ঝালকাঠি প্রতিনিধি : ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে নোঙর করে থাকা ‘সাগর নন্দিনী-২’ নামের তেলবাহী জাহাজে দ্বিতীয় দফায় বিস্ফোরণে লাগা আগুন প্রায় ১২ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
মঙ্গলবার (৪ জুলাই) ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক ফিরোজ কুতুবী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে একই দিন ভোর সাড়ে ৫টার কিছু সময় পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ফিরোজ কুতুবী বলেন, জাহাজটিতে আর কোনো তেল অবশিষ্ট নেই। সব পুড়ে আজ ভোর সাড়ে ৫টার পর আগুন নিভে যায়। আমরা গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে যৌথভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কাজ করি। অগ্নিনির্বাপণে বরিশাল বিভাগে মজুত থাকা সব ফোম ব্যবহারের পর খুলনা থেকেও ফোম নিয়ে আসা হয়। কিন্তু সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। তেল পুড়ে নিঃশেষ হয়ে অবশেষে আগুন নিভেছে। আমাদের উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অসচেতনতা থেকে বারবার এমন ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের জাহাজগুলোতে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা যথাযথ থাকছে না। বিস্ফোরিত জাহাজের তেল থেকে এখন আর দুর্ঘটনার সম্ভাবনা নেই বলেও জানান তিনি।
এদিকে একইস্থানে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে কাস্টগার্ড দক্ষিণ জোন অপারেশন কর্মকর্তা লে. শাফায়েত হোসেন জানান, জাহাজে থাকা তেল ছড়িয়ে পড়েছে নদীতে। তেল ছড়িয়ে পড়া রোধে অত্যাধুনিক তেল অপসারণকারী ল্যামোর সংযুক্ত বোট দিয়ে কাজ শুরু করছে কোস্ট গার্ড।
প্রসঙ্গত, শনিবার (১ জুলাই) সুগন্ধা নদীতে নোঙর করা সাগর নন্দিনী-২ জাহাজের ইঞ্জিনরুমে বিস্ফোরণে চারজন নিহত ও পাঁচজন দগ্ধ হন। সেই উদ্ধার অভিযান শেষ করে তেল অপসারণের সময় গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় আবারও বিস্ফোরিত হয়। এতে ১২ জন পুলিশ সদস্যসহ মোট ১৪ জন দগ্ধ হয়েছেন। দুই দফায় বিস্ফোরণে এই জাহাজে ১৯ জন দগ্ধ এবং চারজন নিহত হন।
দ্বিতীয় দফায় বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে সাবমার্সিবল পাম্প বিস্ফোরণ।
দ্বিতীয় দফায় বিস্ফোরণে আহতরা হলেন- কনস্টেবল শওকত, দ্বীপ, পলাশ মোল্লা, মেহেদী, নকীব, সাইফুল, লিপন গাইন, এএসআই গণেশ, এসআই আব্দুল হাকিম, নায়েক সিদ্দিক, এসআই মোস্তফা কামাল, এটিএসআই হেলাল উদ্দিন, জাহাজের কর্মচারী শরীফ এবং কাইয়ুম। এর মধ্যে দুইজনকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন এবং ১১ জন ঝালকাঠি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আর প্রথম দফায় (১ জুলাই) বিস্ফোরণে নিহতরা হলেন- জাহাজের গ্রিজারম্যান আব্দুস সালাম হৃদয়, মাস্টার ইনচার্জ রুহুল আমীন খান, সুপারভাইজার মাসুদুর রহমান বেলাল এবং ড্রাইভার সারোয়ার হোসেন। ওই দিনের ঘটনায় আরও পাঁচজন আহত হন।
উল্লেখ্য, সাগর নন্দিনী-২ জাহাজটি ২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে তেল নিয়ে চাঁদপুরে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ডিপোতে যাওয়ার পথে ভোলার তুলাতুলি কাঠিরমাথা এলাকায় ডুবে গিয়েছিল। এছাড়া ২০২১ সালের ১২ নভেম্বর সুগন্ধা নদীর একই স্থানে একই কোম্পানির সাগর নন্দিনী-৩ জাহাজটিতেও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই বিস্ফোরণে পাঁচজন নিহত হয়েছিলেন।