কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : পরিবেশ সুরক্ষার স্বার্থে সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে নভেম্বরে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ থাকবে এবং ডিসেম্বর-জানুয়ারি প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি মানুষ যেতে পারবে না।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উিইং আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
তিনি বলেন, নভেম্বরে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যেতে পারবে। কিন্তু রাতে থাকতে পারবে না। আর ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি মানুষ সেন্টমার্টিনে যেতে পারবে না।
অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, পরিবেশবান্ধব চিন্তা করে এই পদক্ষেপগুলো নেয়া হয়েছে। সিঙ্গেল প্লাস্টিক পুরোপুরিভাবে সেন্টমার্টিন নিয়ে যাওয়া বন্ধ করা হবে। ফেব্রুয়ারি মাসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য সেন্টমার্টিন বন্ধ থাকবে বলেও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়।
এসময় প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, সহকারী প্রেস সচিব নাইম আলী ও সুচিস্মিতা তিথি উপস্থিত ছিলেন।
গত ৭ অক্টোবর সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছিলেন, সেন্টমার্টিনে রাত্রিযাপন বন্ধ ও পর্যটক নির্দিষ্ট করা হবে কিনা-তা সব স্টেক হোল্ডারদের সাথে আলোচনা করে নভেম্বরের আগেই সিদ্ধান্ত হবে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, সেন্টমার্টিনে বিপন্ন প্রাণী আছে। এটা প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হয় ১৯৯৯ সালে। ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সিদ্ধান্ত ছিল পর্যটকরা রাতে থাকতে পারবেন না। ২০২০ সালে সিদ্ধান্ত হয় রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। সে সময় প্রতিদিন ১২৫০ পর্যটক নিদিষ্ট করা হয়েছিলো। পরে ২০২৩ সালে প্রতিদিন ৮৮২ পর্যটক নিদিষ্ট করার সিদ্ধান্ত হয়। ২০২৩ সালে পর্যটন নির্দেশিকা বলা হয়েছিলো সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক দ্বীপে ব্যবহার না করার।
এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে নিবন্ধন ফি আদায়ের সুপারিশ করে পর্যটন মন্ত্রণালয়। এ সময় পর্যটন সচিব নাসরীন জাহান জানান, পরিবেশ বান্ধব পর্যটন শিল্প গড়তে মাস্টার প্ল্যান প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওর, নিঝুম দ্বীপসহ পাঁচ এলাকায় পর্যটনের বিশেষ গাইড লাইনও তৈরি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সেন্ট মার্টিন দেশের বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত এ দ্বীপটি দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের ভিড় লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকায় সেখানকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
দ্বীপটিতে প্রতিদিন অনিয়ন্ত্রিত পর্যটকদের যাতায়াত, অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ, পরিবেশ দূষণ, পর্যটকদের অসচেতনতা এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের কারণে সেখানকার ইকো-সিস্টেম অর্থাৎ প্রতিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিভিন্ন মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছিল। কিন্তু দ্বীপটিকে বাঁচাতে কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছিল।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দ্বীপটির পরিবেশ ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে বলেও মনে করেন পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন।
এসব কারণে দ্বীপটির প্রবাল, শৈবাল, সামুদ্রিক কাছিম, লাল কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুকসহ নানা জলজ প্রাণী এবং জীব-বৈচিত্র্য এখন বিলুপ্ত হবার পথে।
সেন্ট মার্টিনে যেকোনো ধরণের স্থাপনা গড়ে তোলার ব্যাপারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেগুলো উপেক্ষা করেই সেখানে গড়ে উঠছে একের পর এক রিসোর্ট, হোটেল, মোটেল।
জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে সরকার পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা- ইসিএ ঘোষণা করেছিল।
পরিবেশ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে থাকা এই দ্বীপটির স্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার। এছাড়া পর্যটক মিলে প্রতিদিন দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষের চাপ নিয়ে এক প্রকার মৃতপ্রায় অবস্থা সেন্টমার্টিনের।
অতিদ্রুত পর্যটকদের স্রোত ঠেকানো না গেলে এই দ্বীপের পরিবেশে ভারসাম্য ফেরানো রীতিমত অসম্ভব হবে বলে মনে করেন পরিবেশবাদীরা। সেন্টমার্টিনের জীব-বৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে দ্বীপটি যে কোন সময়ে সমুদ্রে বিলীন হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা।
তারা বলছে মানুষের কোলাহল এবং সৈকত ও পানিতে অতিরিক্ত দূষণের কারণে দ্বীপের বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী এরই মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়েছে সামুদ্রিক কাছিম।
আরও পড়ুন:
রাষ্ট্রপতি পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভ, নিরাপত্তা জোরদার
রাজনৈতিক কারণে নয়, শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ২৫২ এসআইকে অব্যাহতি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা