গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্যাসের দাম বাড়লে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বস্ত্র, পোশাক ও ইস্পাত খাত। বস্ত্র খাতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, সে বিষয়ে কথা বলেছেন বস্ত্রকলের মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর পরিচালক ও আউটপিস স্পিনিং মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীবহায়দার।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে গ্যাস খাতের কোম্পানিগুলো। গ্যাসের দাম বাড়লে বস্ত্র খাতে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে?
রাজীব হায়দার: বস্ত্র খাতের সুতা ও কাপড় তৈরির মিলগুলোর প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে তুলা। তারপরই বিদ্যুৎ। মিলগুলো গ্যাসচালিত নিজস্ব ক্যাপটিভ জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে থাকে। ফলে গ্যাসের দাম বাড়লে পণ্যের উৎপাদন খরচ সরাসরি বেড়ে যাবে। মানে সুতা ও কাপড়ের দাম বর্তমানের চেয়ে বাড়বে। আমাদের সুতা বা কাপড় যায় রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানায়। দাম বেড়ে গেলে আমাদের সুতা বা কাপড় নিয়ে পোশাক ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারবেন না। কারণ, গ্যাসের দাম বাড়লে সুতা ও কাপড়ের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি কারখানার যন্ত্রপাতি চালানোর জন্য ব্যবহৃত বিদ্যুৎ খরচও বাড়বে। দুই দিক থেকে প্রভাব পড়ায় পোশাক ব্যবসায়ীরা বিকল্প খুঁজবেন। সুতা ও কাপড়ের জন্য ভারত, চীন কিংবা পাকিস্তানের প্রতি আগ্রহী হবেন। তাহলে বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে, বাড়তি খরচটা আমরা কোথাও দিতে পারব না। তেমনটি হলে খুব সহজেই বাজারটি আমার হাতছাড়া হয়ে যাবে। মোট কথা, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেলে আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাবে। এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রশ্ন: স্পিনিং মিলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাসচালিত ক্যাপটিভ জেনারেটর ব্যবহৃত হয়। আর এই ক্যাপটিভের জন্য গ্যাসের দাম ১৩০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব আছে। এটি কার্যকর হলে মিলগুলোর উৎপাদিত সুতার দাম কী পরিমাণ বাড়তে পারে?
রাজীব হায়দার: কাউন্টভেদে সুতার দাম ভিন্ন হয়ে থাকে। সে জন্য খরচের হিসাবটি সামগ্রিকভাবেই করতে হবে। যেমন—আগে একসময় আমাদের মিলের মোট খরচের ৩ শতাংশ ছিল জ্বালানি বাবদ ব্যয়। গত সেপ্টেম্বরে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে এখন সেই খরচ ৬ শতাংশে গিয়ে পৌঁছেছে। বর্তমানে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির যে প্রস্তাব, তাতে জ্বালানি খরচ ১৩ শতাংশ হয়ে যাবে। এক ধাপে খরচ যদি এতটা বেড়ে যায়, তাহলে তো বড় ধরনের ধকলের ব্যাপার। এটি নিতে পারব না আমরা।
প্রশ্ন: ধরে নিন, গ্যাসের দাম কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব অনুযায়ী বাড়ল। তখন আপনার স্পিনিং মিল টিকিয়ে রাখতে কী করবেন? কোনো পরিকল্পনা করেছেন?
রাজীব হায়দার: গত বছর গ্যাসের দাম যখন বাড়ানো হয় তখন আমরা তেমন আপত্তি করিনি। কারণ, আমাদের মিলগুলোর মুনাফা থেকে কর্তন করে বাড়তি অর্থ দেওয়ার সুযোগ ছিল। মানে মুনাফার হারটা বেশি ছিল। তবে এবার আর সেটি নেই। সে জন্যই আমরা গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি থামানোর চেষ্টা করছি। আশা করছি, গ্যাসের দাম খুব একটা বাড়বে না। সে জন্য পরিবর্তিত পরিস্থিতি নিয়ে খুব একটা চিন্তাভাবনা করা হয়নি। তারপরও যদি কোনো কারণে দাম বৃদ্ধি পায়, তবে সেই বাড়তি খরচ অবশ্যই আমরা সুতার বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে যুক্ত করব। আমরা দেখব, সুতার দাম বেড়ে গেলে বাজার থেকে কী প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি। সেটির ওপর নির্ভর করছে কী করব। তবে শেষ বিচারে পরিকল্পনা করাটা খুব কঠিন। কারণ, এক জায়গায় খরচ বাড়লে অন্য জায়গার খরচ কমাতে হাত দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে সফল হওয়াটাও খুব জটিল। অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব।
প্রশ্ন: ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা করলেই কি সুতার দাম বাড়াতে পারেন? আন্তর্জাতিক বাজারে সেটি কি সম্ভব?
রাজীব হায়দার: না, সম্ভব না। কারণ, আমি ইচ্ছা করলে সুতার দাম বাড়াতে পারি, তবে সেটি বাজার দিতে প্রস্তুত কি না, সেটাই বড় বিষয়। ধরলাম, দেশের সব স্পিনিং মিল মালিকই প্রতি কেজি সুতার দাম ১০ সেন্ট বাড়িয়ে দিলাম। তখন কাপড় প্রস্তুতকারক মিলগুলো বেশি দামে সুতা কিনবে। তারা পোশাক কারখানার কাছে বেশি দামে বিক্রির চেষ্টা করবে। তখন পোশাক তৈরির খরচ বাড়বে। যদি এটি সরবরাহব্যবস্থায় মানিয়ে যায় কিংবা পোশাক মালিকেরা যদি বিদেশি ক্রেতাদের বোঝাতে পারেন যে দেশে সুতার দাম বেড়ে গেছে, তোমরা কাপড়ের দাম বেশি দাও। ক্রেতারা যদি সে অনুযায়ী দাম বাড়িয়ে দেন, তাহলে সমস্যা নেই। তবে এ ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে, ভারত ও চীন থেকে প্রচুর পরিমাণে সুতা আসছে। যখনই দেশে সুতার দাম বাড়বে, পোশাক মালিকেরা তখন কম দামের ওই দিকেই যাবেন। শেষ বিচারে তো তাকে বিদেশি ক্রেতার কাছে সেই বাড়তি দামটি আদায় করতে হবে। এটি করা খুবই কঠিন কাজ।
প্রশ্ন: গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেলে বস্ত্র খাতের কারখানা টিকতে পারবে?
রাজীব হায়দার: বস্ত্র খাতে অনেকে আছে। প্রত্যেকের আলাদা ব্যবসায় পরিকল্পনা আছে। সামগ্রিক বিচারে গ্যাসের দাম বাড়লে জ্বালানি খরচ ১৩ শতাংশ হয়ে যাবে। যেসব কারখানার ব্যাংকের কোনো দায় দেনা নেই, ইতিমধ্যে ব্যাংকঋণ পরিশোধ করেছে, তাদের কিছুটা সুবিধা থাকবে। যাদের দায় দেনা আছে তাদের খরচ একটু বেশি হবে। সে জন্য সুতার দাম কেজিতে হয়তো কেউ ১০ সেন্ট বাড়াবে, কেউ ৮ সেন্ট। তবে সুতার দাম বাড়বে, বাড়াতেই হবে। তখন টিকে থাকাটা হবে কষ্টসাধ্য। তথ্যসূত্র: দৈনিক প্রথম আলো।
তথ্য অধিদপ্তরের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
সম্পাদকীয় কার্যালয়: ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা,
সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০