December 23, 2024 - 10:52 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeনির্বাচিত কলামসেদিন কুষ্টিয়ায় আদালত চত্বরে মাহমুদুর রহমানের নিরাপত্তার দায় কার ছিল?

সেদিন কুষ্টিয়ায় আদালত চত্বরে মাহমুদুর রহমানের নিরাপত্তার দায় কার ছিল?

spot_img

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক ।।

সেদিন ছিল সম্ভবতঃ ২২ জুলাই’ ২০১৮, রবিবার। কুষ্টিয়া আদালত চত্বরে পুলিশের সামনেই আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। সেদিন আমি প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অবলোকন করেছি। ওই পত্রিকার সাবেক প্রতিনিধি ও মাহমুদুর রহমানের স্নেহাশীষ হওয়ায় তাঁর কুষ্টিয়া আগমন, থাকা-খাওয়া, জামিন, নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিয়ে আমি বেশ ওয়াকিবহাল ছিলাম।

মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া ছাত্রলীগের এক নেতা মানহানির মামলা করেছিল। সেই মামলায় দুপুর ১২টায় কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এম এম মোর্শেদ ১০ হাজার টাকা জামানতে মাহমুদুর রহমানকে স্থায়ীভাবে জামিন দেন। জামিন মঞ্জুরের পর থেকে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা আদালত চত্বরে মাহমুদুর রহমানকে অবরুদ্ধ করেন। এ সময় তারা মাহমুদুর রহমানের বিচার চেয়ে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মাহমুদুর রহমান সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এম এম মোর্শেদের এজলাস কক্ষে অবস্থান করেন। তার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সেদিন সেই বিচারকের কাছে বারবার নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছিল। তিনি আইন জানা ভাল বিচারক ছিলেন। জাস্টিস অব দ্যা পিস সম্পর্কেও ভাল জানতেন। মাহমুদুর রহমানের নিরাপত্তা দিতে আইনী ক্ষমতাও তার হাতে ছিল। কিন্তু তিনি সেদিন নিরাপত্তা দেননি। এর মধ্যে কয়েক দফায় এজলাস কক্ষ থেকে মাহমুদুর রহমান বের হওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তাকে বহন করা প্রাইভেটকার দুই দফায় তাকে নেয়ার জন্য আসলেও ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা গাড়ি ধাওয়া করে। একপর্যায়ে দুপুরে মাহমুদুর রহমান ফেসবুক লাইভে এসে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি সরকারের সমালোচনা করে প্রায় ৪ মিনিট বক্তব্য দেন। সেই সময় কুষ্টিয়ার এসপি হিসেবে ছিলেন মেহেদী হাসান। যিনি ফ্যাসিস্ট সরকারের গুন্ডা হিসেবে কাজ করায় বর্তমান জনরোষে প্রাণ বাচাতে পলাতক রয়েছেন। মাহমুদুর রহমানের সাথে থাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আব্দুল্লাহ ভাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলে সার্বিক অবস্থা জানান। তিনি নিরাপত্তা বিষয়ে আশ্বাসও দেন। সেদিন অধিকাংশ মিডিয়াতে মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়া আদালতে অবরুদ্ধ থাকার সংবাদটি গুরুত্বের সাথে প্রচার ও প্রকাশ করেন। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। সেদিন কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি নাসির উদ্দিন হামলাকারীদের সাথে মিশে গিয়ে তামাশা দেখেছিলেন।

অবশেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এম এম মোর্শেদের এজলাস কক্ষ থেকে প্রাইভেটকার নিয়ে যশোরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার সময় আদালত চত্বরে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের হামলার মুখে পড়েন মাহমুদুর রহমান। হামলাকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে মাহমুদুর রহমান গাড়ি থেকে নেমে কুষ্টিয়া জজ কোর্টের এক চিহ্নিত মহিলা আওয়ামীলীগের কথিত নেত্রী সামস তানিম মুক্তির চেম্বারে ঢুকে পড়েন। সেখানেও তার নেতৃত্বে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালান। হামলায় মাহমুদুর রহমান গুরুতর আহত হন। মাহমুদুর রহমানের ব্যবহৃত গাড়িটি ভাঙচুর করা হয়। একপর্যায়ে রক্তাক্ত অবস্থায় মাহমুদুর রহমানকে উদ্ধার করে একটি অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেয়া হয়।

প্রসঙ্গত, সেদিন শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনা ও তার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক সম্পর্কে মানহানিকর বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়ায় মামলা হয়। ওই মামলায় জামিন পেতে কুষ্টিয়া আদালতে তিনি এসেছিলেন।

সেদিন আওয়ামীলীগের কথিত সাংবাদিকেরা বলেছিল রক্তের বদলা রক্ত। উল্লেখ্য, ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী একটি প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিতে কুষ্টিয়া এসেছিলেন। সেদিন কুষ্টিয়া পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে বিএনপির লোকদের ছোড়া ইটের আঘাতে কপাল ফেটে রক্তাক্ত হয়েছিল ইকবাল সোবহান চৌধুরী।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাংবাদিক আইনজীবী মইনুল হোসেনসহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি আদালত প্রাঙ্গণে জনহেনস্তার শিকার হয়েছেন। এটা ছিল অভিযুক্ত ব্যক্তির প্রতি ওই সরকারের বিদ্বেষমূলক আচরণের বহিঃপ্রকাশ। দেশের ভেতরে ও বাইরে এ নিয়ে প্রতিবাদও হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেই সরকারের পতন ঘটানোর পরও সেই ধারা বজায় থাকা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। অন্তর্বর্তী সরকারকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।

দেখা যাচ্ছে, সরকার পরিবর্তন হলেও বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আদালতের আচরণে তেমন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। বিগত সরকারের আমলে ন্যায়বিচার ছিল না। পুলিশ ও আদালতকে রাজনৈতিক স্বার্থে যথেচ্ছ ব্যবহার করা হতো। এখনো সেই ধারা অব্যাহত রাখার সুযোগ নেই।

কেননা বিচারপ্রার্থী মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল আদালত। আদালতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা খুবই জরুরি। একইসঙ্গে এটা মাথায় রাখতে হবে যে, যে কোনো নাগরিক তা সে যে মামলার আসামিই হোক না কেন, পুলিশের হেফাজতেই হোক কিংবা প্রহরায়, আসামির নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটাও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। আদালত প্রাঙ্গণ, বিচারক, আইনজীবীসহ বিচার প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট সবার নিরাপত্তার পাশাপাশি আসামির সুরক্ষার বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে সংশ্লিষ্ট র্কর্তৃপক্ষকে। বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তাহীনতা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, কলামিস্ট ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ

উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে আজ রাষ্ট্রীয় শোক

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক: অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের মৃত্যুতে আজ দেশজুড়ে রাষ্ট্রীয় শোক পালন...

নিজের সম্পদের হিসাব দিলেন দুদক চেয়ারম্যান

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : গণমাধ্যমের সামনে নিজের সম্পদ বিবরণী ও আয় ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। রোববার (২২...

ডিসেম্বরের ২১ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২ বিলিয়ন ডলার

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক : চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম ২১ দিনে দেশে বৈধ পথে ২০০ কোটিমার্কিন (২ বিলিয়ন) ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ...

এনসিসি ব্যাংকের ভুলতা উপশাখার উদ্বোধন

কর্পোরেট ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় এনসিসি ব্যাংক এর ভুলতা উপশাখা রবিবার (২২ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিক ভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে। এনসিসি ব্যাংকের সম্মানিত চেয়ারম্যান মোঃ নূরুন নেওয়াজ...

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের নওয়াপাড়া শাখার উদ্বোধন

কর্পোরেট ডেস্ক: ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি‘র ২০৬ তম শাখা হিসেবে নওয়াপাড়া শাখা, যশোর রবিবার (২২ ডিসেম্বর,২০২৪) উদ্বোধন করা হয়। ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল...

এআইইউবি জব ফেয়ারে আইএফআইসি ব্যাংকের অংশ গ্রহণ

কর্পোরেট ডেস্ক: শিক্ষাজীবন থেকে পেশাগত জীবনে উত্তরণের সেতুবন্ধনের যাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তরুণদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ক্যারিয়ারের সঠিক পথ নির্ধারণে সহায়তার লক্ষ্যে আইএফআইসি...

৩ কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন

পুঁজিবাজার ডেস্ক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩ কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন করা হয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো তমিজুদ্দিন টেক্সটাইল মিলস পিএলসি, রিং শাইন টেক্সটাইল লিমিটেড ও শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ...

রাইট শেয়ারের মূল্য কমালো কনফিডেন্স সিমেন্ট

পুঁজিবাজার ডেস্ক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের কোম্পানি কনফিডেন্স সিমেন্ট পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে রাইট শেয়রের ইস্যু মূল্য ১০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত...