ধর্ম ডেস্ক : ইসলামের মৌলিক পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হচ্ছে হজ। ‘হজ’ অর্থ—কোনো মহৎ কাজের ইচ্ছা করা। হজের নিয়তসহ ইহরাম পরিধান করে নির্দিষ্ট দিনে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা এবং পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ করাকে হজ বলে।
পবিত্র এই দিনে মহান আল্লাহর কাছে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়ে পাপমুক্তির আকুল কামনায় লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হন। এরপর সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাঁরা আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করেন।
মূলত হজ মুসলমানের জন্য একটি ফরজ ইবাদত। এটিকে মিশ্র ইবাদতও বলা হয়। কেননা এতে শারীরিক শক্তি ও অর্থ ব্যয়—দুটিরই প্রয়োজন। ইসলামে হজের অনেক গুরুত্ব রয়েছে।
সদ্য ভূমিষ্ঠ নবজাতকের মতো নিষ্পাপ করে দেয়া ইবাদত হলো হজ। যার বিনিময় শুধুই জান্নাত। হজ মৌসুমে ৫ দিনে ৫ জায়গায় ১২টি কাজ সম্পন্ন করাই হজ। সেগুলো কী এবার জেনে নেয়া যাক।
হজের ৫ দিন হলো-
জিলহজ মাসের ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ তারিখ।
হজের পাঁচ জায়গা হলো-
১. মিনা
২. আরাফা
৩. মুজদালিফা
৪. জামারাত ও
৫. বাইতুল্লাহ।
হজের ১২ কাজ
হজ ইসলামের পঞ্চম রোকন। শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্যবানদের জন্য জীবনে একবার হজ করা ফরজ। হজের রয়েছে ১২টি কাজ। যার ৩টি ফরজ এবং বাকিগুলো ওয়াজিব কাজ। তাহলো-
হজের ফরজ-
হজ পালনে তিনটি কাজ করা ফরজ। যা না করলে হজ হবে না। যার কোনো কাফফারা নেই। হজের তিন ফরজের কোনোটি বাদ পড়লে পরবর্তী বছর আবার হজ করতে হবে। হজের ফরজগুলো হলো-
১. ইহরাম বাঁধা
ইহরাম বাঁধা অর্থাৎ হজের নিয়তে মিকাত (নির্দিষ্ট স্থান) থেকে সেলাইবিহীন দুই টুকরো কাপড় পরা।
২. আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়া
হাদিসের পরিভাষায় ‘আলহাজ্জু আরাফাহ’ আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়াই হজ। জিলহজের ৯ তারিখে সূর্যাস্তের আগের এক মুহূর্তের জন্য হলেও আরাফার ময়দানে অবস্থান করা। সূর্যাস্তের পর আরাফার ময়দান ত্যাগ করা।
৩. তাওয়াফে জিয়ারাহ করা
আর ১০ জিলহজ কোরবানি ও মাথা মুণ্ডনের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত যে কোনো সময়ে পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ করাই হলো তাওয়াফে জিয়ারাহ। এটি ফরজ।
হজের ওয়াজিব-
হজ পালনে অনেকগুলো কাজ করা ওয়াজিব। যার কোনোটি বাদ পড়লে দম বা কোরবানি দিতে হয়। হজের ওয়াজিবগুলো হলো-
১. মিকাত থেকে ইহরাম বাঁধা
হজের উদ্দেশ্যে মিকাত (ইহরামের নির্দিষ্ট স্থান) ত্যাগ করার আগেই ইহরাম বাঁধা।
২. আরাফার ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান
সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতেরর ময়দানে অবস্থান (ওকুফ) করা।
৩. কোরবানি করা
ক্বিরান বা তামাত্তু হজ আদায়কারীর জন্য কোরবানি আদায় করা এবং তা কংকর নিক্ষেপ ও মাথা মুণ্ডন করার মর্ধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে সম্পাদন করা।
৪. সাঈ করা
সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে সাঈ করা। সাফা পাহাড় থেকে সাঈ শুরু করা।
৫. মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে অবস্থান (ওকুফ) করা।
৬. তাওয়াফে জিয়ারাত আইয়্যামে নহরের (দিনের বেলায়) মধ্যে সম্পাদন করা।
৭. জামরায় শয়তানকে কংকর নিক্ষেপ করা।
৮. মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাঁটা। তবে মাথা মুণ্ডনের আগে কংকর নিক্ষেপ করা।
৯. মিকাতের বাইরের লোকদের জন্য তাওয়াফে সদর বা বিদায়ী তাওয়াফ করা।
হজরত ইবরাহিম (আ.) কাবাঘরের পুনর্নির্মাণ সমাপ্ত করে আল্লাহ তাআলার নির্দেশে হজের ঘোষণা দেন। তাঁর এ ঘোষণা তখন পৃথিবীতে বিদ্যমান ও কিয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী সব মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়।
কিয়ামত পর্যন্ত যাঁরা হজ করবেন, তাঁরা সেদিন ইবরাহিম (আ.)-এর ওই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বলেছিলেন, ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির: ৩/২৬০)।
হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গুনাহর কাজ থেকে বেঁচে থাকে, সে নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। আর প্রকৃত হজের পুরস্কার জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুই নয়।’ (বুখারি: ১/২০৬)।
মূল কথা হলো- হজের মৌসুমে ৫ দিনে ৫ জায়গায় ১২টি কাজ করার মাধ্যমে হজ সম্পন্ন করতে হয়। উল্লেখিত সিরিয়াল মতো কাজগুলো ঠিকঠাক থাকলে হজ সম্পূর্ণ হবে। ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা সব হাজিকে হজের নির্ধারিত দিনে নির্ধারিত জায়গায় নির্ধারিত কাজগুলো আদায় করার মাধ্যমে হজ সম্পাদন কার তাওফিক দান করুন। সব হাজির হজ কবুল করুন। আমিন।