September 20, 2024 - 2:41 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeকর্পোরেট ভয়েসভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সাক্ষাৎকার সব, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জনগণই আমার...

ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সাক্ষাৎকার সব, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জনগণই আমার শক্তি : শেখ হাসিনা

spot_img

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে সফরে রয়েছেন। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়া ছাড়াও তিনি একাধিক পার্শ্ববৈঠকে যোগ দিয়েছেন, বক্তব্য দিয়েছেন। শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির দপ্তরে গত বৃহস্পতিবার ভয়েস অব আমেরিকাকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে তাঁর সরকারের সাফল্যের কথা উল্লেখ করেন। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, দেশে দারিদ্র্যের সংখ্যা হ্রাস, অবশিষ্ট দরিদ্রদের জন্য তাঁর সরকারের সহায়তা প্রকল্প, নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধিসহ মানব উন্নয়নের প্রায় সব সূচকেই বাংলাদেশের অর্জন প্রশংসামূলক। তিনি বলেন, এই অর্জনের জন্য তাঁকে বহু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে সব চ্যালেঞ্জই মোকাবিলা করেছেন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে। 

বিরোধী দলগুলোকে রাজনীতির ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত স্থান করে দেওয়া হচ্ছে না—এই অভিযোগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি মনে করেন বিরোধী দলের উন্নয়নের রাজনীতির ব্যাপারে কোনো আগ্রহ নেই। তারা অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় এসেছিল। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে ব্যক্তিমালিকানাধীন চ্যানেলগুলোতে সরকারের অহরহ সমালোচনা চলছে, মিটিং-মিছিল, সভা-সমাবেশও হচ্ছে। অতএব এই অভিযোগ ঠিক নয় যে বিরোধী দল কোনো রাজনৈতিক স্থান পাচ্ছে না। সন্ত্রাস ও উগ্রবাদী সহিংসতা দমনে তাঁর সরকারের নেওয়া জিরো টলারেন্স নীতি বহাল থাকবে এবং এ ব্যাপারেও তিনি জনগণের সম্পৃক্ততায় আশাবাদী মনোভাব পোষণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ভয়েস অব আমেরিকার আনিস আহমেদ 

ভয়েস অব আমেরিকা : একনাগাড়ে প্রায় সাড়ে সাত বছর দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই পর্বে আপনার সাফল্যগুলো কিভাবে দেখেন? 

শেখ হাসিনা : আমাদের লক্ষ্য, বাংলাদেশকে আমরা দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব, আর্থসামাজিক উন্নতি করব। সেদিক থেকে ব্যাপক সাফল্য আমরা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। সব সময় আমাদের একটাই প্রচেষ্টা ছিল, কিভাবে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করব, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করব, শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করব, চিকিৎসাব্যবস্থা নিশ্চিত করব, গৃহহীন মানুষকে ঘর দেব, অর্থাৎ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা—এই যে মৌলিক চাহিদাগুলো, এগুলো পূরণ করা। আমি এইটুকু অন্তত দাবি করতে পারি, আমাদের এই সাড়ে সাত বছরের মধ্যে আমরা বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার কমিয়ে এখন ২২ দশমিক ৪ ভাগে নিয়ে এসেছি। প্রত্যেক মানুষের মাথাপিছু আয় এক হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলারে আমরা উন্নীত করতে পেরেছি। আমাদের বাজেট বৃদ্ধি করেছি। প্রায় তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট আমরা ঘোষণা দিয়েছি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটা সর্ববৃহৎ বাজেট। বিশাল কর্মযজ্ঞ আমরা শুরু করেছি। চিকিৎসাসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সক্ষম হচ্ছি। বিনা পয়সায় আমরা প্রায় ৩০ প্রকার ওষুধ দিচ্ছি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে। সমগ্র বাংলাদেশে প্রায় ১৬ হাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্র জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করছে। সেই সঙ্গে আমরা বিশেষায়িত হাসপাতাল করেছি। প্রায় প্রতিটি জেলায় যাতে বিশ্ববিদ্যালয় হয়, তার ব্যবস্থা করেছি। বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। আমরা ছেলেমেয়েদের বৃত্তি দিচ্ছি। এখন উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি। সাফল্যের ইতিহাস তুলে ধরতে গেলে তা এত ব্যাপক যে এত অল্প সময়ে শেষ করা যাবে না। তবে একটা বিষয় আপনারা লক্ষ করবেন যে বাংলাদেশের মানুষের ভেতরে একটা আস্থা-বিশ্বাস ফিরে এসেছে। এবং মানুষের যে আর্থিক চরম দৈন্য ছিল, সেটা এখন অনেকটা কমে যাচ্ছে। কারণ পাঁচ কোটি মানুষ এখন নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উঠে এসেছে। এখনো যারা হতদরিদ্র বা দারিদ্র্যসীমার নিচে বা যারা একটু কষ্টে আছে, তাদের কষ্ট দূর করার জন্য আমরা কতগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি। যেমন এরই মধ্যে ১০ টাকায় একজন মানুষ যেন ৩০ কেজি করে চাল কিনতে পারে, তার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ৫০ লাখ মানুষ এই সুযোগ পাবে। যে সময়টায় আমরা সরকার গঠন করি, তখন বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ছিল। এই মন্দা অবস্থায়ই কিন্তু আমাদের কাজ করতে হয়। সেখানে আমাদের প্রবৃদ্ধি প্রায় পাঁচ বছর ছয় ভাগের ওপরে ধরে রেখেছি। এবার আমরা সাত ভাগে চলে এসেছি। মূল্যস্ফীতি কম, প্রবৃদ্ধি বেশি, এর সুফলটা সাধারণ মানুষ পাচ্ছে, গ্রামের মানুষ পাচ্ছে।

ভয়েস অব আমেরিকা : এই যে বিপুল সাফল্য, বিশেষ করে মানব উন্নয়নের ক্ষেত্রে আপনার সরকারের তুলনাহীন সাফল্য, এর পেছনে কী রহস্য কাজ করেছে? এত দিন হয়নি, এখন কেন হচ্ছে? 

শেখ হাসিনা : কেন হচ্ছে? আমি একটি কথা আপনাদের মনে করাতে চাই, যে দল একটা দেশের জন্য, জাতির জন্য ত্যাগ স্বীকার করে, সংগ্রাম করে, আন্দোলন করে, বিপ্লব করে এবং যুদ্ধ করে বিজয় এনে দেয়, সেই দল যখন ক্ষমতায় থাকে, তখনই কিন্তু দেশের উন্নতি হয়। কাজেই আমরা অন্তরের টান থেকে কাজ করি। এখানে আর কোনো ম্যাজিক নেই। ম্যাজিক একটাই—আমরা জনগণের কল্যাণে দেশের স্বাধীনতা এনেছি, জনগণের কল্যাণ করাটাই আমাদের কর্তব্য মনে করি। 

ভয়েস অব আমেরিকা : কী ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় আপনাকে? 

শেখ হাসিনা : অনেক অনেক রকম চ্যালেঞ্জ। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা—সেটা একটা চ্যালেঞ্জ। অভ্যন্তরীণ—যারা উড়ে এসে ক্ষমতায় জুড়ে বসেছিল বা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে দল গঠন করে রেখে গেছে, তারা তো ক্ষমতার লোভটা ছাড়তে পারে না। তারা হত্যাযজ্ঞ, মানুষ পোড়ানো, অগ্নি-সন্ত্রাস, মানুষের ক্ষতি করা, নির্বাচন যাতে না হয় তার জন্য বাধা দেওয়া, নানা ধরনের কর্মকাণ্ড করে সমস্যা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসকে তারা উসকে দেয়। কাজেই এ ধরনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ আমাদের মোকাবিলা করতে হয়। তবে আমি সব সময় মনে করি জনগণই শক্তি, যে ধরনের চ্যালেঞ্জই আসুক না কেন, অন্তত তার মোকাবিলা করার মতো শক্তি, ক্ষমতা আমাদের আছে। যেহেতু আমি জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি। 

ভয়েস অব আমেরিকা : একটা বড় চ্যালেঞ্জ এখন শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী, যেটা আপনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উল্লেখ কমরছেন—সেটি হচ্ছে উগ্র জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ। এই সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার ক্ষেত্রে আপনার সরকারের কী ধরনের পরিকল্পনা আছে, বিশেষ করে এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতার একটা প্রশ্ন নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে একটু আলোকপাত করবেন? 

শেখ হাসিনা : আমরা যেটা করতে সক্ষম হয়েছি, সেটা হচ্ছে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। যেমন অভিভাবক, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, আমাদের ব্যবসায়ী মহল থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি, সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছি। প্রত্যেকে এখন জঙ্গিবাদবিরোধী ভূমিকা নিচ্ছে। এই যে জনগণের সম্পৃক্ততা, এটাই হচ্ছে মূল শক্তি। আর অন্যান্য দেশ; তাদের সঙ্গে আমাদের যে আলোচনা হচ্ছে, তা হলো টেকনিক্যাল সাপোর্ট নেওয়া, ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। কিন্তু যতই যা হোক না কেন, আমি মনে করি, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, গোয়েন্দা সংস্থা, তারা যেমন তৎপর, সঙ্গে সঙ্গে দেশবাসী এখন সচেতন। তারাই খবর দিচ্ছে, তারাই প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। তাদের সম্পৃক্ত করেই এটা মোকাবিলা করে যাচ্ছি। এবং আপনি জানেন, বাংলাদেশ কিন্তু একটা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এই যে পহেলা জুলাই যে ঘটনা ঘটল, মাত্র ১০ ঘণ্টার মধ্যে আমরা জিম্মি উদ্ধার করেছি এবং এই সন্ত্রাসীদের নির্মূল করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয়েছি। আমি মনে করি, যেকোনো চ্যালেঞ্জ এলে আমরা তা মোকাবিলা করতে পারি। 

ভয়েস অব আমেরিকা : কেউ কেউ বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন যে মাত্রায় হয়েছে, রাজনৈতিক স্পেসটা, জায়গাটা অনেকেই পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ ওঠে, বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বিশেষ করে।

শেখ হাসিনা : কথা হচ্ছে, একটা রাজনৈতিক দল যদি সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে, তো সেই রাজনৈতিক দলকে তার খেসারত দিতে হবে। আমরা নির্বাচন করেছি, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে আসেনি। তারা নির্বাচন ঠেকাতে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তাদের কি এখন মানুষ পোড়ানোর সুযোগ করে দিতে হবে? আমার সেটাই প্রশ্ন। বাংলাদেশে আপনারা জানেন যে একটা মাত্র টেলিভিশন ছিল—বিটিভি। আমাদের সময়ে, এখন প্রাইভেট সেক্টরে যথেষ্ট টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে। এবং যার যত ইচ্ছা কথা বলতে পারে। তারা ন্যাশনাল ইলেকশনে অংশগ্রহণ করেনি, কিন্তু তারা লোকাল গভর্নমেন্ট ইলেকশনে অংশগ্রহণ করেছে। তাহলে বলবেন কি করে যে তাদের স্পেস দেওয়া হয় না? কথা তো কারো কাছ থেকে আমরা কেড়ে নিচ্ছি না। যার যার ইচ্ছামতো কথা বলেই যাচ্ছে। তারা মিটিং করছে, র্যালি করছে—সবই তারা করছে। রাজনীতির যথেষ্ট সুযোগ আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। 
ভয়েস অব আমেরিকা : আপনার সরকারের একটি বিরাট সাফল্য হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা। সে জন্য অনেকেই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। 

শেখ হাসিনা : অবশ্যই এটা আমাদের দায়িত্ব ছিল, জাতীয় দায়িত্ব, জাতির কাছে আমরা ওয়াদাবদ্ধ ছিলাম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই বিচার শুরু করেছিলেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে বিচার বন্ধ করে সব অপরাধীকে মুক্ত করে দেন। ১১ হাজার সাজাপ্রাপ্ত ছিল; ২২ হাজার মামলা হয়েছিল। জিয়াউর রহমান এসে সব বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আমরা জাতির কাছে ওয়াদাবদ্ধ ছিলাম, তাই আমরা সরকারে এসে সেই বিচার করেছি। কত দুর্ভাগ্য, আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন। যে বিরোধী দলের কথা আপনি একটু আগে বললেন, তারা স্পেস চায়, তারা তো এই সব যুদ্ধাপরাধীকে মন্ত্রী করেছিল। আমার লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা এদের হাতে তুলে দিয়েছিল। কাজেই যারা যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে, মন্ত্রী বানিয়েছে, তাদেরও তো বিচার হওয়া উচিত। 
 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ