রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরের পরিকল্পিত চামড়া শিল্পনগরীতে ট্যানারি স্থানান্তর এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। ট্যানারির মালিকেরা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বিসিক এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। অন্যদিকে বিসিক বলছে তারা প্রস্তুত। এসব নিয়ে কথা বলেছেন চামড়া শিল্পনগরীর প্রকল্প পরিচালক আবদুল কাইউম ও বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি।
প্রশ্ন: সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে ট্যানারি চালু করার ব্যাপারে আপনারা (বিসিক) কতটুকু প্রস্তুত?
আবদুল কাইউম: আমরা হান্ড্রেড পারসেন্ট (শতভাগ) প্রস্তুত।
প্রশ্ন: কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের (সিইটিপি) কাজই তো এখনো পুরোটা শেষ হয়নি। তাহলে কীভাবে শতভাগ প্রস্তুত বলছেন?
আবদুল কাইউম: সিইটিপির চারটি মডিউল আছে। দুইটি মডিউল বর্তমানে প্রস্তুত। সেটির জন্যই আমি শতভাগ প্রস্তুত বলছি। এই দুইটি মডিউল চালু করতে ৪৮টি ট্যানারি দরকার। আগে ৪৮টি ট্যানারি আমাকে দেন, তারপর যদি চালু করতে না পারি তখন আপনি বলেন যে আমরা প্রস্তুত না। ইতিমধ্যে সিইটিপি চালু হয়ে গেছে।
প্রশ্ন: ট্যানারির মালিকেরা অভিযোগ করেছেন, কারখানা থেকে সিইটিপিতে বর্জ্য যাওয়ার যে পাইপ লাগানো হয়েছে, সেটি অনেক সরু। ইতিমধ্যে দুইটি ট্যানারি স্বল্প পরিসরে চালু হয়েছে। তাতেই বর্জ্য যাওয়ার পাইপ ভরে গেছে। সব ট্যানারি চালু হলে কী হবে?
আবদুল কাইউম: এটা কোনো প্রশ্নই হতে পারে না। কারখানার বর্জ্যগুলো প্রথমে ইপিএসে (ইফুলিয়েন্ট পাম্প স্টেশন) যাবে। সে রকম ইপিএস থাকবে তিনটি। পাম্পের সাহায্যে বর্জ্য টেনে এনে তারপর সিইটিপিতে ফেলা হবে। ইতিমধ্যে একটি ইপিএস চালু হয়েছে।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন সিইটিপিতে বর্জ্য যাওয়ার পাইপটি প্রয়োজনের চেয়ে সরু, নাকি না?
আবদুল কাইউম: এটা আমাদের ডিজাইন (নকশা) না। চীনাদের ডিজাইন (চীনা প্রতিষ্ঠান সিইটিপি নির্মাণের কাজ করছে)। ট্যানারির মালিকেরা বললেই তো হবে না। তাঁরা তো একই সময়ে কারখানা থেকে বর্জ্য ছাড়ছেন না। সে জন্য আমরা একটা সময় বেঁধে দেব। তারপর সেগুলো টেনে নেব।
প্রশ্ন: ট্যানারিতে ব্যবহারের জন্য পানির লাইনটি দেওয়া হয়েছে দুই ইঞ্চি ব্যাসের। মালিকেরা বলছেন মাঝারি আকারের কারখানাগুলোতে দিনে এক লাখ লিটারের মতো পানি লাগবে। এই পরিমাণ পানি দুই ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ দিয়ে আনা কি সম্ভব?
আবদুল কাইউম: এটা বলে আর কি। এটি প্রেসারাইজ ওয়াটার (দ্রুতগতিতে পানি যাবে)। তবে যেসব কারখানার বেশি পানি লাগবে তারা টাকা দিয়ে বড় আকারের পাইপ লাগিয়ে নেবে। কারও যদি তিনটা বা চারটা পানির পাইপ লাগে, তাহলে নেবে। আমার অসুবিধা কী? আমরা প্রতিদিন দুই কোটি লিটার পানি উৎপাদন করব। যার যার চাহিদা অনুযায়ী পানি নেবে। আমাদের তাতে আপত্তি নেই।
প্রশ্ন: পানির লাইন আপনারা দিয়েছেন, মিটারও দিয়েছেন। কিন্তু ট্যানারির মালিকেরা পানি পাচ্ছেন না। পানি কবে দেবেন?
আবদুল কাইউম: আমরা অর্ডার দিয়ে দিয়েছি। ৩১ আগস্টের মধ্যে চালু করে দেব।
প্রশ্ন: ট্যানারি থেকে সাধারণ বর্জ্যের পাশাপাশি ক্রোমিয়ামযুক্ত বিষাক্ত তরল নির্গত হয়। এর পরিশোধনপ্রক্রিয়া এখনো চালু করতে পারেননি। তার আগে কারখানা চালু হলে কি পরিবেশদূষণ হবে না!
আবদুল কাইউম: না, না। পরিবেশের কোনো দূষণ হবে না। ক্রোমিয়াম পরিশোধনের যন্ত্রপাতি আমদানি হচ্ছে। বর্তমানে যন্ত্রপাতিগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে আছে। ১০-১২ দিন লাগবে। সে জন্য কারখানাগুলোকে বলেছি, এখন ক্রোমিয়াম মিশ্রিত পানি আমাদের পাইপে না দিতে। ফলে এখানে দ্বিতীয় হাজারীবাগ হওয়ার কোনো কারণ নেই।
প্রশ্ন:ট্যানারির মালিকেরা যে গতিতে কাজ করছেন, তাতে সব কারখানা চালু করতে কত দিন লাগবে?
আবদুল কাইউম: কারখানা কবে চালু করবেন তা ট্যানারির মালিকদের বিষয়। আমি ৪৮টি কারখানার জন্য প্রস্তুত আছি। তবে ঢাকা হাইডস, বে, এপেক্সের মতো বড় কয়েকটি ট্যানারি চালু হলেই এখানকার পরিবেশ বদলে যাবে।
প্রশ্ন:যেসব ট্যানারির মালিক প্লট নিয়ে ফেলে রেখেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থা নেবেন?
আবদুল কাইউম: তাঁদের কী হবে, সরকার পরে চিন্তা করবে। সময় এলেই দেখবেন। এখন প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা দিচ্ছেন। কেউ জমি নিয়ে ফেলে রাখলে হয়তো আমরা প্লট বাতিল করব। এ রকম চিন্তাভাবনা আছে। ইতিমধ্যে যাঁরা প্লট পাননি, তাঁদের অনেকে আবেদন করেছেন। এ ছাড়া হাসপাতাল, মসজিদসহ বিভিন্ন অবকাঠামো করতে হবে। সে জন্যও জায়গা লাগবে।
প্রশ্ন: ট্যানারির শ্রমিকদের আবাসনের বিষয়ে আপনাদের কোনো পরিকল্পনা নেই?
আবদুল কাইউম: হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পটির শুরুর দিকে শ্রমিকদের আবাসনের চিন্তা সরকার ও ট্যানারির মালিক কেউই করেনি। তবে অনেক ট্যানারির মালিক কারখানার ভেতরে শ্রমিকদের আবাসনের ব্যবস্থা করছেন। আবার চামড়া শিল্পনগরীর দ্বিতীয় পর্যায়ের চিন্তাও আছে। সেখানে শ্রমিকদের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে।সূত্র: প্রথম আলো।