এস এল টি তুহিন, বরিশাল প্রতিনিধি : জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলভাগে ইলিশের বিচরণস্থলে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইলিশ উৎপাদনের ক্রমবর্ধনশীল ধারায় এখনো বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব না পড়লেও ভবিষ্যতে পরিবেশ ও প্রাকৃতিক নানা সমস্যা বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
ইলিশের বিচরণ কম থাকায় আহরণও কিছুটা কম। ফলে বাজারে সরবরাহ ঘাটতির সঙ্গে বড়েছে দামও। বরিশালের খুচরা বাজারে সাড়ে ৮শ গ্রাম থেকে ১ কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১২শ থেকে ১৪শ টাকা কেজি। প্রজনন ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটাতে না পারলে আগামীতে উৎপাদনেও বিরূপ প্রভাব সৃষ্টির হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আশরাফুল আলম জানান, শিল্প ও মনুষ্য বর্জ্য অপসারণের ফলে নদ-নদীতে ইলিশের প্রধান খাবার ফাইটোপ্লাঙ্কটন ও জু-প্লাঙ্কটনের ঘাটতি প্রকট আকার ধারন করছে। যেখানে প্রতি লিটার পানিতে ফাইটোপ্লাঙ্কটন ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার থাকার কথা, সেখানে তা দেড় হাজারের নিচে এবং জুপ্লাঙ্কটন ১৫শর স্থলে কোন কোন নদীতে ২-৩শতে নেমে এসেছে। ফলে খাবারের অভাবেও ইলিশ সাগরের উপকূল অতিক্রম করে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে আসছে না।
পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে অতিরিক্ত তাপ প্রবাহের ফলেও ইলিশ সাগর থেকে নদীমুখী হচ্ছে না। ইলিশ বিচরণের জন্য যেখানে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানির তাপমাত্রা ২৮-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকা প্রয়োজন সেখানে তা ৩৪-৩৫ ডিগ্রি অতিক্রম করছে।
তবে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে মাঝারি সাইজের কিছু ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে। এসব ইলিশেরও পেটে ডিম রয়েছে। তাই প্রজনন নিশ্চিত করতে আগামী ১১ অক্টোবর দিবাগত মধ্যরাত থেকে ২ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত উপকূলের ৭ হাজার বর্গকিলোমিটারের মূল প্রজনন স্থলসহ সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন ও বিপণন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
গত বছর দক্ষিণ উপকূলসহ সংলগ্ন অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে প্রায় ৮৪ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়ে। এরমধ্যে ৫২ ভাগ মা ইলিশ ২২ দিনের মূল প্রজননকালীন সময়ে এবং পরবর্তিতে ৩২ শতাংশ ডিম ছাড়ারত ছিল। যা ছিল আগের বছরের প্রজননকালের চেয়ে প্রায় ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি । প্রজননকালে প্রায় ৮ লাখ ৫ হাজার কেজি ডিম ছেড়েছে মা ইলিশ।