স্পোর্টস ডেস্ক : প্রথমবারের মত আফগানিস্তানের কাছে ওয়ানডে সিরিজ হারলো বাংলাদেশ। শনিবার (৮ জুলাই) সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের কাছে ১৪২ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে আফগানদের কাছে এটিই বড় ব্যবধানে হার টাইগারদের। প্রথম ওয়ানডে বৃষ্টি আইনে ১৭ রানে হেরেছিলো বাংলাদেশ। এতে এক ম্যাচ বাকী রেখে সিরিজ জয় নিশ্চিতের পাশাপাশি ২-০ ব্যবধানে এগিয়েও গেল আফগানিস্তান।
এর আগে ২০১৬ ও ২০২২ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম দুই দ্বিপাক্ষীক সিরিজ জিতেছিলো বাংলাদেশ। তৃতীয় দ্বিপাক্ষীক সিরিজে আফগানদের কাছে হারতে হলো বাংলাদেশকে। দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরানের জোড়া সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩৩১ রান করে সফরকারী আফগানিস্তান। গুরবাজ ১৪৫ ও ইব্রাহিম ১০০ রান করেন। জবাবে ১৮৯ রানে গুটিয়ে ম্যাচ ও সিরিজ হারে বাংলাদেশ।
এদিন চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস। ব্যাট হাতে শুরু থেকেই রানের প্রতি মনোযোগী ছিলেন আফগানিস্তানের দুই ওপেনার গুরবাজ ও ইব্রাহিম। ৮ ওভারেই দলের রান পঞ্চাশ পার করেন তারা। সাকিবের করা ১৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে চার ও তৃতীয় বলে ছক্কা মেরে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি পুরন করেন গুরবাজ। এজন্য ৪৮ বল খেলেন তিনি। ১৫ ওভার শেষে আফগানদের রান ১শ স্পর্শ করে।
২২তম ওভারের প্রথম বলে ১৪২ রান স্পর্শ করে আফগানিস্তানের পক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন গুরবাজ ও ইব্রাহিম। ঐ ওভারেই সফরকারীদের স্কোর দেড়শ স্পর্শ করে। ২৮তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলেন ১০০ বল খেলা গুরবাজ। বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানিস্তানের হওয়া দু’টি সেঞ্চুরিরই মালিক হন গুরবাজ। গেল বছরের সিরিজে চট্টগ্রামে অপরাজিত ১০৬ রান করেছিলেন তিনি।
গুরবাজ যখন সেঞ্চুরি করেন তখন অন্যপ্রান্তে ৪৬ রানে ছিলেন ইব্রাহিম। পরের ওভারে ওয়ানডেতে তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন তিনি। ৩২তম ওভারে আফগানিস্তানের ২শতে নেন গুরবাজ ও জাদরান।
৩৭তম ওভারে দলীয় ২৫৬ রানে গুরবাজকে শিকার করে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন সাকিব। নিজের অষ্টম ওভারে গুরবাজকে লেগ বিফোর আউট করেন সাকিব। আউট হওয়ার আগে ১৩টি চার ও ৮টি ছক্কায় ক্যারিয়ার সেরা ১৪৫ রানের ইনিংস খেলেন গুরবাজ। আফগানিস্তানের পক্ষে যেকোন উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন গুরবাজ-ইব্রাহিম।
গুরবাজকে শিকার করে ঘরের মাঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন ফরম্যাটে ৪শ উইকেট পূর্ণ করেন সাকিব।
এরপর পরপর দুই ওভারে রহমত শাহকে এবাদত হোসেন এবং অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শাহিদিকে থামান মেহেদি হাসান মিরাজ। রহমত-শাহিদি ২ করে রান করেন।
দলীয় রান ৩শ পার করার আগে আরও ২ উইকেট হারায় আফগানিস্তান। নাজিবুল্লাহ জাদরানকে ১০ রানে শিকার করেন মিরাজ। ৪৬তম ওভারের প্রথম বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৩তম ম্যাচে চতুর্থ সেঞ্চুরি পুরন করেন ইব্রাহিম। এজন্য ১১৭ বল খেলেন তিনি। গুরবাজের পর বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা দ্বিতীয় খেলোয়াড় হন ইব্রাহিম। ঐ ওভারের তৃতীয় বলে মুস্তাফিজের শিকার হন ১১৯ বল খেলে ৯টি চার ও ১টি ছক্কায় ১০০ রান করা ইব্রাহিম।
দলীয় ২৯৯ রানে পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে ইব্রাহিম ফেরার পর আফগানিস্তানের লোয়ার-অর্ডার ব্যাটারদের দ্রুত রান তুলতে দেয়নি বাংলাদেশের বোলাররা। শেষ ৪ ওভারে ৪ উইকেটের বিনিময়ে ২৭ রান তুলতে পারে আফগানিস্তান। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩৩১ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে সফরকারীরা। ১৫ বলে ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন মোহাম্মদ নবি। বাংলাদেশের মুস্তাফিজ-হাসান-সাকিব-মিরাজ ২টি করে উইকেট নেন। ১টি উইকেট শিকার করেন এবাদত।
সিরিজে সমতা আনতে ৩৩২ রানের বিশাল টার্গেট পায় বাংলাদেশ। সর্বোচ্চ ৩২২ রান তাড়া করে ম্যাচ জয়ের রেকর্ড আছে টাইগারদের। জবাব দিতে নেমে মোহাম্মদ নাইমকে নিয়ে ৪ ওভারে ১৫ রান তুলেন লিটন। পঞ্চম ওভারে পেসার ফারুকির বলে নবিকে ক্যাচ দিয়ে থামেন ৩টি চারে ১৫ বলে ১৩ রান করা টাইগার অধিনায়ক লিটন।
লিটন ফেরার পরের ওভারেই স্পিনার মুজির উর রহমানের বলে বোল্ড হন নাজমুল হোসেন শান্ত। ৫ বলে ১ রান করেন ইনফর্ম শান্ত।
শান্তর পর উইকেট পতনের খাতায় নাম তোলেন দুই বছরেরও বেশি সময় পর খেলতে নামা নাইম। ফারুকির বলে বোল্ড হবার আগে টেস্ট মেজাজে খেলে ২১ বলে ৯ রান করেন তিনি।
২৫ রানে ৩ উইকেট পতনের পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন তাওহিদ হৃদয় ও সাকিব। ভালোভাবেই এগোচ্ছিলেন তারা। কিন্তু ১৭তম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসেই গুগলিতে হৃদয়কে বোল্ড করেন স্পিনার রশিদ খান। ৩৪ বলে ১৬ রান করেন হৃদয়। সাকিবের সাথে ৫০ বলে ৪০ রানের জুটি গড়েন তিনি।
হৃদয় ফেরার পরই বিদায় নেন সাকিব। নবির বলে ফ্লিক করার চেষ্টায় মিস টাইমিং হলে বল সাকিবের পায়ে আঘাত হানে। আফগানিস্তানের আবেদনে লেগ-বিফোর আউট হন সাকিব। রিভিউ নিয়েও নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি ২৯ বলে ২৫ রান করা সাকিব।
সাকিবের বিদায়ে উইকেটে আসেন আফিফ হোসেন। ১ বল খেলে রশিদের ডেলিভারিতে স্লিপে নবিকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন আফিফ। এতে ১৯তম ওভারে ৭২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে কোনঠাসা হয়ে পড়ে বাংলাদেশ।
এ অবস্থায় বাংলাদেশকে খেলায় ফেরাতে লড়াই শুরু করেন মুশফিকুর রহিম ও মিরাজ। সাবধানে খেলে ২৫তম ওভারে দলের রান ১শতে নেন মুশফিক ও মিরাজ। ২৯তম ওভারে মুজিবের বলে মিরাজকে লেগ বিফোর আউট দেন নন-স্ট্রাইকের আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে উইকেটে টিকে যান মিরাজ।
পরের ওভারে জুটিতে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মুশফিক ও মিরাজ। ৬২ বল খেলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৫তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন মুশফিক। তার অর্ধশতকের পর মুজিবের বলে লং অনে রহমতকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ৪৮ বলে ২৫ রান করা মিরাজ। ১০৮ বলে জুটিতে ৮৭ রান করেন মুশফিক-মিরাজ।
মিরাজের পর ৪ রান করা হাসানকেও নিজের শিকার বানান মুজিব। ৪৪তম ওভারে ফারুকির বলে নবম ব্যাটার হিসেবে মুশফিক থামলে ১৮৯ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। ইনজুরির কারনে শেষ ব্যাটার এবাদত ব্যাট করতে পারেননি। ৬টি চারে ৮৫ বলে সর্বোচ্চ ৬৯ রান করেন মুশফিক। আফগানিস্তানের ফারুকি-মুজিব ৩টি করে উইকেট নেন।
একই ভেন্যুতে আগামী ১১ জুুলাই অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে।