October 9, 2024 - 6:21 pm
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeকর্পোরেট-অর্থ ও বাণিজ্যঅর্থ-বাণিজ্য৭০ ভাগ মানুষের ভাবনায় ভুল পথে চলছে দেশের অর্থনীতি

৭০ ভাগ মানুষের ভাবনায় ভুল পথে চলছে দেশের অর্থনীতি

spot_img

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক: দেশের ৭০ ভাগ মানুষ মনে করেন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভুল পথে চলছে। এছাড়া ৮৪ শতাংশ মানুষের মনে করেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তাদের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। আর ৪৪ শতাংশ মনে করছে, বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি।

দেশের মানুষের এ মতামত উঠে এসেছে দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক জরিপে। এশিয়া ফাউন্ডেশন গতকাল তাদের ওয়েবসাইটে জরিপ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।

‘দ্য স্টেট অব বাংলাদেশ’স পলিটিক্যাল, গভর্ন্যান্স, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটি: অ্যাকর্ডিং টু ইটস সিটিজেনস’ বা বাংলাদেশের রাজনৈতিক, শাসন, উন্নয়ন ও সামাজিক পরিস্থিতি: নাগরিকদের মত শীর্ষক জরিপটিতে ৬৪ জেলার মোট ১০ হাজার ২৪০ নাগরিকের মতামত নেয়া হয়েছে। প্রতিটি জেলা থেকে সমানসংখ্যক নারী-পুরুষ এ জরিপে অংশ নেয়। এর মধ্যে গ্রামের বাসিন্দা ৬৪ ও শহরের ৩৬ শতাংশ। ২০১১ সালের আদমশুমারির ভিত্তিতে পরিচালিত গবেষণাটি চলে ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত। উত্তরদাতাদের কাছে মূলত রাজনীতি ও জনপ্রতিনিধিদের বিষয়ে নাগরিকদের উপলব্ধি, সমাজ ও অর্থনীতির গতিশীলতা, গণতন্ত্র ও নির্বাচন, নাগরিকত্ব, নারীর ক্ষমতায়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও নীতির প্রভাব এবং সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। 

২০১৭ ও ২০১৯ সালেও একই ধরনের গবেষণা করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে বর্তমান তথ্যের পাশাপাশি আগের তথ্যচিত্রও তুলে ধরা হয়। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কোন পথে রয়েছে—এমন প্রশ্নে ৬৯ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরদাতা জানায়, অর্থনৈতিকভাবে দেশ ভুল পথে আছে। তবে সঠিক পথে রয়েছে বলে জানিয়েছে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ উত্তরদাতা। যদিও ২০১৯ সালে ৭০ দশমিক ৩ শতাংশ নাগরিক মনে করত, বাংলাদেশ ঠিক পথে রয়েছে আর ২৮ শতাংশ মানুষ মনে করত ভুল পথে রয়েছে দেশ। মূলত স্বল্প আয়ের লোকজনের মতামতেই এ তথ্য বেশি উঠে এসেছে।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও আস্থার সংকট ফুটে উঠেছে এশিয়া ফাউন্ডেশন ও বিআইজিডির গবেষণা প্রতিবেদনটিতে। ২০১৯ সালে ৬৩ দশমিক ৬ শতাংশ লোক মনে করত, রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ সঠিক পথে রয়েছে। তবে ২০২২ সালে সে ধারণার হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ১ শতাংশে। আগের জরিপে ভুল পথে আছে মনে করত ৩০ শতাংশ মানুষ। নতুন জরিপে সেটিও বেড়ে হয়েছে ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

সামাজিক ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আসেনি উত্তরদাতাদের পক্ষ থেকে। ২০১৯ সালের জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশ এক্ষেত্রে সঠিক পথে ছিল বলে মনে করত ৭৭ শতাংশ মানুষ এবং ২১ দশমিক ৯ শতাংশ মনে করত ভুল পথে এগোচ্ছে দেশ। তবে ২০২২ সালে সঠিক পথে আছে বলে মনে করে ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা। সেক্ষেত্রে সাড়ে ১৯ শতাংশেরই আস্থা কমেছে। এখন ভুল পথে রয়েছে বলে মনে করে ৩৮ দশমিক ৭ শতাংশ, যা আগের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি। 

বাংলাদেশের বড় সমস্যা চিহ্নিত করতেই জনগণের মতামত নেয়া হয় এ গবেষণায়। বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়াকে সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে মনে করে ৪৪ শতাংশ উত্তরদাতা। ২০১৯ সালে ৩৩ শতাংশ মানুষ এটিকে বড় সমস্যা মনে করত। এছাড়া ১১ শতাংশ মানুষ বড় সমস্যা মনে করে ব্যবসা বা অর্থনৈতিক মন্দাকে। ২০১৯ সালে এ হার ছিল মাত্র ৫ শতাংশের মতো। বেকারত্ব বা জীবিকার সমস্যাকে বড় সমস্যা মনে করে ১০ শতাংশ লোক। এরপর রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকেও বাংলাদেশের বড় সমস্যা হিসেবে মত দেয় জরিপে অংশ নেয়া ব্যক্তিরা। এগুলোর বাইরে ১৮ শতাংশ মানুষ অন্যান্য সমস্যার বিষয়ে মত দিয়েছে।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। দেশের ৮৪ শতাংশ মানুষের জীবনে এ সমস্যা গুরুতর প্রভাব ফেলেছে বলে জরিপে দেখানো হয়েছে। এছাড়া কিছুটা প্রভাব ফেলেছে ১৩ শতাংশ মানুষের জীবনে। আর বাড়তি দ্রব্যমূল্য জীবনে প্রভাব ফেলেনি এমন মানুষ রয়েছে কেবল ১ শতাংশ। মোটেও আঘাত পায়নি এমন লোকও রয়েছে ২ শতাংশ।

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক চর্চার বিষয়েও মতামত নেয়া হয় নাগরিকদের। বর্তমানে রাজনীতি ও সরকারে ক্ষমতাসীন দলে শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে বলে মনে করে ৫৭ ভাগ মানুষ। তবে ২০১৯ সালে এটি আরো প্রকট ছিল বলে মত দেয় ৭৫ শতাংশ উত্তরদাতা। এছাড়া সমসাময়িক আরো বেশকিছু বিষয়েও মতামত নেয়া হয় জরিপে অংশ নেয়াদের কাছ থেকে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের বসবাসের বিষয়টি নেতিবাচকভাবে দেখছে সিংহভাগ বাংলাদেশী। ২০১৮ সালেও রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল ৩৪ ভাগ বাংলাদেশী, যা ২০১৯ সালে কমে ১৫ ভাগে দাঁড়ায়। ২০২২ সালে আরো ২ শতাংশ মানুষের সমর্থন কমে ১৩ শতাংশে পৌঁছেছে। আর ৮৫ শতাংশ জনগণ মনে করে, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে বসবাস করতে দেয়া উচিত নয়।

দেশের ৩৪ শতাংশ জনগণ ২০১৯ সালে মনে করত, সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য অনেক বেশি করেছে। একই সময়ে যথেষ্ট করেছে মনে করত ৫৯ শতাংশ জনগণ। ২০২২ সালে এসে এ মতামতের হার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। ৪১ ভাগ বাংলাদেশী মনে করে অনেক বেশি করেছে আর ৪৪ শতাংশ মনে করে যথেষ্ট করেছে।  

পদ্মা সেতুকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করে ৭২ শতাংশ মানুষ। আর ২০ শতাংশ মনে করে গুরুত্বপূর্ণ। তবে সাফল্যের পাশাপাশি সেতুর খরচ ও বাস্তবায়ন নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে ৪ শতাংশের। সেতুর ফলে প্রাপ্ত সুবিধার পাশাপাশি উদ্বেগ আছে বলে মনে করে ৩ শতাংশ উত্তরদাতা। পদ্মা সেতুর জন্য কেবল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কৃতিত্ব দিয়েছে সর্বাধিক ৪৭ শতাংশ। আর সরকারকে ২৮ ও জনগণকে কৃতিত্ব দিয়েছে ২০ শতাংশ লোক। এছাড়া আওয়ামী লীগ এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সাফল্য বলে রায় দিয়েছে ১ শতাংশ উত্তরদাতা।

কর্পোরেট সংবাদ/এএইচ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ