখ টাকা। ২০১৯ সালে যা ছিল ২৮০৩ কোটি টাকা। ২০২০ সালে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকশান হয়েছিল ৩১.৩০ টাকা যা আগের বছর লোকশান হয়েছিল ১২৬.৩৬ টাকা। ঐ বছর সমন্বিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদমূল্য হয়েছিল মাইনাস ১৪৪.৯৩ টাকা যা আগের বছর হয়েছিল মাইনাস ১৩৩.৬৩ টাকা।
২০২১ সালে কোম্পানিটির এমডি মো: মশিউর রহমান পারিশ্রমিক ও অন্যান্য সুবিধা নিয়ে সর্বমোট নিয়েছেন ২৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। একই সময়ে কোম্পানিটির নিট ক্ষতি কমে আসে ২০৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকায়। আগের বছর যেখানে লোকশান হয়েছিল ৬৯৪ কোটি টাকা। ২০২১ সালে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকশান হয়েছিল ৯.২৬ টাকা যা আগের বছর লোকশান হয়েছিল ৩১.৩০ টাকা। ঐ বছর সমন্বিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদমূল্য হয়েছিল মাইনাস ১৫৪.১৯ টাকা যা আগের বছর হয়েছিল মাইনাস ১৪৪.৯৩ টাকা।
২০২২ সালে কোম্পানিটির এমডি মো: মশিউর রহমান পারিশ্রমিক ও অন্যান্য সুবিধা নিয়ে সর্বমোট নিয়েছেন ৩৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। উক্ত বছর কোম্পানিটির নিট ক্ষতি কমে দাড়ায় ১৭৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা যা আগের বছর ছিল ২০৫ কোটি টাকা। ২০২২ সালে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকশান হয়েছিল ৮.০৫ টাকা যা আগের বছর লোকশান হয়েছিল ৯.২৬ টাকা। ঐ বছর সমন্বিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদমূল্য হয়েছিল মাইনাস ১৬২.২৪ টাকা যা আগের বছর হয়েছিল মাইনাস ১৫৪.১৯ টাকা।
২০২৩ সালে কোম্পানিটির এমডি মো: মশিউর রহমান পারিশ্রমিক ও অন্যান্য সুবিধা নিয়ে সর্বমোট নিয়েছেন ৪৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। ঐ সময় কোম্পানিটির নিট ক্ষতি হয়েছিল ২৪৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং শেয়ার প্রতি লোকশান হয়েছিল ১১.০৭ টাকা যা আগের বছর লোকশান হয়েছিল ৮.০৫ টাকা। ঐ বছর সমন্বিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদমূল্য হয়েছিল মাইনাস ১৭৩.৩১ টাকা যা আগের বছর হয়েছিল মাইনাস ১৬২.২৪ টাকা।
২০২০ সালে কোম্পানির লোন্স অ্যান্ড এডভান্স ছিল ৪০৩৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা যা ২০২৩ সালে হয়েছিল ৪১০৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ বিগত ৪ বছরে ২০২০-২০২৩ পর্যন্ত কোম্পানিটির লোন্স অ্যান্ড এডভান্স বেড়েছে ৬৭ কোটি টাকা ৬৪ লাখ টাকা।
পক্ষান্তরে, ২০২০ সালে কোম্পানিটির ডিপোসিট ও অন্যান্য প্রাপ্তি ছিল ২৬৮২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা যা ২০২৩ সালে হয়েছিল ২৯৬৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ বিগত ৪ বছরে ২০২০-২০২৩ পর্যন্ত কোম্পানিটির ডিপোসিট ও অন্যান্য প্রাপ্তি বেড়েছে ২৮৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
এছাড়া, ২০২০ সালে কোম্পানিটির সংরক্ষিত ক্ষতি ছিল (৩৪৮০) কোটি (২৭) লাখ টাকা যা ২০২৩ সালে হয়েছিল (৪০৭৩) কোটি (৬১) লাখ। অর্থাৎ বিগত ৪ বছরে ২০২০-২০২৩ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটির সংরক্ষিত ক্ষতি বেড়েছে (৫৯৩) কোটি ৩৪ টাকা।
কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৯ সালের এই বিপর্যয় এড়াতে বাংলাদেশ হাইকোর্ট ২০২০ সালে কোম্পানিটির চেয়ারম্যান পদে মো: নজরুল ইসলাম খান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে মো: মশিউর রহমানকে এপয়েন্টমেন্ট করেছিলেন। তারপর থেকে ধিরে ধিরে কোম্পানিটির ক্ষতির পরিমান কমে মুনাফার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
কোম্পানি সংক্রান্ত তথ্য পর্যবেক্ষণে জানা যায়, বিগত ৫ বছরে যথা ২০২৩ সালের সমাপ্ত বছরের কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে -১১.০৭ টাকা যা ২০২২ সালে ছিল -৮.০৫ টাকা, ২০২১ সালে ছিল -৯.২৬ টাকা, ২০২০ সালে ছিল -৩১.৩০ টাকা ও ২০১৯ সালে ছিল -১২৬.৩৬ টাকা।
কোম্পানির গত ৫ বছরের শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ (এনএভি) হয়েছে ২০২৩ সালে -১৭৩.৩১ টাকা যা ২০২২ সালে ছিল -১৬২.২৪ টাকা, ২০২১ সালে ছিল -১৫৪.১৯ টাকা, ২০২০ সালে ছিল -১৪৪.৯৩ টাকা ও ২০১৯ সালে ছিল -১১৩.৬৩ টাকা।
ডিএসই’র তথ্য অনুযায়ি ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখে উদ্যোক্তা পরিচালকের হাতে রয়েছে ৪১.৫৪ শতাংশ শেয়ার, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর হাতে রয়েছে ২২.৯৩ শতাংশ শেয়ার, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে .০১ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে রয়েছে ৩৫.৫২ শতাংশ শেয়ার।
তথ্য অনুসারে, গত বছর কোম্পানিটির শেয়ার দর উঠানামা হয়েছে ৩.৪০ টাকা থেকে ৬.১০ টাকার মধ্যে। গতকাল সমাপনি দর ছিল ৩.৭০ টাকা। ২০০৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে কোম্পানিটি বর্তমানে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে।