আরিফ হাসান, স্টাফ রিপোর্টার: দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুসাঙ্গিক খাতের কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলছে । গত ছয় মাসে কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ১২৪ দশমিক ২ টাকা বা ৩৮২ শতাংশ।
তথ্য অনুসারে, ১৩ মার্চ ২০২৩ তারিখে কোম্পানির সর্বশেষ শেয়ারদর ছিলো ৩২ টাকা ৫ পঁয়সা । ছয় মাসের ব্যবধানে সেই দর ১২৪ টাকা ২ পঁয়সা বেড়ে ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে এসে দাঁড়িয়েছে ১৫৬ টাকা ৭০ পয়সায় । এই দর বৃদ্ধির পেছনে কোন মূল্য সংবেদনশীল তথ্যও প্রকাশ করেনি এমারেল্ড ওয়েল । এই অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে বিনিয়োগকারী মহলে ।
এ ব্যাপারে জানতে এমারেল্ড অয়েলের কোম্পানি সেক্রেটারি মো: ইমরান হোসেইন কে একাধিকবার ফোন করার পরেও ফোন রিসিভ করেন নি ।
২০১৭ সালে বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানিটিতে প্রাণ ফেরাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয় চলতি বছরের শুরুর দিকে। মিনোরি বাংলাদেশ নামে একটি জাপানি প্রতিষ্ঠান এমারেল্ড অয়েল চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়।
শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন দর বাড়ার পেছনে কোম্পানি চালুর বিষয়টিও প্রধান কারন হতে পারে । কিন্তু শুধু মাত্র উৎপাদনে ফেরার খবরে বাজারে দর বৃদ্ধির এই অস্থিরতাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা । সেই সাথে বিনিয়োগকারীদের ভেবে চিন্তে বিনিয়োগকরার পরামর্শও দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা ।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি মূল্যায়নের অন্যতম হাতিয়ার মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও)। যে কোম্পানির পিই রেশিও বেশি, সেখানে বিনিয়োগ ঝুঁকিও তত বেশি। সেদিক বিবেচনায় বর্তমানে পিই রেশিও ভিত্তিতে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ অবস্থানে রয়েছে এমারেল্ড অয়েল । পিই রেশিও ৪০ পয়েন্টের ওপরে অবস্থান করা কোম্পানি মূলত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয় । সেখানে কোম্পানিটির বর্তমান পিই রেশিও ৯৭১.৭৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
কোম্পানিটি সর্বশেষ লভ্যাংশ দিয়েছে ২০২২ সালে । ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২২ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করেছে এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১৭ পয়সা, যা আগের হিসাব বছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৫৮ পয়সা। ৩০ জুন ২০২২ এ কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে মাইনাস ১২ টাকা ৮৫ পয়সা, ২০২১ হিসাব বছর শেষে যা ছিল মাইনাস ২০ টাকা ২৯ পয়সা ।
২০১৭ সালে বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে বিগত ৫ বছর উৎপাদনে না থাকার কারেনে ৫ বছর বিনিয়োগকারীদের কোন লভ্যাংশ দেয়নি খাদ্য ও আনুসাঙ্গিক খাতের এই কোম্পানিটি।
২০১৬ হিসাব বছরে ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছিল এমারেল্ড অয়েল। তার আগে ২০১৫ হিসাব বছরে ১০ শতাংশ হারে নদগ ও বোনাস লভ্যাংশ এবং ২০১৪ হিসাব বছরে ১০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ পেয়েছিলেন কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা।
প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বুধবার শেয়ারটির সর্বশেষ ১৫৬.৭০ টাকা দরে লেনদেন করে। গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ার দর ২৮ টাকা ১০ পয়সা থেকে ১৮৮.৮০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করেছে।
২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৫৯ কোটি ৭১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। কোম্পানির রিজার্ভ রয়েছে মাইনাস ১৮৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
খাদ্য ও আনুসাঙ্গিক খাতের এই কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৫ কোটি ৯৭ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৩৮ দশমিক ২৬ শতাংশ শেয়ার। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ বাকি ৫০ দশমিক ০৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।
কর্পোরেট সংবাদ/এএইচ