আহসান আলম, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় বিয়েতে না আসায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে কনের বাবাকে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন সেনা সদস্য সেই বর। শুক্রবার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এক সালিশের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দুই লাখ টাকা ধার্য করা হয়।
পরে কনের বাবার হাতে নগদ দুই লাখ টাকা তুলে দেন দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম জাকারিয়া আলম। তবে কনের বাবা প্রাপ্ত টাকা গ্রহণ না করে গ্রামের অসহায় বা দুঃস্থ পরিবারের কোনো বিবাহ উপযুক্ত মেয়ের বিয়েতে দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সেই উদ্দেশে তিনি টাকাগুলো চেয়ারম্যানের কাছে আমানত হিসেবে রেখে দিয়েছেন।
এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি গাভী বিক্রি করে মেয়ের বিয়ের প্রস্তুতি নিলেও বছর পক্ষ না আসায় কনের বিয়ে হয়নি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কনের বাবা। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এরপরই এলাকায় সমালোচনা শুরু হয়। চাকরি বাঁচাতে বর ও বরের পরিবার আপস করতে কনের পরিবারের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।
অভিযুক্ত ছেলে হুসাইন বর্তমানে বরিশাল লেবুখালী সেনানিবাসে কর্মরত আছেন। তিনি চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের ফুলবাড়ী গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী ওমর ফারুকের ছেলে।
কনের মামা সাজ্জাত হোসেন বলেন, দুই পরিবারের দেখাশোনার পরই ছেলে ও তার পরিবারের সিদ্ধান্তে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়। এর দু-দিন আগে ছেলে ও তার পরিবারের সদস্যরা মেয়েকে নাকফুল পরিয়ে বাগদান সম্পন্ন করে গেছেন। কথা পাকাপাকির পর কনের বাবা তার শেষ সম্বল ২টি গাভী বিক্রি করে আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত দিয়ে বিয়ের আয়োজন করেন। মেয়ের সুখের জন্য ছেলের দাবিকৃত এক সেট গয়না কেনেন এবং বরের জন্য একটা পালসার মোটরসাইকেল কেনারও প্রস্তুতি নেন। সমস্ত আয়োজন করে বিয়ের দিন বর পক্ষের অপেক্ষায় ছিল কনের পরিবার। কিন্তু সারাদিন পার হলেও আসেননি বর ও বরপক্ষের কেউ।
পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম জাকারিয়া আলম বলেন, এ ঘটনার দু-দিন পর আমার ব্যক্তিগত চেম্বারে উভয়পক্ষের পরিবারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সালিশ বৈঠক করেন। সালিশে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত কনের বাবার ক্ষতিপূরণ বাবদ বরকে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তাৎক্ষণিক ক্ষতিপূরণের টাকা কনের বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ছেলের বাবা সম্প্রতি বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন। দেশে ফিরেই ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার জন্য মেয়ে খুঁজতে থাকেন। কর্মস্থল থেকে ছেলের বিয়ের অনুমতি না থাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে এটা দুঃখজনক। মেয়ের বাবা ক্ষতিপূরণের টাকা আমানত হিসেবে রেখেছেন। কোনো গরিব পরিবারের মেয়ের বিয়ের জন্য তিনি টাকাটা খরচ করতে চান। এর মাধ্যমে কনের বাবা বিশাল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
কনের ক্ষতিগ্রস্ত বাবা নিজের নাম ঠিকানা গোপন রাখার শর্তে বলেন, ‘আমার মেয়েকে বিয়ে না করায় আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি। আমার মেয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এতে আমার তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। মর্যাদাহানির হিসাব করলে ক্ষতির পরিমাণ অনেক। ওই টাকা দিয়ে আমার ক্ষতি পোষাবে না। তাই আমি ওই টাকা আমার খরচ করতে চাই না।
তিনি আরও বলেন, আমার ইচ্ছা ওই দুই লাখ টাকা আমি গ্রামের একটি পরিবারকে দিতে চাই। যে পরিবারটি খুবই অসহায় বা কন্যা দায়গ্রস্ত। যে পরিবারটি আর্থিক সংকটের কারণে মেয়ের বিয়ে দিতে পারছে না, আমি ওই দুই লাখ টাকা সেই পরিবারের হাতে তুলে দিতে চাই অথবা তার পরিবারের মেয়ের বিয়ের আয়োজনের পেছনে খরচ করতে চাই। এ কারণে টাকা আমানত হিসেবে পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলমের কাছে রেখে দিয়েছি।