সাইফুল ইসলাম তানভীর, (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের সিংগাইর -ঢাকার সাভার উপজেলা সংযোগস্থলে ধলেশ্বরী নদীর ওপর নির্মিত ভাষা শহীদ রফিক সেতুর টোল আদায় বন্ধে ফুসে ওঠেছে সর্বস্তরের জনগণ। টোল স্থায়ী বন্ধের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন ও তৌহিদী জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ -সমাবেশ ও অগ্নিসংযোগসহ ভাংচুর করেছেন আন্দোলনকারীরা।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে সিংগাইর – হরিরামপুর ও সাভার উপজেলার তেতুঁলঝোড়া এলাকার লোকজন পৃথক মিছিল নিয়ে টোল প্লাজা জড়ো হয়। এসময় আন্দোলনকারীরা হেমায়েতপুর – সিংগাইর – মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে টোল আদায় বন্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এতে সড়কটিতে প্রায় দেড় ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। এক্ষেত্রে অ্যাম্বুলেন্স ও বিমানবন্দরের যাত্রীদের জন্য শিথিল করা হয়।
এদিকে টোল বন্ধের আন্দোলনের খবর পেয়ে সকালেই গা-ঢাকা দেয় ইজারাদার লুৎফর রহমানের লোকজন। বিক্ষোভ চলাকালে আন্দোলনকারীরা টোল প্লাজার চারটি অফিস ভাঙচুরসহ অগ্নিসংযোগ করে।
দুপুর পৌনে ১২ টার দিকে ভাসা শহীদ রফিক সেতুর টোল বন্ধ আন্দোলনের সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার আবু সায়েমের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় অন্যান্য মধ্যে বক্তব্য রাখেন -কেন্দ্রীয় খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাদ্দিস শেক সালা উদ্দিন, মানিকগঞ্জ জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ওমর ফারুক, সিংগাইর উপজেলা ইসলামী আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন, মাওলানা মাসুদুর রহমান আইয়ুবী, ইঞ্জিনিয়ার রমিজ উদ্দিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মো. রুমি ও ছাত্রনেতা মাহফুজ আহমেদ। এ সময় কেন্দ্রীয় হেফাজত ইসলামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, জায়গীর দরবার শরীফের পীর দীন মোহাম্মদ ও যুবদল নেতা মো : রমজান আলীসহ অসংখ্য উলামায়ে কেরামগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা স্থায়ীভাবে টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানান। সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার আবু সায়েম বলেন, এ নদীর সংযোগস্থল সাভার নামাবাজার ও কেরানীগঞ্জের ইটাভাড়া এলাকায় আরো দুইটি সেতু রয়েছে। ওই দুই সেতুতে টোল আদায় হচ্ছে না। অথচ শহীদ রফিকের নামে এসে ২৪ বছর ধরে টোল আদায় করা হচ্ছে। হিসেব অনুযায়ী সেতুটির নির্মাণ ব্যয়ের ১২ গুন টাকা আদায় হয়েছে। টোল আদায়ের নামে হয়রানি বন্ধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন আন্দোলনকারীরা। পরে দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে ও আন্দোলনকারীদের সহনশীল মনোভাবে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
উল্লেখ্য, ৩০৭ মিটার দৈর্ঘ্যের ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সতুটি ২০০০ সালের ২৬শে জানুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষা শহীদ রফিক সেতুটি উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে টোল আদায় অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন সময় স্থানীয় সংসদ সদস্যরা সেতুটি টোল বন্ধে সংসদে বক্তব্য দিলেও কাজের কাজ হয়নি কিছুই। তবে ২০১৩ সালের মাঝা মাঝি সময়ে আওয়ামী লীগের সাবেক যুবক ও ক্রীড়া বিষয় সম্পাদক দেওয়ান সফিউল আরেফিন টুটুলের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে তিন চাকা যানবাহনের টোল বন্ধ হলেও বছর না যেতেই আবার শুরু হয় টোল আদায়।