সাইফুলই সলাম রুদ্র, নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি: নরসিংদীর বেলাবতে এসএসসি পরীক্ষায় এ বছর সবচেয়ে বেশি ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে। এর মধ্যে মানবিক বিভাগে ফল বিপর্যয়ের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। শিক্ষকরা নিয়মিত পাঠদান না করায় এবং সভাপতি ও প্রধান শিক্ষদের মধ্যে দ্বন্ধের কারনে সৃষ্ট হওয়া সমস্যার কারনেও পাঠদান নিয়মিত না হওয়ায় এ ফলাফল বিপর্যয় বলে অনেকে মনে করেন।
এরই মধ্যে এসএসসি পরীক্ষায় ফলাফল খারাপ করায় বেলাব উপজেলার সল্লাবাদ ইউনিয়নের সররাবাদ ধনু মাষ্টার উচ্চ বিদ্যালয়ে তালা লাগিয়েছে উত্তেজিত গ্রামবাসী। এসময় তারা প্রধান শিক্ষক আবু হানিফ’সহ বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকদের অবরোদ্ধ করে রাখে কিছু সময়। পরে তারা প্রধান শিক্ষক আবু হানিফকে ফল বিপর্যয়ের জন্য দোষারোপ করে বিদ্যালয় থেকে চলে যাবার নির্দেশ দেন। ঘটনাটি ঘটে গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায়।
গ্রামবাসী জানান, সররাবাদ ধনু মাষ্টার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১১২ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ৭৫ জন পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়। যার মধ্যে শুধু মানবিক বিভাগেরই রয়েছে ৭৩ জন। এমন হতাশা জনক ফলাফলের কারণে প্রধান শিক্ষক আবু হানিফকে দোষারোপ করেছে গ্রামবাসী।
গ্রামবাসী অভিযোগ করে বলেন, আবু হানিফ দীর্ঘ দুই যুগের মত বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ দীর্ঘসময়ে তিনি বিদ্যালয়ে সৃষ্টি করেন একক আধিপত্য। তার এই আধিপত্যের প্রভাব পড়ে পাঠদানে। যার কারনে এত বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে।
অন্যদিকে বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের কাশিমনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় ২০৪ জন পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হয় ৮৪ জন। এর মধ্যে ৬৫ জন শিক্ষার্থীই মানবিক বিভাগের। এ বিদ্যালয়টিতেও দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতির সাথে দ্বন্ধ ছিল। শুধু এই দুই বিদ্যালয়েই নয় বেলাব উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ২৯টি বিদ্যালয়ের অনলাইনে প্রকাশিত এসএসসি ফলাফলে দেখা গেছে।
এসকল বিদ্যালয়ে দুই হাজার সাতশত তেইস জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ৬০৯ জন পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়। যার মধ্যে শুধু মানবিক বিভাগেই অকৃতকার্য হয় ৫২৯ জন। মানবিক বিভাগে এত বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হবার কারন অনুসন্ধানে সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কথা হয় শিক্ষার্থী ,অভিভাবক, শিক্ষক ও সুশিল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ শিক্ষকদের দায়সারা পাঠদান, শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির দ্বন্ধ, ক্লাসে কম পড়িয়ে কোচিং এ বেশি পড়ানোর প্রবণতাসহ প্রভৃতি কারনে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় এত বেশি শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে।
সররাবাদ ধনু মাষ্টার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হানিফের মোবাইলে এই প্রতিনিধি একাধিকবার ফোন দিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পরই উনি মোবাইল বন্ধ করে দেন।
উত্তেজিত জনতা কর্তৃক এই স্কুলে তালা ঝুলানোর পর উনি সহ বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকদেরও মোবাইল বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
অত্র বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য শফিকুল ইসলাম শফু বলেন ,স্কুলের প্রধান শিক্ষক তার মনগড়া মতো স্কুল পরিচালনা করেন। স্কুলের রেজাল্ট খারাপ হবার জন্য তিনিই দায়ী। বিদ্যালয়ের বই বিক্রির টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন। তাছাড়া শিক্ষকরা সময় মতো বিদ্যালয়ে আসেন না। এই প্রধান শিক্ষকের অবসারণ চাই।
বিদ্যালয়টি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফিরোজা হক পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হবার কথা স্বীকার করে বলেন, শিক্ষকদের অবহেলার কারনেই এমনটা হয়েছে। আমি আগামীকাল বিদ্যালয়ে যাব।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শেখ মতিউর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত মোবাইলে আসক্তি ও পড়ার টেবিলে না বসায় রেজাল্ট খারাপ করেছে। তবে কিছু কিছু বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির দ্বন্ধের কারনও দায়ী।