শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি: বাবা-মার বড় ছেলে ভরসাস্থল ছিলেন মিজানুর। দুই শিশু সন্তানসহ পরিবারের সদস্যসংখ্যা সাতজন। মিজানুরের আয় দিয়েই চলতো তাদের সংসার। কিন্তু সম্প্রতি সরকারি একটি খাসপুকুরের দখল নিয়ে দ্বন্দ্বে মিজানকে পিটিয়ে হত্যা করেন স্থানীয় কিছু ব্যক্তি। বাবা-মার মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। বড় ছেলেকে হারিয়ে পাগল প্রায় বয়োবৃদ্ধ মা মাহেলা বেগম (৬০)।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার ছাওয়াল গ্রাম পুলিশের চাকরি করে তার কামাই করা টাকায় চলে আমাদের সংসার। আমার ছাওয়ালকে মেরে ফেলে দিল। এখন আমাদের সংসার চলবে কি করে?
মঙ্গলবার (১৩ আগষ্ট) সকাল ১১টায় জানাযায় আসা গ্রামবাসী খুনিদের ফাঁসির দাবি জানান। গ্রাম পুলিশ সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিজান (৩০) বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়ন পরিষদের আটাইল গ্রামে মোশার পুকুরপাড়ের মোজাফফর আলীর ছেলে।
জানা যায়, ১ দশমিক ৯৫ একর আয়তনের আটাইল গ্রামের সরকারি সম্পত্তি মোশার পুকুরটি। মিজান ছিলেন মোশার পুকুরপাড়ে ভূমিহীন সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক। এই পুকুরপাড়ে ৩২টি পরিবারের বসবাস, যাদের অধিকাংশের সংসার চলে দিনমজুরির আয়ে। এই পুকুর মিজানুরের বাবা ভূমিহীন সমিতি থেকে তিন বছরের জন্য ইজারা নিয়েছেন। গত ৪ মাস আগে পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন তাঁরা। পুকুরটির মধ্যে পার্শ্ববর্তী ঢেপুয়া গ্রামের আবদুস সামাদের পরিবারের কিছু সম্পত্তি আছে। গত ৬ আগস্ট মঙ্গলবার সকালে মাসুদের নেতৃত্বে আবদুস সামাদ ও তাঁর ভাই আবু বক্করসহ ১৫ থেকে ২০ জন লাঠিসোঁটা নিয়ে পুকুরটির দখল নেওয়ার জন্য আসেন। তাঁরা জাল ফেলে মাছ ধরতে শুরু করেন। এ সময় মিজানসহ ভূমিহীন সমিতির অন্তত ১০ জন নারী-পুরুষ বাঁধা দিলে আবদুস সামাদ, আবু বক্করসহ অন্যরা তাঁদের মারধর শুরু করেন। এতে মিজানের মাথায় গুরুতর জখম হয়। আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করা হয় ঢাকার হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তিনি মারা যান। হাসপাতালের সকল কার্যক্রম শেষে লাশ ১২ আগষ্ট সোমবার রাতে গ্রামের বাড়িতে পৌছায়। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় ভবানীপুর স্কুল মাঠে জানাযা শেষে দাফন করে।
নিহতের স্ত্রী কুলসুম বেগম বলেন, তাঁর স্বামীর মৃত্যুতে সংসার অন্ধকারে পড়ে গেল। দুই শিশুসন্তানসহ পরিবারের সদস্যসংখ্যা সাতজন। স্বামী মিজান ছিলেন সংসারের একমাত্র উপার্জন করা। স্বামীর হত্যার বিচার দাবি করেন তিনি।
মানববন্ধনে আসা মোশার পুকুরপাড়ের ভূমিহীন পরিবার ও গ্রামবাসীরা জানান, প্রতিটি ভূমিহীন পরিবার দিনমজুরি করে সংসার চালায়। পুকুরপাড়ে তাঁরা যুগ যুগ ধরে বসবাস করছেন। আবদুস সামাদের পরিবার তাঁদের নানাভাবে হয়রানিও করত। সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও গ্রাম পুলিশের সদস্য মিজান হত্যার খুনিদের ফাঁসির দাবি করেন তাঁরা।
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, মিজানের মৃত্যুর ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। নিহতের পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।