শহীদুজ্জামান শিমুল, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : ঋতু পরিক্রমায় চলছে বর্ষাকাল। বর্ষার রূপ আকাশে ঘন কালো মেঘ, থাকলেও নেই পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত। মাঝেমধ্যে ছিটেফোটা বৃষ্টি হলেও এখনও খাল, বিলে আসেনি ভরা পানি। এ দিকে বাংলা বাংলা বর্ষপঞ্জী ভাদ্র মাসের শেষ সপ্তাহে থেকে সোনালী আশ পাট কাটা শুরু করেছে দক্ষিণ অঞ্চালের কৃষকরা। তবে শ্রাবন মাসের প্রথম সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও খাল,বিল, জলাশয়ে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট জাগ দেওয়া (পাচানো) শুরু করতে না পেরে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সাতক্ষীরার পাট চাষীরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর সাতক্ষীরায় ১১,৮৫৩ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৮,৮৯৭.৫ মেট্রিক টন।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলার উৎপাদিত পাটের অর্ধেক কাটার উপযোগী হয়েছে এবং বাকি পাট ১৫-২০ দিন পর কাটার উপযোগী হবে।
এ বছর রোগবালাই খুব একটা না থাকায় পাটের ফলন ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ। গত বছরের তুলনায় পাটের দাম বেশি পাওয়ার আশা করছেন কৃষকরা।
তবে বৃষ্টি না হওয়ায় খাল-বিলসহ বিভিন্ন ডোবা ও নালায় পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট কাটতে পারছেন না অনেকেই। আবার ভারী বৃষ্টিপাতে বিভিন্ন ডোবা-নালা পানিতে ভরাটের আশায় পাট কাটা শুরু করেছেন। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহরের পাঠ চাষী সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমি ১ একর জমিতে পাট চাষ করেছি। পাট চাষ করতে আমার ৩০,০০০/-(ত্রিশ হাজার) টাকার বেশি খরচ হয়েছে। পাট জাগ দিতে গিয়ে চিন্তায় পড়েছি। কারণ এ বছর পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় পুকুর, ডোবা, নালায় পানি না থাকায় সনাতন পদ্ধতিতে পাট জাগ দিতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে।
শহরের বাইপাস এলাকার পাটচাষী আতিয়ার রহমান বলেন, শ্যালোমেশিন ও মোটর দিয়ে ডোবা-নালায় পানি তুলে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। ফলে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। আবার অনেকে খাল-বিলে ও জলাশয়ে সামান্য জমাট বাঁধা পানিতে পাট-জাগ দিচ্ছেন।
সাতক্ষীরা উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, পানির অভাবে পাট জাগ দিতে না পারার কারনে বৃষ্টির জন্য জমিতেই রেখে দিয়েছি।
এ অবস্থায় ভালো ফলন হলেও লোকসানের আশঙ্কা করছেন অনেকে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম জানান, এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় খালে-বিলে পর্যাপ্ত পানি নেই। তাই কৃষকরা পাট জাগ দেওয়া নিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন। পাট চাষের উপকারিতা হচ্ছে যে পাটের ঝরে পড়া পাতা জমিতে পচে জৈব সার তৈরি হয়। ফলে জমির উর্বরতা বেড়ে যায়। পরবর্তীতে যে কোনো ফসল করলে তার ভালো ফলন পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, জমি থেকে অনেক দূরে বহন করে নিয়ে পাট জাগে ফেলতে হচ্ছে। এতে করে পাট উৎপাদনে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তবে পাটের ন্যায্য দাম পেলে চাষিদের লোকশান গুনতে হবে না বলে জানান এই কর্মকতা।