সাইফুল ইসলাম তানভীর, নিজস্ব প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী, পুলিশ ও স্থানীয় গ্রামবাসী সঙ্গে সংঘর্ষে ৪ জন নিহতের ঘটনায় আদালতে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। এতে মানিকগঞ্জ-০২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কন্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমকে প্রধান আসামী করে আওয়ামী লীগের ৫২ জন ও পুলিশের এক সার্কেল এএসপি. পুলিশ ইন্সপেক্টর, এসআই, এএসআই, সব মিলে ৩৮ জনসহ মোট ৯০ জনের নামে আদালতে মামলাটি করা হয়েছে।
বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) সাড়ে ১১ বছর পর গোবিন্দল গ্রামের মৃত ইউসুব আলীর ছেলে মোঃ সহিদুল ইসলাম (৫০) বাদী হয়ে মানিকগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাহুল দের কোর্টে এ মামলাটি করেন।
শুনানী শেষে আদালত সিংগাইর থানার ওসিকে তদন্তের নির্দেশ দেন বলে বাদি পক্ষের আইনজীবি নাম প্রকাশ করার না শর্তে নিশ্চিত করেন।
সাড়ে ১১ বছর আগে ২০১৩ সালের ২৪ ফেব্রয়ারি সিংগাইর পৌর এলাকার গোবিন্দল নতুন বাজার বাস স্ট্যান্ডের দক্ষিণ পাশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী মিলে গ্রামবাসীর ওপর গুলি করে হত্যার ঘটনায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়।
কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম ছাড়াও মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন-সিংগাইর পৌরসভার সাবেক মেয়র মীর মোঃ শাহজাহান, উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান খান হান্নান, জেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি হাজী আঃ মাজেদ খান, উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ সায়েদুল ইসলাম, উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শহিদুর রহমান শহিদ, পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র আবু নইম মোঃ বাশার, পৌরসভার সাবেক কমিশনার আব্দুস সালাম খান, মোঃ সমেজ উদ্দিন, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রমিজ উদ্দিন, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার রবিউল আলম উজ্জ্বল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আব্দুল বারেক খান। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মধ্যে আসামি করা হয়েছে- মোঃ শওকত হোসেন বাদল, মোঃ রমজান আলী, মোঃ আবুল হোসেন মোল্লা, গাজী কামরুজ্জামান, দেওয়ান রিপন ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম রাজুসহ দায়িত্বশীল পদে থাকা অনেকেই।
অন্যদিকে আইনৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে আসামিরা হচ্ছেন- তৎকালীন দায়িত্বে থাকা মানিকগঞ্জ সদরের সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ কামরুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ ডিবি পুলিশের ওসি মোঃ মহিবুল আলম, মদন মোহন বণিক, মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম সহ ৩৮ জন।
মামলার বিবরণে বাদী উল্লেখ করেন, বিগত ২০১৩ সালের ২৪ ফেব্রয়ারী সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে তৎকালীন গণজাগরণ মঞ্চ থেকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে নিয়ে কটুক্তি ও ইসলামবিদ্বেষী কর্মকান্ডের প্রতিবাদে একদল মুসুল্লি একটি মিছিল নিয়ে সিংগাইর উপজেলা সদরের দিকে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী অঙ্গসংগঠনের বেশ কিছু নেতাকর্মী তাতে বাঁধা প্রদান করে। এতে ঘটনাস্থলে উভয় পক্ষের মধ্যে এক পর্যায়ে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হলে মিছিলকারীগণ এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
এরপরই সরকার দলীয় সমর্থক কিছু সংখ্যক ব্যক্তি ও পুলিশের পোশাক পরিহিত অবস্থায় কিছু সংখ্যক লোক বিদেশী রিভলবার, চাইনিস পিস্তল, দেশীয় রামদা, ছামুরাই, চাইনিজ কুড়াল, ছেন, কিরিছসহ বিভিন্ন প্রকার প্রাণনাশক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গ্রামের লোকজনের উপর হামলা চালায়। এতে আমার ভাই মোঃ নাসির এবং একই এলাকার আলমগীর, নাজিমুদ্দিন মোল্লা ও শাহ আলম মারা যায়। এছাড়া মামুন, হেলেনা, লিংকন, আনোয়ার, রুবেল, ফারুক, আলমাছসহ ১০-১২ জন মুমূর্ষু অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকে।
পরবর্তীতে হামলায় নিহতের ঘটনায় এজাহার দায়ের করতে থানায় গেলে মামলা গ্রহণ না করে পুলিশ জানায় এই বিষয়ে মামলা হয়েছে। যার নং- ৪৬(২)১৩, এবং দায়রা মামলা নং- ৪৫৫/২০২২। এতে বেশি বাড়াবাড়ি করলে এই মামলাই আসামি করে চালান দিয়ে দিবো।
মামলার বাদী আরও উল্লেখ করেন, রক্ষিত সুরতহাল ও পোস্ট মর্টেম রিপোর্টের কপি অত্র মামলায় তলবে এনে ব্যবহার করা আবশ্যক। এছাড়া মামলাটি জুডিসিয়াল তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি। আসামিদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তির দাবিও করেন মামলার বাদি সহিদুল ইসলাম। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আদালতে দায়ের করা মামলা কপি থানায় আসেনি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ ।