ময়মনসিংহ ব্যুরো: ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী আনন্দ মোহন কলেজের ছাত্রাবাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংর্ঘষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্রাবাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সেই সাথে আগামী তিন দিন শ্রেণী কার্যক্রম ও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার (১২ জানুয়ারি) রাতে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে উদ্ভুদ পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠক শেষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে রবিবার আনন্দ মোহন কলেজে ছাত্রাবাসের সিট বরাদ্দ নিয়ে শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের মাঝে বিরোধ দেখা দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোববার বিকেলে ও সন্ধ্যায় হলে কয়েক দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে দুই পক্ষের অন্তত ১০ আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কলেজ এলাকায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। পরে এ ঘটনায় ছেলেদের পল্লিকবি জসীমউদ্দীন হল, কবি নজরুল হল ও ভাষাসৈনিক আহমেদ মালেক হল বন্ধ ঘোষণা করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। সোমবার সকাল আটটার মধ্যে ছেলেদের ছাত্রাবাস ত্যাগের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে কলেজে আগামী তিন দিনের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে, ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজে শিক্ষার্থীদের বিরোধ ও ধাওয়ার ঘটনায় পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন হয়েছে।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় কলেজের পল্লিকবি জসীমউদ্দীন হলের সামনে ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে লিখিত বক্তব্যে ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন বলেন, ‘আনন্দ মোহন কলেজ হোস্টেলে অবস্থানকারী ছাত্রদের পক্ষ থেকে আজকের এই বার্তা প্রদান করছি। আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে শান্তিপূর্ণভাবে কলেজ হোস্টেলে অবস্থান করছি। ২০২৫ সালের সিট নবায়নসংক্রান্ত সৃষ্ট জটিলতায় আমরা আক্রান্তের শিকার হয়ে হলে অবস্থান করছি। এমতাবস্থায় কলেজ কর্তৃপক্ষের হল বন্ধ ঘোষণা সংক্রান্ত নোটিশ আমরা মানি না। কারণ, ২০২১-২২ সেশনের (দ্বিতীয় বর্ষ) ফাইনাল পরীক্ষা চলমান। এমতাবস্থায় হল কর্তৃপক্ষের এই অযৌক্তিক দাবি মানি না। ২৭ জানুয়ারি মাস্টার্স ২০২১-২২ সেশনের পরীক্ষা শুরু হবে। এ অবস্থায় এ দাবি মানা সম্ভব নয়। আমরা আশঙ্কা করছি যে হল বন্ধ থাকা অবস্থায় আজকের হামলাকারীরা হল দখল করবে, তাই আমরা হল ছাড়ব না। তিনি হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
অন্যদিকে, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আনন্দ মোহন ছাত্রদলের পক্ষ থেকেও পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এ সময় মহানগর ছাত্রদল ও আনন্দ মোহন কলেজ ছাত্রদলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এসময় লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন আশিক রাব্বি নামে এক ছাত্র।
তিনি বলেন, রবিবার শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদ করায় ছাত্রদল অপপ্রচারের শিকার হয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে হলের সিট নবায়নকে কেন্দ্র করে কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী ও ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো হলে সিট নবায়নের ক্ষেত্রে চারটি যৌক্তিক দাবি জানিয়েছিল। এর মধ্যে ছিল হলে মেয়াদোত্তীর্ণ কোনো শিক্ষার্থী থাকতে পারবেন না, অবৈধ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের চিহ্নিতদের বের করতে হবে, হলে গত ৫ আগস্টের পর যাঁরা অবৈধভাবে উঠেছেন, তাঁদের নবায়ন করা যাবে না এবং নবায়ন ফি ৫ হাজার ৫০০ টাকা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা দেখছি, প্রশাসনের সকাল আটটার মধ্যে হল বন্ধের সিদ্ধান্ত এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। দ্রুততম সময়ে হল বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হবে এবং অছাত্রদের স্থায়ীভাবে বের করতে হবে।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। আশা করছি কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা আর হবে না।
এ বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আমান উল্লাহ বলেন, ছাত্রাবাস সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের একটি টিম ছাত্রাবাসগুলোতে যাচ্ছে, তারা শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ছাত্রাবাস থেকে বের করার চেষ্টা করছে। আশা করছি বিকেলের মাঝে শিক্ষার্থীরা ছাত্রাবাস ছেড়ে দেবে।