কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে তদন্তের পর বিভাগীয় মামলা হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক এক সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই তথ্য জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এডিসি হারুনের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে যা করার, সেটি পুলিশ করেছে। এখন মামলা-তদন্ত—এগুলো একটি প্রক্রিয়ায় হবে। তাৎক্ষণিকভাবে যেটা দরকার ছিল, তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে, আমার জানামতে, ভুক্তভোগীরা এখনও মামলা করেননি। ভুক্তভোগীরা মামলা করলে তার তদন্ত হবে। তবে, যেহেতু একটি ঘটনা ঘটেছে, তাই বিভাগীয় মামলা হবে।
তিনি আরো বলেন, শাহবাগ থানায় নিয়ে ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে নির্যাতনের ঘটনার পর সাময়িক বরখাস্ত হন এডিসি হারুন। পরে তাকে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। একই ঘটনায় এডিসি সানজিদা আফরিনকে রংপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে (পিটিসি) বদলি করা হতে পারে বলে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে এটি গুজব।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে গত মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের (পুলিশ-১) প্রজ্ঞাপনে হারুনকে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে এ আদেশ জারি করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত এবং পুলিশ অধিদপ্তরে সংযুক্ত) হারুন-অর-রশীদকে রংপুর রেঞ্জে ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হলো।
পুলিশের এক নারী কর্মকর্তার সঙ্গে অতিরিক্ত উপকমিশনার হারুনের আড্ডা দেওয়া নিয়ে গত শনিবার রাতে ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের ওই দুই নেতাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
এ বিষয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, হারুনের সঙ্গে শাহবাগের একটি হাসপাতালে পুলিশের একজন নারী কর্মকর্তা আড্ডা দিচ্ছিলেন। সেখানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে ওই নারী কর্মকর্তার স্বামী হাজির হন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। পরে এডিসি হারুন সেখান থেকে চলে যান।
এ ঘটনায় হারুন-অর-রশীদকে গতরোববার দুপুরে এডিসি হারুনকে ডিএমপির রমনা বিভাগ থেকে দাঙ্গা দমন বা পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। এরপর সন্ধ্যায় তাকে এপিবিএনে বদলি করা হয়। পরে গতকাল সোমবার বিকেলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর মঙ্গলবার তাকে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়।
একইদিন এ ঘটনায় মুখ খোলেন এডিসি সানজিদা আফরিন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক বক্তব্যে তিনি তার স্বামী রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক মামুনের ওপর অনেকটা দায় চাপান। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীই হারুন স্যারকে (হারুন অর রশিদ) প্রথমে আঘাত করেছেন।’…‘উনি (স্বামী) আসলে ওখানে কী করছিলেন কেন গিয়েছিলেন, আমি জানি না। ওনাকে টোটালি আউট অব মাইন্ড লাগছিল (মানসিকভাবে স্থির ছিলেন না) এবং খুবই উত্তেজিত ছিলেন।’
হারুনের মারধরে আহত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফজলুল হক হলের- সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন। তার কাছে গত মঙ্গলবার হারুন-অর-রশীদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বছেন, ‘পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেব, মামলা করব কি-না।’ যদিও হারুনের স্থায়ী বহিষ্কার চেয়ে তিনি তার গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে, দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চান ছাত্রলীগের এই নেতা।
আরও পড়ুন: