এস. এম. দেলোয়ার হোসাইন, মাদারীপুর প্রতিনিধি: স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চাই স্মার্ট নাগরিক। দেশের প্রতিটি নাগরিক যদি স্মার্ট হতে পারে, তাহলেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া সহজ হবে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার। সেখানে স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভের কথা অর্থাৎ ১) স্মার্ট সিটিজেন,২) স্মার্ট ইকোনোমি, ৩) স্মার্ট গভর্নমেন্ট, ৪)স্মার্ট সোসাইটি এর কথা বলা হয়েছে। এর প্রথম স্তম্ভই রাখা হয়েছে স্মার্ট সিটিজেন বা স্মার্ট নাগরিক। অর্থাৎ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য যে স্তম্ভের ভুমিকা সবচেয়ে বেশি সেটি হলো স্মার্ট নাগরিক।
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। তাই সেই শিশুর ভবিষ্যৎকে গড়ে তুলতে হবে স্মার্ট নাগরিক হিসেবে। পিতা-মাতার পরে প্রতিটি শিশুর দায়িত্ব যিনি নেন তিনি হলেন শিক্ষক। শিক্ষকের কাছেই শিশুর হাতে খড়ি। সর্বপ্রথম শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছে শেখে।
কাজেই শিশুকে স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রাথমিক শিক্ষকের ভূমিকাই মুখ্য। এক্ষেত্রে, শিক্ষককে হতে হবে আইসিটি দক্ষ, অভিজ্ঞ, সুভাষী, কর্তব্যপরায়ণ ও দেশপ্রেমিক। আর এসবগুণ মিলিয়েই একজন শিক্ষক হয়ে উঠেন স্মার্ট শিক্ষক।
উন্নত সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে সবার আগে শিশুদের উন্নত চিন্তাজগতের সাথে পরিচিত হতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা একটি শিশুর জীবনে ব্যাক্তিত্বের বিকাশ ও জ্ঞানার্জনের মূলভিত্তি তৈরি করে। তাই সব শিশুর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞানচর্চা ও প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহী এবং পারদর্শী করে তুলতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালনের জন্য শিক্ষককে হতে হবে বিজ্ঞানমনস্ক, প্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শী।
শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা, মূল্যবোধ, বিনয় ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করার দীক্ষা অবশ্যই শিক্ষক দিবেন। পাশাপাশি তাদের আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে পারদর্শী করে তুলবেন। কীভাবে ডিজিটাল হাজিরা প্রদান করতে হয়, কীভাবে যে কোন বিষয় ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে ফলাফল জানতে হয়, কীভাবে স্মার্ট বোর্ড ব্যাবহার করতে হয়, কীভাবে কন্টেন্ট তৈরি করতে হয় সে বিষয় শিক্ষকই সুস্পষ্ট ধারণা দিবেন।
জরিপ করলে দেখা যাবে ২০১৯ সাল অর্থাৎ কোভিড ১৯ এর আগে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ২০২২ ও ২০২৩ সাল কোভিড ১৯ এর পরে প্রযুক্তির ব্যবহারে, বর্তমানে অনেক এগিয়ে। কারণ করোনা আমাদের থেকে যেমন অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে, তেমনি আমাদের করেছে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট নাগরিক।
শিখন ঘাটতি দূর করার জন্য শিক্ষক ব্যাবহার করেছে স্মার্ট ফোন। ক্লাস নিয়েছে ফেইসবুক লাইভ, জুম, স্ট্রিমইয়ার্ড ও গুগল মিটে। তথ্য বিনিময় করেছে হোয়াটস অ্যাপে, ম্যাসেঞ্জারে, মেইলে। আর শিক্ষার্থীরা শেখার জন্য যুক্ত হয়েছে প্রযুক্তির এই অ্যাপেগুলোতে। শিক্ষার্থীরা নিজের আইডি খুলেছে ফেইসবুকে, ইউটিউবে, জুমে এবং উপস্থাপনা, আবৃত্তি, গান এমনকি নৃত্য পরিচালনা করেছে লাইভ প্রগ্রামে।
বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষাক্রমে কম্পিউটার কোডিং পদ্ধতি এবং শিখন-শেখানো কার্যক্রমে ব্লেন্ডিং এ্যাপ্রোচ প্রয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের দক্ষতা বিকাশে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি দক্ষ করতে হলে অবশ্যই শিক্ষককে আগে দক্ষ ও স্মার্ট হতে হবে। তবেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হয়ে উঠবে স্মার্ট বাংলাদেশ। যেখানে অবদান রাখবে স্মার্ট শিক্ষকরা।
তাহমিনা আফরোজ, সহকারী শিক্ষিকা, সুলতান খান কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
শিবচর, মাদারীপুর।