মাহমুদুন্নবী জ্যোতি: নূরুল হাসনাত জিলানী। ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের সিস্টার কনসার্ন এমএসএ স্পিনিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপকের পাশাপাশি কর্পোরেট সেক্রেটারিয়েটের দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯৬ সালে যোগ দেন এই প্রতিষ্ঠানে। কাজ করেছেন হিসাব ব্যবস্থাপক ও বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক হিসেবে। সম্প্রতি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি) এর ৭ম সমাবর্তনে যে ৯১ জন কৃতি শিক্ষার্থী চার্টার্ড সেক্রেটারিজ (সিএস) প্রফেশনের সার্টিফিকেট অর্জন করেছেন, তিনি তাঁদেরই একজন।
কিন্তু আমি যে জিলানী (জিলান) কে চিনি, তিনি একজন জনপ্রিয় সংবাদ পাঠক। ১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে নিয়মিত সংবাদ পাঠ করছেন। বাংলাদেশ বেতারের সাথে যুক্ত হয়েছেন তারও আগে। অর্থাৎ ১৯৮৭ সাল থেকে তিনি কণ্ঠের যাদুতে কমেন্ট্রি এবং নাট্যাভিনেতা হিসেবে কাজ করছেন বাংলাদেশ বেতারে। অসংখ্য বিজ্ঞাপনে কণ্ঠ দিয়ে পেয়েছেন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা। এছাড়া তিনি একজন সফল মঞ্চ নাট্যাভিনেতা। নাগরিক নাট্যাঙ্গনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। যেখানে যুক্ত ছিলেন ড. এনামুল হক, লাকী ইনাম সহ মিডিয়ার অনেক তারকা ব্যক্তিত্ব। খুব ভালো আবৃত্তিকার হিসেবে যোগ দেন ‘আবৃত্তি সংঘ’ এ। হাসান ইমামের নেতৃত্বে গড়ে উঠা সংগঠনটির সদস্য ছিলেন গোলাম মোস্তফা, কাজী আরিফ, প্রজ্ঞা লাবনী, কাজী মদিনা, আশফাকুর রহমান, রূপ চক্রবর্তীর মতো আবৃত্তিকার। যে ব্যক্তির দৃপ্ত পদচারণায় মুখর মিডিয়া জগত, সে কিনা নাম লেখালেন সিএস প্রফেশনে। কিন্তু কেন? তারই উত্তর খুঁজতে মুখোমুখি হয়েছিলাম নূরুল হাসনাত জিলানীর।
মিডিয়ার পরিচিত মুখ সিএস প্রফেশনে আসার কারণ জিজ্ঞেস করতেই, সহাস্যে বললেন, আমার ইচ্ছে কর্পোরেট সেক্টরে অবদান রাখা। আর সেজন্য প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। মূলত সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই আমার সিএস প্রফেশনে আসা। আমার বিশ্বাস আইসিএসবি থেকে লব্ধ জ্ঞান আমার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় কাজ লাগাতে পারবো।
আলাপকালে আইসিএসবি’র ভূয়শী প্রশংসা করে জিলানী বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে আইসিএসবি’র ভূমিকা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। সিএস প্রফেশনের ব্যক্তিরা দেশের কর্পোরেট সেক্টরে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। তাঁদের সুদক্ষ ব্যবস্থাপনায় কোম্পানিগুলো পরিচালিত হচ্ছে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসারে। এর ফলে পূঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সুরক্ষা পাচ্ছেন, পাশাপাশি দেশের রাজস্ব আদায়ে ভূমিকা রাখছেন উল্লেখযোগ্য হারে।
আইসিএসবি’র সিলেবাস ও শিক্ষা ব্যবস্থা বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জিলানী বলেন, আইসিএসবি সিলেবাস অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং উন্নতমানের। সংশ্লিষ্টরা সিলেবাস তৈরিতে যে যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন সেটা প্রমাণিত। তবে অনেক বিষয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষকের স্বল্পতা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। তাঁর মতে, বিষয় অনুযায়ি আরো অভিজ্ঞ শিক্ষক দিয়ে ক্লাশ নেওয়া হলে শিক্ষার্থীরা আরো বেশি উপকৃত হবে।
বর্তমান প্রজন্মকে সিএস প্রফেশনের গুরুত্ব তুলে ধরে জিলানী বলেন, বিশ্বায়নের সাথে সাথে অর্থনৈতিক ক্রমান্নতিতে আমাদের দেশ তথা গোটা পৃথিবী চলে আসবে এক ও অভিন্ন ‘কর্পোরেট নীতি’ নামক ‘ছাতা’র নিচে। স্বভাবতই কর্পোরেট সেক্টর হবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি। আর এই চালিকা শক্তি নিয়ন্ত্রণ করবে সিএস প্রফেশনের সুদক্ষ জনবল। সেজন্যই দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি ভূমিকা রাখতে বর্তমান প্রজন্ম সিএস প্রফেশনকে বেছে নিতে পারে। আর সেক্ষেত্রে আইসিএসবিতে পড়ার পরামর্শ দিলেন নূরুল হাসনাত জিলানী।
মিডিয়া জগতে যাঁর এমন নির্ভিক বিচরণ, জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া, সিএস প্রফেশনে পথ চলা সবেমাত্র শুরু-আগামী স্বপ্ন কী জানতে চাইলে সদা হাস্যোজ্জ্বল জিলানী বলেন, কর্পোরেট সেক্টরে কার্যকরি ভূমিকা রাখাই তাঁর ভবিষ্যত স্বপ্ন। সেলক্ষ্যে তিনি বর্তমানে এলএলবি করছেন।
জীবনে সফলতা পেতে করণীয় কী? জানতে চাইলে জিলানী বললেন, জীবনে সাফল্য পেতে বেশি প্রয়োজন কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান হওয়া। আর তার জন্য প্রয়োজন সৎ নীতি ও আদর্শকে সযত্নে লালন করা।
বহু গুণে গুণান্বিত নূরুল হাসনাত জিলানীর জন্ম ১৯৬৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর কুমিল্লা জেলার কোতয়ালী থানাধীন বিষ্ণুপুরে। পিতা-মতিউর রহমান, মা-সৈয়দা শওকত আরা। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে জিলানী সবার বড়। শিক্ষা জীবনে তিনি ১৯৮২ সালে খিলগাঁও স্কুল থেকে এসএসসি, ১৯৮৪ সালে হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাইন্যান্স বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।
দুই কন্যা সন্তানের জনক নূরুল হাসনাত জিলানীর বর্তমান বাস রাজধানীর বনশ্রীতে।
আরো পড়ুন: সিএস প্রফেশনের সার্টিফিকেট চাকরির প্রতিযোগিতায় প্রার্থীকে এগিয়ে রাখবে: শরিফ দিলনেওয়াজ হোসেন