নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার দেশের কর্পোরেট সেক্টরে কর্পোরেট শৃঙ্খলা ও সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য সর্বোচ্চ জোর দিচ্ছে। আপনারা ভাল-ভাল ছাত্রদের সিএস পেশায় আসার ব্যবস্থা করেন। আইসিএসবিতে দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন সদস্য সংখ্যা আরো বেশি হলে আমরা আরও কাজের সুযোগ দিতো পারবো।
রোববার (১৪ মে) রাতে ঢাকা ক্লাবে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি) আয়োজিত “অর্গানাইজেশনাল সাসটেইনেবিলিটি: রোল অব কোম্পানি সেক্রেটারী” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, কর্পোরেট গভর্ন্যান্সের উন্নতির জন্য কোম্পানিগুলোর অভ্যন্তরীণ ব্যক্তি হিসেবে তাদের কোম্পানি সেক্রেটারি-এর ভূমিকাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কোম্পানিকে টেকসই করতে কোম্পানি সেক্রেটারিদের ভূমিকা অনিবার্য।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এম আনিস উদ দৌলা, সভাপতি, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি)।
হোসেন সাদাত এফসিএস, সিনিয়র ডিরেক্টর, কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স, গ্রামীণ ফোন লিমিটেড “অর্গানাইজেশনাল সাসটেইনেবিলিটি: রোল অব কোম্পানি সেক্রেটারী” শীর্ষক একটি মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ এফসিএস, প্রেসিডেন্ট আইসিএসবি। এম নুরুল আলম এফসিএস সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, আইসিএসবি এবং চেয়ারম্যান, সেমিনার ও কনফারেন্স সাব কমিটি অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন এবং অধিবেশন পরিচালনা করেন।
ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ এফসিএস তার স্বাগত বক্তব্যে সকলকে আইসিএসবির সেমিনার-এ যোগদানের জন্য ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, এই ধরনের সেমিনারের মাধ্যমে বিভিন্ন কর্পোরেট হাউসের মানব সম্পদ প্রফেশনালরা প্রাতিষ্ঠানিক স্থায়িত্বে চার্টার্ড সেক্রেটারিদের ভূমিকা সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারবেন। কোম্পানি সেক্রেটারিগণ কর্পোরেট সাসটেইনেবিলিটি এবং সুশাসনের ধারাবাহিকতা সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী এবং কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বিশ্বব্যাপী কোম্পানি সেক্রেটারিকে একটি কোম্পানির চীফ গভর্নেন্স অফিসারও বলা হয়।
মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপক হোসেন সাদাত এফসিএস প্রাতিষ্ঠানিক সাসটেইনেবিলিটির জন্য কোম্পানি সেক্রেটারিদের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন যে, এই ভিইউসিএ (VUCA) পরিবেশে, প্রাতিষ্ঠানিক সাসটেইনেবিলিটি একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের বিষয়। কোম্পানি সেক্রেটারিগণ প্রাতিষ্ঠানিক দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক আচরণ নিশ্চিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন।
বিশেষ অতিথি এম আনিস উদ দৌলা এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সেমিনার আয়োজনের জন্য আইসিএসবিকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন যে, চার্টার্ড সেক্রেটারিগণ কর্পোরেট সেক্টরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যারা বাংলাদেশের উন্নতির জন্য প্রভাবক ও সহায়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন যে, চার্টার্ড সেক্রেটারিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার কারনে, কোম্পানিসমূহ প্রযুক্তিগত এবং আর্থিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
আইসিএসবি-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এম নুরুল আলম এফসিএস বলেন, উপস্থিত বক্তাগণ অত্যন্ত সুচিন্তিত আলোচনা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে কোম্পানির সেক্রেটারিগণ একটি প্রাতিষ্ঠানিক সাসটেইনেবিলিটি নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একজন চার্টার্ড সেক্রেটারি বোর্ডের সিদ্ধান্ত সমূহের বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে বোর্ডকে অবহিত করেন ও বৈঠকের পূর্বে প্রয়োজনীয় নথি প্রস্তুত করেন এবং এজেন্ডা সংক্রান্ত ইস্যুতে পরিচালকগনের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি যোগাযোগের কেন্দ্র হিসাবে শেয়ারহোল্ডারদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। তার অন্যতম ভূমিকা হল বোর্ড এবংব্যবস্থাপনাকর্তৃপক্ষের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করা।
এই সেমিনারে মোহাম্মদ আলমগীর, সিনিয়র ডিরেক্টর, হিউম্যান রিসোর্স, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড, মোহাম্মদ ফেরদৌস ইউসুফ, চিফ হিউম্যান রিসোর্সেস অফিসার, বিকাশ লিমিটেড, মনজুরুল আলম, হেড অব হিউম্যান রিসোর্স, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড এবং মো.আসাদুর রহমান এফসিএস, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার ও হেড অব এইচআর অ্যান্ড কোম্পানি সেক্রেটারি, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড প্যানেল আলোচক হিসেবে উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
তারা বলেন যে, কোম্পানি সেক্রেটারিগণ কর্পোরেট সেক্টরের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় সহায়তাকারী একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
কোম্পানি সেক্রেটারি হলেন কোম্পানির কমপ্লায়েন্স অফিসার, যিনি একটি কোম্পানির অন্যান্য বিভাগীয় প্রধানদের সাথে যোগাযোগসমন্বয় সাধন করে থাকেন। কোম্পানি সেক্রেটারিগণ ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে পরামর্শের প্রাথমিক উৎস হিসেবে কাজ করেন। এছাড়াও তিনি আইনী পরামর্শক, আর্থিক পরামর্শক, উন্নয়ন কৌশলপরামর্শক হিসেবে কর্পোরেট সমূহের নানামুখী উন্নয়ন পরিকল্পনার বাস্তবায়নে কাজ করেন। একজন কোম্পানি সেক্রেটারি তার কোম্পানির ব্র্যান্ড ইমেজ বাড়ান, বিভিন্ন আইনি সমস্যা থেকে কোম্পানিকে রক্ষা করেনএবং বোর্ডকে দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ প্রফেশনাল, আইসিএসবি-এর সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
পরিশেষে অলি কামাল এফসিএস, কাউন্সিলসদস্য ও নির্বাহী কমিটির সদস্য সকল অংশগ্রহণকারী ও উপস্থিত সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে অধিবেশন শেষ করেন।