মাহমুদুন্নবী জ্যোতি: মো: সাহিনুর কবির কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত দেবিদ্বার থানাধীন বারুর গ্রামে ২০ মে, ১৯৭৯ সালে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর বাবার নাম আলহাজ্ব মো: বাবর আলী সরকার ও মাতার নাম আনোয়ারা বেগম। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সাহিনুর কবির প্রথম।
সাহিনুর কবির ১৯৯৪ সালে চর বাকর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, দেবিদ্বার এস এ সরকারি কলেজ থেকে ১৯৯৬ সালে এইচএসসি এবং ১৯৯৮ সালে বি.কম পাস করেন। এরপর ২০০০ সালে জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় থেকে এ্যাকাউন্টিং বিষয়ে এম.কম ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে মেসার্স রহমান মোস্তফা আলম এন্ড কোং চাটার্ড এ্যাকাউন্টেটস ফার্ম থেকে সিএ কোর্স সম্পন্ন করেন। ২০০৮ সালে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড হতে আইটিপি সনদ এবং ২০১৭ সালে চাটার্ড সেক্রেটারি ডিগ্রী অর্জন করেন।
তিনি ২০০৭ সালে ১১ই মার্চ আছমা আক্তার (মুন্নী) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কবির-মুন্নী দম্পতির ঘরে দুই ছেলে মো: সাদ বিন কবির (আদ্রিক) এবং মো: সাজিদ বিন কবির (আরাফ)।
আইসিএসবি’র ৭ম কনভোকেশনে সিএস ডিগ্রী অর্জনকারী কৃতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে কর্পোরেট সংবাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদনে আমাদের আজকের অতিথি মো: সাহিনুর কবির।
কর্পোরেট সংবাদ: ক্যারিয়ারের শুরুর কথা জানতে চাই।
মো: সাহিনুর কবির: আমার কর্মজীবন শুরু হয় ২০০৫ সালে ঢাকা-বেইজিং ডাইং এন্ড উইভিং ইন্ড্রা: লিমিটেড এ সহকারি ম্যানেজার (হিসাব) পদে যোগদানের মধ্য দিয়ে। ২০০৭ সালে একই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার (হিসাব ও অর্থ) হিসাবে পদন্নোতি লাভ করি। অত:পর ২০০৮ সালে সায়হাম কটন মিলস্ লি: এ জ্যেষ্ঠ ম্যানেজার (অর্থ) হিসাবে যোগ দান করি। নিজের কর্ম দক্ষতা ও আন্তরিকতার কারণে পরবর্তিতে সায়হাম গ্রুপের সকল প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করি। বর্তমানে সায়হাম গ্রুপের হেড অফ একাউন্টস্ এন্ড ফিন্যান্স ও কোম্পানি সেক্রেটারি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি।
কর্পোরেট সংবাদ: সায়হাম গ্রুপের কোম্পানি সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় চার্টার্ড সেক্রেটারি ডিগ্রি অর্জন করলেন, উদ্দেশ্যটা বলবেন কী?
সাহিনুর কবির: যেহেতু আমি পুর্বে থেকে কোম্পানি সেক্রেটারি হিসাবে দায়িত্বরত আছি, সে কারণে সিএস ডিগ্রিটা নেয়া। সিএস একটি প্রফেশনাল ডিগ্রি এবং এই ডিগ্রিটা আমার পেশার সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। আগে থেকে আমার কমপ্লায়েন্স নিয়ে কাজ করার আগ্রহটা একটু বেশি। সেই আগ্রহটা শুরু হয়েছে সায়হাম গ্রুপের আইপিও এবং রাইট শেয়ার এর কমপ্লায়েন্স অফিসার হিসাবে কাজ করার সুবাদে।
কর্পোরেট সংবাদ: আইসিএসবি থেকে প্রাপ্ত সনদ আপনার বর্তমান কর্মস্থলে কোন ইতিবাচক প্রভাব পড়বে কি? সেক্ষেত্রে কীভাবে পড়বে বলে আপনি মনে করেন?
সাহিনুর কবির: অবশ্যই আইসিএসবি থেকে প্রাপ্ত সনদ বর্তমান কর্মস্থলে প্রভাব পড়বে, কারণ এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিতে সক্ষম হয়েছি। যেহেতু আমি পাবলিক লিস্টিং কোম্পানিতে কর্মরত আছি, সেদিক থেকে আমাকে বিভিন্ন কমপ্লায়েন্স কমপ্লিট করতে হয়। এটা সত্যিই যে নতুন কর্পোরেট গর্ভনেন্স কোড জারির করার পর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আগের তুলনায় অত্যন্ত সক্রিয় হয়েছে। সর্বোপরি এই প্রফেশনাল সার্টিফিকেট পাওয়ার পর নিজের আত্ববিশ^াস এবং কাজের দক্ষতা আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
কর্পোরেট সংবাদ: আইসিএসবিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় কোন বিষয়টিতে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন এবং কেন?
সাহিনুর কবির: আমি যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি সেটা হল, কীভাবে নিজেকে প্রফেশনাল হিসাবে তৈরি করা যায়, যা বর্তমান সময়ের সাথে যথোপযুক্ত। আমি মনে করি নিয়মিত ক্লাসের মাধ্যমে সেটা অর্জন করা সম্ভব। সর্বোপরি যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল, যারা ক্লাস নিয়েছেন তারা প্রতিটি বিষয়ের সাথে বাস্তবত জ্ঞান সম্পন্ন, যা আমাকে বর্তমান সময়ের সাথে এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছে।
কর্পোরেট সংবাদ: কর্পোরেট সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আইসিএসবি’র ভূমিকা আপনি কীভাবে মুল্যায়ন করবেন?
সাহিনুর কবির: আইসিএসবি বাংলাদেশের বর্তমানে একমাত্র প্রতিষ্ঠান যারা কর্পোরেট সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যার ফলশ্রতিতে কর্পোরেট হাউসগুলো আগের তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয় হয়েছে- বর্তমানে যা দৃশ্যমান।
আইসিএসবি’র মুল লক্ষ্য হল দক্ষ চাটার্ড সেক্রেটারি তৈরি করা, যাতে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। তারই ফলশ্রতিতে দেশ ও জাতি উপকৃত হচ্ছে।
কর্পোরেট সংবাদ: আইসিএসবি’র কোন দিকটাকে সবচেয়ে সফল বলে আপনি মনে করেন? দুর্বল কোন দিক থাকলে সেটি কি?
সাহিনুর কবির: আইসিএসবি’র দুর্বলতার তুলনায় সফলতার দিকটাই সবচেয়ে বেশি বলে আমি মনে করি, কারণ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য আইসিএসবি’র কোন বিকল্প প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে নেই। এটা একমাত্র প্রতিষ্ঠান যা জাতীয় সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত প্রফেশনাল প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের সুনাম দেশ ও বিদেশে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কর্পোরেট সংবাদ: সিএস কোর্স করার সময় আইসিএসবি থেকে কোন প্রকার তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন কী?
সাহিনুর কবির: আইসিএসবি এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে তিক্ত অভিজ্ঞতা পাওয়ার কোন প্রশ্নই আসেনা। কারণ, যখন সিএস কোর্স করি তখন এই কোর্সটিকে আমি অত্যন্ত আনন্দের সাথে গ্রহন করি।
কর্পোরেট সংবাদ: আইসিএসবি’র সিলেবাস নিয়ে আপনি কী পুরোপুরি সন্তুষ্ট?
সাহিনুর কবির: আমি মনে করি আমাদের আইসিএসবি’র বর্তমান যে সিলেবাস তা অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানের। তবে ক্ষেত্র বিশেষে কিছু কিছু বিষয় পরিবর্তন করা যেতে পারে, যা আইসিএসবি’র মুল উদ্দ্যেশ্যের সাথে বাস্তবে কোন মিল নেই। বিষয় ভিক্তিক যে সময় সিলেবাসে বেধে দেওয়া হয়েছে তা আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
কর্পোরেট সংবাদ: আপনার কাছে কী মনে হয় আইসিএসবি’র সিলেবাস পরিবর্তন করা প্রয়োজন আছে?
সাহিনুর কবির: আমার মনে হয় আইসিএসবি’র বর্তমান যে সিলেবাস তা পরিবর্তন করার খুব একটা প্রয়োজন নেই। তবে যেহেতু বিশ্ব পরিবর্তনশীল, সেই কারণে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে যদি প্রয়োজন হয় তা পরিবর্তন করা যেতে পারে।
কর্পোরেট সংবাদ: আগামী প্রজন্ম কেন আইসিএসবিতে পড়বে, এ বিষয়ে আপনার উপদেশ জানতে চাই।
সাহিনুর কবির: আমি মনে করি চাটার্ড সেক্রেটারি প্রফেশনালদের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ হোক, কাল হোক সকল কর্পোরেট হাউসগুলো কর্পোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তা না হলে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে। সে কারণে এ ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য চাটার্ড সেক্রেটারি প্রফেশনালদের কোন বিকল্প নেই।
কর্পোরেট সংবাদ: আপনার প্রিয় খেলা ক্রিকেট, খেলোয়ার হিসেবে কোন অভিজ্ঞতা আছে কি? প্রিয় দল ও প্রিয় খেলোয়ার।
সাহিনুর কবির: আমারপ্রিয় খেলা ক্রিকেট, তবে ক্রিকেট খেলার তেমন কোন সুযোগ সৃষ্টি হয়নি।আমার প্রিয় দল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আমার প্রিয় খেলোয়ার তামিম ইকবাল।
কর্পোরেট সংবাদ: ভবিষ্যত পরিকল্পনা?
সাহিনুর কবির: আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা হলো কর্পোরেট সুশাসন নিয়ে কাজ করা। সেই লক্ষে এগিয়ে যাচ্ছি।
কর্পোরেট সংবাদ: আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
সাহিনুর কবির: আপনাকে ও কর্পোরেট সংবাদের অগণিত পাঠকের প্রতি রইল নির্মল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।