আবহমানকাল থেকেই মানুষ আগুনের সাথে সংগ্রাম করে চলেছে। পাথরে পাথরে ঘর্ষণ থেকে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন জ্বালানোর দিন শেষ। এখন অটো ইগনিশনের মাধ্যমে আগুন জ্বালানোর যুগ।
আবহাওয়া প্রতিনিয়তই বদলাচ্ছে, পৃথিবীর বহু দেশে প্রতিনিয়ত বনের গাছে গাছে ঘর্ষনের ফলে বহু অগ্নিকান্ড ঘটছে আবার আগ্নেয়গিড়ির লাভা থেকেও অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হচ্ছে।
আগুনকে বলা হয় ‘It’s a good servant but a bad master’। তাই আগুনের লেলিহান শিখা থেকে মানুষের জীবন ও সম্পদকে নিরাপদ রাখতে ফায়ার ব্রিগেড ও সিভিল ডিফেন্স নামে অগ্নিনিরাপত্তার জন্য একটি বিভাগ স্বাধীনতার পর পরই যথাযথ প্রশিক্ষণ ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সদাশয় সরকার চলমান রেখেছেন।
এই বিভাগ মানুষের দুঃখ দুর্দশা লাঘবে বেশ তৎপর এবং জীবন বাজী রেখে অগ্নি নির্বাপনে কর্মকর্তারদের জীবন আগুনে আত্মাহুতি দেবার নজিরও রয়েছে। আমরা বহু বড় বড় মিল ফ্যাক্টরী ও অফিস আদালত থেকে মানুষকে উদ্ধারের ঘটনা টিভির মাধ্যমে চাক্ষুস দেখেছি।
অগ্নিকান্ডের খবর শুনার পর পরই আগুনের ভয়াবহতা অনুধাবন করে শহর বন্দরের সকল ফায়ার ব্রিগেড ষ্টেশন তাদের যন্ত্রপাতি, মানুষ, পানি ও অগ্নি নির্বাপনের সকল প্রকার সরঞ্জামসহ হাজির হন ও জীবনবাজী রেখে কর্মীরা নিজেদের জীবন আগুনে সমর্পন করে অগ্নি নির্বাপনের চেষ্টা চালিয়ে যান।
যে প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগে সে প্রতিষ্ঠান ও আশে পাশের লোকজন ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীদের দেখভালের সাথে সাথে খাবার ও কাজ শেষে আর্থিক সহযোগীতাও করে থাকেন।
ফায়ার ব্রিগেড মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করে প্রভূত উপকার করে থাকে নিঃসন্দেহে; কিন্তু বীমা দাবী নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে এখনো পর্যন্ত অগ্নিকান্ডের ব্যাপারে তাদের একটি রিপোর্ট অত্যন্ত জরুরী। আর সে ক্ষেত্রেই সমস্যা দেখা দেয়।
যতই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানই হউক না কেন ফায়ার ব্রিগেড ডিপার্টমেন্ট-এর কাছ থেকে দুর্ঘটনার প্রতিবেদন আনতে গলদঘর্ম হতে হয়। দীর্ঘ সময়ক্ষেপন এবং নজিরবিহীন আর্থিক দন্ডতো রয়েছেই, ফলে বীমা দাবী নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বীমা গ্রহীতা ও পুনঃবীমাকারীদের মধ্যে কোম্পানীর একটি দূরত্ব সৃষ্টি হয়। যা দেশ ও দশের জন্য কাম্য নয়, শুধু মাত্র ফায়ার ব্রিগেড ও সিভিল ডিফেন্স ডিপার্টমেন্টই এই জন্য দায়ী।
অগ্নি দাবী নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ফায়ার ব্রিগেড রিপোর্টের কারণে কোন দাবী ২/৩ বছরেও এমন কি অনন্তকাল পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয় না যার কারণে বীমা গ্রহীতা আর্থিকভাবে অনেক ক্ষেত্রে নিঃস্ব হয়ে যায়। ব্যাংকে তারা ঋণ খেলাপী হিসাবে গণ্য হন আর বীমা কোম্পানীর দূর্নাম ছড়ায়। বীমা ব্যবসা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
যে কোন অগ্নিকান্ডের পর স্থানীয় জনগন, জনপ্রতিনিধি, কোম্পানী ও ফ্যাক্টরীর লোকজন, সার্ভেয়ার, আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, ফায়ার ব্রিগেডসহ প্রিন্ট মিডিয়া, টিভি চ্যানেলের লোকজন, বীমা কোম্পানীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও পুনঃবীমাকারীগণ কখনো কখনো উপস্থিত থেকে প্রয়োজনে সরাসরি অগ্নিকান্ডের ভিডিও ও দুর্ঘটনাকবলিত কোম্পানীর ভিডিও ফুটেজও সংগ্রহ করে থাকেন। বড় ধরনের অগ্নিদুর্ঘটনায় সকলের দৃষ্টি সেদিকে থাকে।
বীমা আইন ও বীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক টাঃ ৫,০০০/- (পাঁচ হাজার) টাকা সমপরিমান দাবী বাদে অতিরিক্ত যে কোন অর্থের দাবীর ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের লাইসেন্সধারী জরিপকারী নিয়োগ করা বাধ্যতামূলক এবং কোন কোন ক্ষেত্রে দাবীর অংক বেশী হলে দ্বিতীয় জরিপকারী নিয়োগেরও বিধান রয়েছে।
বীমা দাবী নিষ্পত্তি হয় সরেজমিন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও জরিপ প্রতিবেদন মোতাবেক। এমতাবস্থায় অগ্নি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ বীমা দাবীসমূহ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ফায়ার ব্রিগেড রির্পোট জরুরী নয় এই মর্মে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন ও সাধারণ বীমা কর্পোরেশন এর যৌথ নির্দেশনা বীমা শিল্পকে বহুদিনের দুর্নাম থেকে আস্থার জায়গায় ফিরিয়ে আনতে পারে।
লিখেছেন- মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোঃ লিঃ
কর্পোরেট সংবাদ/এএইচ