নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে দীর্ঘ পাঁচ বছর একই কর্মস্থলে থেকে শক্তিশালী ঘুষ-দুর্নীতির সিন্ডিকেট গড়ে তোলার অভিযোগের পর গত দুই মাস ১১ দিন আগে সিভিল সার্জনের স্ট্যাণ্ড রিলিজ আদেশে বদলি হওয়া বিতর্কিত স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মনোয়ারা বেগম আবারও মোটা অঙ্কের লবিং-তদবির চালিয়ে কর্ণফুলীতে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য সহকারী পদে থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজ বেতনে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (স্যানিটারি) হিসেবে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে সংযুক্ত থেকে বর্তমানে সপ্তাহের প্রতিদিন (সরকারি ছুটি ব্যতীত) দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
তথ্যমতে, এর আগে কর্ণফুলী উপজেলায় কর্মরত পাঁচ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার) কে স্ট্যাণ্ড রিলিজের মাধ্যমে বদলি করার পর নজিরবিহীনভাবে বহুল আলোচিত ও সমালোচিত ওই স্যানিটারি ইন্সপেক্টরকেও বদলি করা হয়। পুরো কর্ণফুলীতে তিনি দুর্নীতি পরায়ণ কর্মকর্তা হিসেবে কানাঘুষা ছিলো। তবে শোনা যাচ্ছে, সম্প্রতি তিনি আবারও কর্ণফুলী উপজেলায় পদায়নের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে মোটা অঙ্কের লবিং তদবির চালাচ্ছেন।

সূত্র জানায়, কর্ণফুলীতে ফিরে আসতে তিনি একেক সময় একেকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতার দ্বারস্থ হচ্ছেন। কখনো মহানগর বিএনপির এক নেতার কাছে, কখনো জামায়াত নেতাদের কাছে সহায়তা চাইছেন।
এছাড়াও তার পক্ষে লবিং করছেন বহুল সমালোচিত একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, এক ওসি তদন্ত এবং এস আলম গ্রুপের এক মুখপাত্র। এমনকি এদের মাধ্যমে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের ওপরও চাপ প্রয়োগের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে প্রচার রয়েছে। বরং এতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিব্রত অবস্থায় রয়েছেন এবং যেকোনো মুহূর্তে তাকে চট্টগ্রামের বাইরে বদলি করা হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
এই বহুল সমালোচিত স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন ব্যবসায়িক স্পট থেকে চাঁদাবাজি, স্বাস্থ্য সনদ প্রদানের নামে অর্থ আদায়, অভিযান পরিচালনার আগে ম্যাজিস্ট্রেটের আগমণ সংক্রান্ত তথ্য হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ফাঁস করা এবং ব্যবসায়ীদের হয়রানি করার মতো অভিযোগ ছিলো।
এ প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কোনো দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে পুরনো কর্মস্থলে ফেরানো হবে না। যারা ঘুষ-দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন, তারা ছাত্রদের রক্তে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে পুরনো স্টেশনে ফেরার সুযোগ পাবেন না—এটা নিশ্চিত থাকুন।’
অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী একই জায়গায় পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে কর্মরত আছেন, তাঁদের অন্য জেলায় বদলির সুপারিশ করা হবে। এ উদ্দেশ্যে বর্তমানে দুর্নীতির অভিযোগ থাকা অনেক কর্মকর্তার তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—কর্ণফুলীতে এমন কী আছে যে, অনেকেই আগের কর্মস্থলে ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছেন? কেউ কেউ নানা অজুহাতে বদলির আদেশ ঠেকাতে তদবির চালাচ্ছেন।
একজন সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, যিনি কর্ণফুলীতে তিন বছরের বেশি সময় নির্বাহী দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকলে একজন কর্মকর্তা বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে আঁতাত করে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হঠাৎ বদলির আদেশ তারা মানতে পারেন না এবং বিভিন্ন উপায়ে আগের কর্মস্থলে ফেরার চেষ্টা চালান, যা সত্যিই উদ্বেগজনক।’ স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বিষয়টি সত্য। তিনি আবারও পুরোনো স্টেশনে ফেরার আবেদন করেছেন। তবে আমরা সাংবাদিকদের বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে বদলি (স্ট্যাণ্ডরিলিজ) করেছিলাম। সুতরাং, কর্ণফুলীতে তাঁর আর ফেরা হচ্ছে না।’
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মনোয়ারা বেগমকে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে বদলি করা হয়।
একই আদেশে কর্ণফুলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (স্যানিটারি) হিসেবে নিয়োগ পান মাজেদা বেগম, যিনি এর আগে চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ছিলেন।