কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : রাজধানীর বাড্ডা থানার হত্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
শনিবার (২৪ আগস্ট) সিলেটের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ আলমগীর হোসেনের আদালত এ নির্দেশ দেন। এর আগে বিকেল ৪টার ১০ মিনিটে তাকে আদালতে তোলা হয়।
সাবেক বিচারপতি মানিককে আদালতে তোলার সময় অনেকে তার দিকে ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করেন বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে কঠোর নিরাপত্তা দিয়ে তাকে আদালতে নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা।
এর আগে শুক্রবার (২৩ আগস্ট) রাতে ভারতে পালানোর সময় সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে সাবেক বিচারপতি মানিককে আটক করে বিজিবি। আটক করার পর তাকে বিজিবি ক্যাম্পে হেফাজতে রেখে কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। পরবর্তীতে তাকে রাত ১২টা নাগাদ ক্যাম্প থেকে থানার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।
সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী দনা এলাকা দিয়ে পালানোর সময় সঙ্গে করে ৬০-৭০ লাখ টাকা নিয়ে যাচ্ছিলেন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। আটকের সময় একটি ভিডিও রেকর্ড করা হয় মানিকের। ভিডিওতে দেখা যায় বিজিবি সদস্যরা তার পরিচয় জানতে চান। নিজের পরিচয় স্বীকার করে মানিক বলেন, আমি বিচারপতি মানিক।
আটকের পর স্বীকারোক্তিতে তিনি বলেন, আমি ১৫ হাজার টাকার কথা বলে সীমান্ত পার হতে চাচ্ছিলাম। পরে আমাকে দুই ছেলে ভারত সীমান্তে নিয়ে আমার সঙ্গে থাকা সব টাকা এবং মোবাইল নিয়ে যায়।
ভিডিওতে দেখা যায়, কেউ সাবেক বিচারপতি মানিকের গলায় গামছা পেঁচিয়ে হাত দিয়ে ধরে রেখেছেন। আরেকজন তার নাম জিজ্ঞেস করছেন। এ সময় বিচারপতি মানিক তার পুরো নাম বলেন এবং তার বাড়ি মুন্সীগঞ্জ বলে জানান। সঙ্গে কী আছে জানতে চলে মানিক বলেন, আমার কাছে অনেক টাকা ছিল। আমাকে মেরে ৬০-৭০ লাখ টাকা নিয়ে গেছে দুজন। এখন আমার সঙ্গে বৃটিশ পাসপোর্ট, বাংলা পাসপোর্ট আর কিছু টাকা আছে।
১৯৭৮ সালে হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন জীবন শুরু করা শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হন। ২০০১ সালে তাকে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক করে নেয় সরকার। কিন্তু পরে বিএনপি সরকার এসে তাকে বাদ দেয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর হাইকোর্টের একটি রায়ে বিচারকের আসনে ফেরেন শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। ২০১৩ সালে তাকে পদোন্নতি দিয়ে আপিল বিভাগের বিচারক করা হয়।
২০১৫ সালে অবসরে যাওয়ার আগে তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে বার বার শিরোনাম হয়েছেন বিচারপতি মানিক। সে সময় তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে অভিযোগও করেছিলেন। অবসরের পর তাকে নিয়মিত টেলিভিশনের আলোচনা অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনে দেখা যেত। বরাবরই তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে ‘আপত্তিকর মন্তব্য করার’ অভিযোগে গত কয়েক দিনে বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে যে দুটি মামলা হয়েছে, তার মধ্যে একটি করেছেন মো. জিয়াউল হক নামের এক আইনজীবী।