পটুয়াখালী প্রতিনিধি।। পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করে বিপাকে পড়েছেন তিন শিশুসন্তানের মা এক বিধবা নারী। প্রতিকারের বিপরীতে তিনি অভিযুক্তদের রোষাণলে পড়ে চরমভাবে নাজেহাল হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী ওই নারী শ্লীলতা হারিয়ে এখন জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
সূত্রের দাবি অনুযায়ি, ‘মির্জাগঞ্জ মরহুম হযরত ইয়ারউদ্দীন খলিফা (রহ.) মাজার ওয়াকফ্ স্টেটের সাধারণ সম্পাদক সহিদুল ইসলাম ফয়সাল, হিসাবরক্ষক সোহাগ মল্লিকের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারী সহ অন্তহীন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। এই দুই মূলহোতা ছাড়াও তাদের অপকর্মের অন্যতম সহযোগী মাজারের দানবাক্সের আদায়কারী আল আমিন পিওন, জাকির মোল্লা ও ফোরকান মাঝি। তাদের বিরুদ্ধে গত ১৮ সেপ্টেম্বর জেলার গলাচিপা পৌর এলাকার বাসিন্দা ইকবাল শরীফের মেয়ে তিন শিশু সন্তানের মা বিধবা সুমি (৩২) একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক বরাবর দায়ের করা অভিযোগে শ্লীলতাহানি সহ বিভিন্ন ধরণের নির্যাতন এবং নানাধরণের অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়।
সূত্র জানায়, অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি নিজে দায়িত্ব এড়িয়ে মির্জাগঞ্জের তহশীলদার তারিকুল ইসলামকে উল্লেখিত অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেন।
সূত্র জানায়, তহশীলদার তারিকুল এবং অভিযুক্তরা পরস্পর যোগসাজশে জোটবদ্ধ হয়ে ভুক্তভোগী নারী সুমি কে তদন্তের কথা বলে মির্জাগঞ্জ মাজারের অফিসে আসতে বলেন। তদন্তের স্বার্থ চিন্তা করে সুমি মির্জাগঞ্জের মাজারের অফিসে গেলে সেখানে আগে থেকে জোটবদ্ধ হয়ে থাকা সহিদুল ইসলাম ফয়সাল, হিসাবরক্ষক সোহাগ মল্লিক, তহশীলদার তারিকুল ইসলাম গংরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে ভুক্তভোগী নারী সুমি কে শারীরিক এবং মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এক পর্যায়ে তার শরীর স্পর্শ করে কুপ্রস্তাব দেয় এবং শ্লীলতাহানি করে। এতে বাধা দেয়ায় তার নারী চরিত্র নিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করা হয়। এসময় সুমি তার তিন এতিম শিশুসন্তানের কথা উল্লেখ করে তাদের বিকৃত লালসা থেকে বাঁচার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি।
সূত্রের দাবি অনুযায়ি, সহিদুল ইসলাম ফয়সাল, হিসাবরক্ষক সোহাগ মল্লিক, তহশীলদার তারিকুল ইসলাম গং একই পথের পথিক। অর্থাৎ তারা একই অপকর্মের ভাগিদার। তহশীলদার তারিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে নারীকেলেঙ্কারী ছাড়াও ভূমিদস্যুতা এবং নানা সন্ত্রাসী কর্মকা-ের অভিযোগ রয়েছে। এই সরকারি চাকুরিজীবী সন্ত্রাসী হিসেবে স্থানীয়দের কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত। তার রয়েছে বিশাল একটি সন্ত্রাসীবাহিনী। ওই বাহিনীতে শতাধিক ক্যাডার সক্রিয়ভাবে কর্মকা- পরিচালনা করছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়- ‘তহশীলদার তারিকুল ইসলাম এবং তার বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুতা এবং হত্যাপ্রচেষ্টার মামলা রয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্তকারী তহশীলদার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওই মহিলা (ভুক্তভোগী সুমি) খারাপ চরিত্রের। ওর মতো আমার স্ত্রী-তো কারো কাছে অভিযোগ কওে না। বিধবা সুমির তিন এতিম শিশুসন্তানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন- এরকম হাজার হাজার এতিম আছে। উল্লেখিত অভিযুক্তদের বিষয়ে তিনি বলেন- আমারা এক জায়গায় পাশাপাশি থাকি। উনারা অনেক ভালো মানুষ।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন জানান, ভুক্তভোগী নারী ২০ অক্টোবর তার কাছে ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করেছেন। তিনি বলেন- ‘অভিযোগ শুনে মনে হয়েছে পুরো বিষয়টি ন্যাক্কারজনক’। বিষয়টি নিজে পুনর্তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ইউএনও কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ‘ভুক্তভোগী সুমি’র স্বামী মৃত হেলাল মাতুব্বর মির্জাগঞ্জ ইয়ারউদ্দীন খলিফা (রহ.) মাজারের দানবাক্সের আদায়কারীর দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি ২০২২ সালে মৃত্যুবরণ করার পর মাজারের সাধারণ সম্পাদক সহিদুল ইসলাম ফয়সাল, হিসাবরক্ষক মোঃ সোহাগ মল্লিক, মাজারের আদায়কারী আল আমিন পিওন, জাকির মোল্লা ও ফোরকান মাঝি পরস্পর যোগসাজশে তার স্বামীর ব্যক্তিগত টাকায় বানানো ৬শতাধিক দানবাক্স এবং ওই দানবাক্সের তালা, শিকল ও দানবাক্সের টাকা আত্মসাৎ করে সুমি কে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র শুরু করেন।’
সূত্রমতে, ‘মাজারের টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাল স্বাক্ষর সম্বলিত ১০০টি দানবাক্সের একটি বন্ধকী চুক্তিনামা এবং ২০২২ সালের ৮ জানুয়ারি ২০০টি দানবাক্সের বিক্রয় চুক্তিনামার ফটোকপি দেখিয়ে অভিযোগকারী সুমি’র কাছে ৩লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। বন্ধকী চুক্তিনামা দেখিয়ে ১লক্ষ টাকা এবং বিক্রয় চুক্তিনামা দেখিয়ে ২ লক্ষ ৩০ হাজার মিলিয়ে মোট ৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দাবি করা হয়।’
অভিযোগ জানা গেছে, ‘তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে অপারগ হওয়ায় ২০২৪ সালের ১০ জুলাই সুমি কে মাজারের সাধারণ সম্পাদক সহিদুল ইসলাম ফয়সাল স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ দেয়া হয়। ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়- ‘২ লক্ষ ৩৩ হাজার ৩৭৩ টাকা’ ১ সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধ না করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা সহ আদায়কারীর পদ থেকে বহিষ্কার করা হবে।
ভুুক্তভোগী সুমি অভিযোগে উল্লেখ করেন- ‘তার স্বামী মৃত মোঃ হেলাল মাতুব্বর মাজারের দানবাক্সের আদায়কারী ছিলেন। কিন্তু তিনি মাজারের দানবাক্সের আদায়কারী কিংবা অন্য কোনো পদে কোনোদিন দায়িত্ব পালন করেননি। তবু তাকে বিশেষ স্বার্থে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।’
সুমি’র দাবি, ‘এবিষয়ে প্রতিকার পাওয়ার জন্য মির্জাগঞ্জ মরহুম হযরত ইয়ারউদ্দীন খলিফার (রহ.) মাজারের সাধারণ সম্পাদক সহিদুল ইসলাম ফয়সাল ও মাজারের হিসাবরক্ষক সোহাগ মল্লিকের নিকট বারবার অনুনয়-বিনয় করেছেন। কিন্তু তারা কোনো সুরাহার ব্যবস্থা না করে উল্টো তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেছেন। এছাড়া তার ব্যক্তিগত নারীচরিত্র নিয়ে প্রকাশ্যে অপপ্রকাশ্যে বিভিন্ন ধরণের কুকথা বলে কুপ্রস্তাব দিয়ে নাজেহাল করা হয় তাকে।’
এবিষয়ে ভুক্তভোগী অসহায় সুমি জানান, ‘অনেকের কাছে বারবার ধর্ণা দিয়েও উপায় মেলেনি। তাই সমস্যার সুষ্ঠু সুরাহার জন্য নিরুপায় হয়ে জেলা প্রশাসকের শরণাপন্ন হয়েছেন তিনি।
সমস্যার সমাধান সহ প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে চাঁদাবাজীর ফাঁদ তৈরি এবং নারী হিসেবে তাকে বিভিন্নভাবে নাজেহাল করার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিন শিশু সন্তানের মা অসহায় বিধবা সুমি।