নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ছাগল ভেড়ার পিপিআর রোগ নির্মূল এবং ক্ষুরারোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় ডোজ টিকাদান কার্যক্রমে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে। সেই সঙ্গে দায়সারাভাবে প্রকল্পটির কার্যক্রম শেষ করায় সেবা বঞ্চিত ছাগল-ভেড়া পালনকারীরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পিপিআর ও ক্ষুরা রোগ প্রকল্পের আওতায় সরকারিভাবে দেশব্যাপী ৪ মাসের উর্ধ্বে সকল সুস্থ ছাগল ভেড়াকে টিকা প্রদানের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। সেই লক্ষ্যে গত ১ থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত পুরো উপজেলায় চলে এ কার্যক্রম। বরাদ্দ হয় প্রায় ৭০ হাজার মাত্রা টিকা। এতে ওয়ার্ড ভিত্তিক ক্যাম্পেইন স্থান নির্ধারণ করে ভলান্টিয়ার ভ্যাক্সিনেটর ও সঙ্গে একজন দক্ষ কর্মী দিয়ে এলাকায় শতভাগ ছাগল-ভেড়ার পিপিআর টিকা প্রয়োগ করার কথা। প্রতিমাত্রা টিকা প্রয়োগকারীর জন্য সরকারিভাবে ৫ টাকা নির্ধারিত। সংশ্লিষ্ট প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা উদ্বোধনের মাধ্যমে উপজেলায় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করে কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করবেন।পাশাপাশি সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে মনিটরিং টিম। সেইসঙ্গে ব্যাপকভাবে এলাকায় মাইকিংসহ টিভি স্ক্রল ও বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রচার-প্রসারের জন্যও দেয়া হয় নির্দেশনা। সারাদেশে অতিবৃষ্টি বন্যা ও দুর্গাপূজার কারণে টিকা কার্যক্রম কিছুটা বিঘ্নিত হয়। সে জন্য ৭ দিন বাড়িয়ে ১৯ থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত করা হয়। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সরকারি পিপিআর টিকাদান কার্যক্রমের এ উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি। এতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারের এ গৃহীত প্রকল্পটির সফলতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এদিকে, টিকা বঞ্চিত সেবা গ্রহীতাদের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৫ থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের তেমন কোনো সত্যতা মেলেনি। কথা হয় ছাগল পালনকারী মেদুলিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, আমিনুর,জামির্ত্তা কাঞ্চননগরের মনির মিয়া, হেলেনা, লক্ষীপুরের মজিরন,গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী, উত্তর জামশার আলাউদ্দিন, সুজন মিয়া,পারিল রফিক নগরের জাহানারা খাতুন, ময়না আক্তার ও রামকান্তপুরের শাহনাজসহ অনেকের সাথে। সরকারিভাবে ছাগল-ভেড়ার টিকাদানের বিষয়ে কিছুই জানেন না তারা।
অন্যদিকে,বলধারা ইউনিয়নের ছানু মিয়া,রাশেদা আক্তার,আব্বাস আলী,সাথী আক্তার, ফরিদা খাতুন ও ফুলচানসহ অনেকেই বলেন,তাদের প্রতিটি ছাগলের টিকার জন্য ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়েছে। টাকা না দিলে পরবর্তীতে সরকারি টিকা বা কোনো সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে টাকা দিতে বাধ্য হন তারা।
বলধারা ইউনিয়নের টিকা কার্যক্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভ্যাক্সিনেটর রবি আহমেদ বলেন,আমরা সাত হাজার মাত্রা টিকা পেয়েছিলাম। এটা সম্পূর্ণ বিনামূল্যের, উপকারভোগীরা বখশিস হিসেবে খুশিতে যা দিয়েছে তাই নিয়েছি।
সিংগাইর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.মো. সাজেদুল ইসলাম বলেন, টিকাদান কার্যক্রমে গ্যাপ থাকতে পারে। টাকার বিনিময়ে ভ্যাকসিন দিয়েছে এটা আমি মানলাম না।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.মুজিবর রহমান বলেন, আগামী ২৭ নভেম্বর সিংগাইর উপজেলায় টিকা কার্যক্রম মনিটরিংয়ের মাধ্যমে গ্যাপ থাকা জায়গাগুলো ফিলাপ করার চেষ্টা করবো। সরকারি বিনামূল্যের টিকায় যদি কেউ টাকা নিয়ে থাকে প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।