শহীদুজ্জামান শিমুল, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: বেলজিয়াম হাঁস পালন খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন সাতক্ষীরার ইসলাম আলী। মাংস উৎপাদনের পাশাপাশি হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে বিক্রি করে আর্থিক ভাবে লাভবান হয়েছেন তিনি। মাত্র তিন লক্ষ টাকা পুঁজি নিয়ে ৩০০টি হাঁস পালন দিয়ে শুরু করে চার বছরের ব্যবধানে তার এখন মুলধন হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ লক্ষ টাকা। বাড়িয়েছেন খামারের পরিধিও। এখন ১ হাজার ৪শ টি বেলজিয়াম হাঁস রয়েছে তার খামারে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কাসেমপুর বাইপাস সড়কের পাশে অবস্থিত জাহাঙ্গীর হাঁস খামারের স্বত্তাধিকারী ইসলাম আলী জানান, ২০০০ সালে কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে ৩০০ টি বেলজিয়াতের হাঁসের বাচ্চা এনে খামার শুরু করেন। মাংস উৎপাদনের জন্য ৪৫ দিন পর পর হাঁস বিক্রি করেন। এতে প্রতি চালানে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা লাভ হয় তার। লাভের টাকা দিয়ে প্রতি বছর হাঁসের সংখ্যা বাড়াতে থাকে বলে জানান তিনি।
তবে চলতি বছরের মে মাস থেকে তিনি মাংস উৎপাদনের পাশাপাশি ডিম ফুটানো মেসিন দিয়ে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন শুরু করেছেন। খামারী ইসলাম আলী বাচ্চা ফুটানো একটু ব্যয়বহুল হলেও লাভ অনেক বেশি হবে বলে আশা করছেন। প্রতি সপ্তাহে সাড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার বাচ্চা উৎপাদন হচ্ছে তার খামারে।
খামারী ইসলাম আলী আরও বলেন, বাচ্চা উৎপাদনে বছরে ৪০ লক্ষ টাকা খরচ হলেও খামারে তেমন কোনো মড়ক বা বিপর্যয় দেখা না দিলে বছরে ৪০ থেকে ৪৫ লক্ষ টাকা লাভ হবে বলে জানান।
এদিকে সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা না পেয়ে অভিযোগ তুলেন প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে। তার খামারে হাঁসের ডাকপ্লে রোগের জন্য বিনা মুল্যে সরকারী ভ্যাকসিন পায়না তিনি।
তিনি বলেন, বিনা মূল্যে ভ্যাকসিন দেয়ার কথা থাকলেও প্রতিটি ডাকপ্লে ভ্যাকসিন প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে কিনতে হয় ৫০ টাকা দিয়ে।
এ দিকে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার বোলিয়া বাকসা গ্রামের হাঁস খামারী মন্টু হোসেন বলেন, স্থানীয় উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার পরামর্শে গত ৭/৮ যাবত ক্যাম্বেল হাঁস পালন খামার করেছেন। তার খামারে বর্তমান ১ হাজার ১০০ টি হাঁস রয়েছে। যার বর্তমান মুল্য ৬ লাখ টাকার উপরে। তিনি বলেন, ৬ মাস পূর্বে খুলনা সরকারী হাঁস প্রজনন খামার থেকে ১ হাজার ২০০ টি ক্যাম্বেল হাঁসের বাচ্চা নিয়ে তার খামার শুরু করেন। এর পাঁচ মাস পরে ১০০ টি হাঁস বিক্রি করেন ৬৫ হাজার টাকা। এখন তার খামারে ১ হাজার ১০০টি হাঁস রয়েছে। এর মধ্যে কিছু হাঁস ডিম দেয়া শুরু করেছে।
এখন তার খামারে যে হাঁস রয়েছে তার গড় মূল্য ৬ থেকে সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা। প্রতিটি হাঁস তার খামার থেকে ৬০০ টাকা মূল্যে ক্রয়ের জন্য স্থানীয় পাইকাররা জানিয়েছেন। ফলে ৭ মাসে হাঁস পালন করে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা লাভ হবে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডাক্তার এস.এম মাহবুবুর রহমান জানান, বেলজিয়াম হাঁস মাংস উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগি। এ জাতের হাঁস দ্রুত বর্ধনশীল। একেকটির ওজন হয় ৪/৫ কেজি পর্যন্ত। তাছাড়া এর মাংসও খুবই সুস্বাদু। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই হাঁসের চাহিদাও রয়েছে বেশ। তিনি বলেন, জেলার বিভিন্ন এলাকাতে ছোট বড় মিলে অন্তত শতাধিক বিভিন্ন প্রকার হাঁসের খামার রয়েছে। এরমধ্যে বেলজিয়াম হাঁস খামার রয়েছে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫টি। এসব খামারী মাংসও ডিম উৎপাদন করে ভালোই লাভবান হচ্ছে।
জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এসব হাঁস পালন খামারীদের ডাকপ্লে ভ্যাকসিনসহ নানা ধরনের সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। তিনি বলেন, স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে যে কেউ এধরনের হাঁস পালন খামার করে আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হতে পারে।