September 20, 2024 - 2:10 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeকর্পোরেট ভয়েসমোবাইল ফোন আমদানিতে স্বল্প হারের ভ্যাট আরোপ দেশীয় শিল্পকে বাধাগ্রস্ত করবে: আমিনুর...

মোবাইল ফোন আমদানিতে স্বল্প হারের ভ্যাট আরোপ দেশীয় শিল্পকে বাধাগ্রস্ত করবে: আমিনুর রশীদ

spot_img

ডেস্ক রির্পোট: ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল ফোন সংযোজন ও আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যা দেশীয় উৎপাদনকে নিরুৎসাহিত করবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। দেশেই হ্যান্ডসেট উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করা সিম্ফনি মোবাইলের মূল কোম্পানি এডিসন গ্রুপের চেয়ারম্যান আমিনুর রশীদ। সম্প্রতি মোবাইল ফোন সংযোজন ও আমদানির ওপর অতিরিক্ত ভ্যাট আরোপের নেতিবাচক দিক নিয়ে কথা বলেন তিনি। 

প্রশ্ন: সিম্ফনির দেশে হ্যান্ডসেট তৈরির পরিকল্পনা কোন পর্যায়ে রয়েছে?

আমিনুর রশীদ: দেশেই হ্যান্ডসেট তৈরির লক্ষ্যে একযোগে দুটি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাভারের আশুলিয়ায় এরই মধ্যে একটি কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে মেশিনারিজ সেটআপ ও কর্মীও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কারখানাটি থেকে উৎপাদনে যাওয়ার জন্য এখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসির অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। বিটিআরসির অনুমোদন পাওয়ামাত্র উৎপাদনে যেতে পারব। সিম্ফনির এ কারখানা থেকে ফিচার ফোন ও স্মার্টফোন মিলে প্রতি মাসে তিন-পাঁচ লাখ ইউনিট হ্যান্ডসেট উৎপাদনের পরিকল্পনা আছে।

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা দেশে উৎপাদিত ডিভাইস দিয়ে স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রফতানির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। এরই অংশ হিসেবে গাজীপুরের হাইটেক পার্কে সামিট গ্রুপের সঙ্গে মিলিয়ে সিম্ফনির আরো একটি কারখানা স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সিম্ফনির হাইটেক পার্কের কারখানা থেকে এক-দেড় বছরের মধ্যে ডিভাইস উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব হবে। দুই কারখানা থেকে প্রতি মাসে ১০ লাখ ইউনিট হ্যান্ডসেট উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি।

প্রশ্ন: ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল ফোন সংযোজন ও আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

আমিনুর রশীদ: তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এ খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে দেশীয় উৎপাদনকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এ পরিস্থিতিতে মোবাইল ফোন সংযোজন ও আমদানির ওপর অতিরিক্ত ভ্যাট আরোপ দেশীয় উৎপাদনকে নিরুসািহত করবে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকারের আন্তরিকতা ও সময় উপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে সিম্ফনিসহ কয়েকটি আমদানিকারক কোম্পানি দেশেই হ্যান্ডসেট উৎপাদনের জন্য কারখানা স্থাপনে উদ্যোগ নিয়েছে। সিম্ফনির পাশাপাশি আরো কয়েকটি কোম্পানি এরই মধ্যে কারখানা স্থাপন করেছে। সদ্য প্রস্তাবিত বাজেটে দেশে হ্যান্ডসেট সংযোজনের ওপর অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ রীতিমতো অবাক করে দিয়েছে। মোবাইল ফোনের ওপর এ অতিরিক্ত ভ্যাট আরোপ করা হলে আমদানির থেকে দেশে উৎপাদিত ফোনের মূল্য বেশি হবে। সিম্ফনি ছাড়াও স্যামসাং, উই মোবাইল, ট্রানশান হোল্ডিংস লিমিটেড কারখানা করার ঘোষণা দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে কয়েকশ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। সংযোজন বা উৎপাদনের ক্ষেত্রে যদি আমাদের খরচ বেশি হয়, তাহলে কম দামে কী করে পণ্য সরবরাহ করব! আর মোবাইল ফোনের দাম বেড়ে গেলে অসাধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন উপায়ে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন বাজারজাত শুরু করতে পারেন। এমনটা হলে সরকার বড় অংকের রাজস্ব হারাবে।

বাংলাদেশের প্রায় ৯৩ শতাংশ মানুষ মোবাইল ফোন দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। মোবাইল ফোনের সঙ্গে শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনসহ অনেক সেবা জড়িত। এ অবস্থায় যদি মোবাইল ফোন উৎপাদন শিল্পের ওপর অতিরিক্ত ভ্যাট আরোপ করা হয়, তাহলে পুরো শিল্পই হুমকির মুখে পড়বে। দেশে হ্যান্ডসেট উৎপাদনে কাজ শুরু করা সব কোম্পানিই কারখানার কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এসব কারখানার প্রায় এক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানও হুমকির মধ্যে রয়েছে। হ্যান্ডসেটের দাম বাড়লে মানুষের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের আগ্রহ কমবে। সেলফোন অপারেটররা ফোরজি সেবার প্রত্যাশিত সম্প্রসারণেও আগ্রহ হারাবে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ সরকার সেলফোন সেটের পাঁচটি সরঞ্জাম দেশেই উৎপাদনে জোর দিচ্ছে। সেলফোনের প্রয়োজনীয় এসব সরঞ্জাম দেশে উৎপাদন সম্ভব কি?

আমিনুর রশীদ: স্থানীয়ভাবে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও ডিভাইস উৎপাদনের জন্য বাজার অনেক বড় হতে হয়। বাংলাদেশে এখন বার্ষিক মোবাইল ফোনের চাহিদা তিন কোটির মতো। এটা আসলে খুব কম। বিশ্বের দ্বিতীয় মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী দেশ এখন ভারত। কিন্তু ভারতও মোবাইল ফোনের যাবতীয় সরঞ্জাম তৈরি করতে পারছে না। দেশটি এখনো চীন থেকে সরঞ্জাম আমদানি করছে। বাংলাদেশে সবে নিজস্ব হ্যান্ডসেট উৎপাদন শিল্প শুরু হতে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কী করে মোবাইল ফোনের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম তৈরি করা সম্ভব! ভারতে বার্ষিক ৩০ কোটি মোবাইল ফোন উৎপাদন হয়। অথচ আমাদের এখানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা এর ১০ ভাগের ১ ভাগ। বিশ্ববাজারকে হাতে না নিয়ে এ ধরনের উৎপাদনে গেলে আমাদের লাভের তুলনায় লোকসান বেশি হবে। উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজন কোয়ান্টিটি। এখনো সে সময় আসেনি যে, আমরা মোবাইলের সরঞ্জাম উৎপাদনে যাব। প্রতিনিয়ত মোবাইল ফোনের মডেল পরিবর্তন হচ্ছে। স্ক্রিনের আকার অনুযায়ী ব্যাটারির ক্ষমতা নির্ভর করে। দেখা গেল, আগামী দুই মাস যে সেটটির চাহিদা রয়েছে, তা পরে আর থাকছে না। তখন নতুন মডেলের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এক্ষেত্রে দুই মাস পরপর যদি মডেল পরিবর্তন হয়, তাহলে এর আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম উৎপাদনের জন্য দুই মাস পরপর প্রস্তুতি নিতে হবে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে সম্ভব নয়। এছাড়া চার্জার বা অন্য যেসব সরঞ্জামের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোর জন্যও সময় প্রয়োজন। এজন্য দরকার রফতানিতে আরো জোর দেয়া। যখন আমরা আরো বেশি পণ্য উৎপাদনের নিশ্চয়তা পাব, তখন যন্ত্রাংশ উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয়াটা আমি যৌক্তিক বলে মনে করি।

প্রশ্ন: ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আপনাদের আপত্তির জায়গাটা কোথায়?

আমিনুর রশীদ: দেশে হ্যান্ডসেট সংযোজনের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে সিম্ফনির মতো দেশীয় কোম্পানিগুলোর জন্য খুব ভালো হয়। দেশে মোবাইল ফোন আমদানিতে গত অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ শতাংশ, যা কমিয়ে ২ শতাংশ করা হলে হ্যান্ডসেট কোম্পানিগুলোর জন্য ভালো হবে। এটা আমাদের এক ধরনের দাবি বলতে পারেন।

প্রশ্ন: বাজেট প্রস্তাবনার আগে সবসময় রাজস্ব বোর্ডের পক্ষ থেকে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে?

আমিনুর রশীদ: আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে রাজস্ব বোর্ডের কোনো মতবিনিময় হয়নি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ-সংক্রান্ত একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। রাজস্ব-সংক্রান্ত কোনো আইন বা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগের টাস্কফোর্সের মাধ্যমে মতবিনিময় করা হয়। আমাদের এখানেও ঠিক তেমনি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। শুধু মোবাইল ইন্ডাস্ট্রির জন্যই নয়, সবক্ষেত্রেই আমার মনে হয়, এমন টাস্কফোর্স গঠন করা জরুরি; যারা বিশেষজ্ঞ ও উদ্যোক্তা সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে সরকারকে সাহায্য করতে পারবেন।

প্রশ্ন: বাজারে সিম্ফনির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলুন।

আমিনুর রশীদ: সিম্ফনি দেশের বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই নাম্বার ওয়ান ব্র্যান্ডের জায়গা দখলে রেখেছে। দেশে সিম্ফনি হ্যান্ডসেটের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সিম্ফনির বিক্রয়োত্তর সেবার মান নিয়ে কারো কোনো প্রশ্ন নেই। দেশব্যাপী আমাদের নিজস্ব ৮১টি বিক্রয়োত্তর সার্ভিস পয়েন্ট রয়েছে। সিম্ফনির পণ্যে ১২ মাস বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদান করা হয় স্বচ্ছতার সঙ্গে।

সৌজন্যে: বণিক বার্তা

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ