নিজস্ব প্রতিবেদক: ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থান নিয়ে নতুন জাতীয় দিবস যুক্ত হতে পারে। তিনি বলেন, এতগুলো জাতীয় দিবস পালনের দরকার নাই। যেগুলো তাৎপর্যপূর্ণ সেগুলো রেখে, বাকিগুলো বাতিল করা হবে। এছাড়া, জুলাই ও আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে নতুন দিবসও যুক্ত হতে পারে। যেহেতু নতুন অভ্যুত্থান।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
আটটি জাতীয় দিবস বাতিলের সিদ্ধান্তের বিষয়ে নাহিদ বলেন, ‘জাতীয় দিবস বলতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ তাদের নিজেদের বিভিন্ন দিবস চাপিয়ে দিয়েছে। তাই সেগুলো থাকছে না।’ তিনি বলেন, ‘৭ মার্চ গুরুত্বপূর্ণ, তবে তা জাতীয় দিবস হওয়ার মত না। আওয়ামী লীগ অনেক দিবসকে নষ্ট করে ফেলেছে। তারা তো শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি তৈরি করে পূজাও করেছিল।’
৭ মার্চ নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে না জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান অবশ্যই জাতির জনক না। এই ভূখণ্ডে অনেকেরই ভূমিকা রয়েছে, লড়াই রয়েছে। ইতিহাসের বহুমুখীতা রয়েছে। আওয়ামী লীগ মাওলানা ভাসানীর অবদানকে অস্বীকার করেছে। তাই এখন সময় এসেছে সবার ভূমিকা স্মরণ করার।’
উপদেষ্টা নাহিদ আরো বলেন, আমাদের ইতিহাসে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী, আবুল হাসেম, যগেন মণ্ডল, মাওলানা ভাসানী এমন অনেক মানুষের লড়াই আছে। আমরা তো মনে করি এখানে একজন জাতির পিতা না, বরং অনেক ফাউন্ডিং ফাদার’স (জাতির পিতা) রয়েছে। যাদের অবদানের ফলে আমরা এই স্বাধীন ভূখণ্ড, স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি। সুতরাং, জাতির পিতা হিসেবে আমরা একটা দলের বা একজন ব্যক্তিকে সীমাবদ্ধ করতে চাই না।
তাহলে আমাদের কোনো জাতির পিতা থাকবে না-এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের এই ভূখণ্ডের লড়াইয়ের ইতিহাসে বহু মানুষের অবদান রয়েছে। আমাদের ইতিহাস কিন্তু কেবল ৫২তেই শুরু হয়নি, আমাদের ব্রিটিশবিরোধী লড়াই আছে, ৪৭ ও ৭১-এর লড়াই আছে, ৯০ ও ২৪ আছে। তাদের লড়াইয়ের ফলে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।
বঙ্গবন্ধুকে আওয়ামী লীগ বিতর্কিত করেছে। তাকে আপনারা ‘জাতির পিতা’ মনে করেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দল হিসেবে ফ্যাসিস্টভাবে ক্ষমতায় ছিল। মানুষের ভোটাধিকারহরণ ও গুম-খুন করে এবং গণহত্যা করে তারা ক্ষমতায় ছিল। কাজেই কারা তাকে জাতির পিতা বলল, তারা কোন দিবসকে জাতীয় দিবস ঘোষণা করল, নতুন বাংলাদেশে সেটার ধারাবাহিকতা থাকবে না। আমরা বাংলাদেশকে নতুনভাবে গঠন করতে চাচ্ছি। ফলে ইতিহাসের প্রতি আমাদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনতে হবে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে নাহিদ বলেন, আপনারা যদি আওয়ামী লীগের করা সবকিছু মনে করেন জাতীয় জাতীয়..। ভোটবিহীন সরকারেরই কোনো বৈধতা নেই। সেই সময়ে অনেক কিছু করা হয়েছে। সবগুলোকে পুনর্গঠন ও পুনর্মূল্যায়ন করা হবে।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপরই দাবি ওঠে বিগত সরকারের আমলে পালিত বিভিন্ন জাতীয় দিবস বাতিলের। এই প্রেক্ষিতে জাতীয় শোক দিবস, জাতীয় শিশু কিশোর দিবস ও ঐতিহাসিক ৭ মার্চসহ মোট আটটি দিবস বাতিল করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত সেপ্টেম্বর মাসে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মার্কিন ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ প্রধান উপদেষ্টার