নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের অন্তর্ভূক্ত এ্যাপোলো ইস্পাত লিমিটেড। নানা অনিয়ম সাথে কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কোড না মেনেই বাজারে লেনদেন চলমান রেখেছে কোম্পানিটি। বেশ কয়েক বছর ধরেই কোম্পানিটির উৎপাদন এবং অর্থ সংক্রান্ত বিষয়গুলো গোপন করে যাচ্ছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। যার কারনে কোম্পানির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারছেনা বিনিয়োগকারীরা।
আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির নেই কোন কোম্পানি সেক্রেটারি, ওয়েবসাইট থাকলেও, প্রকাশ করছেনা কোন আর্থিক প্রতিবেদন। যদিও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ কিংবা চালু এবং অর্থসংক্রান্ত বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মূল্যসংবেদনশীল তথ্য। সিকিউরিটিজ আইন অনুসারে এ ধরনের তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জ ও শেয়ারহোল্ডারদের জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ এ্যাপোলো ইস্পাত আইপিওর অর্থে বাস্তবায়িত এনওএফ প্রকল্পে উৎপাদন শুরুর বিষয়ে ডিসক্লোজার দিলেও বন্ধের বিষয়ে তথ্য প্রকাশ না করায় কয়েক বছর ধরে কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অন্ধকারে রয়েছেন শেয়ারহোল্ডাররা ।
এদিকে শেয়ারের দাম বেড়েই চলছে কোম্পানিটির। গতকালও দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশ তালিকার ৩য় অবস্থানে ছিলো এ্যাপোলো ইস্পাত। গতকাল কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছিলো ৯.৮৭ শতাংশ এবং ক্লোজিং প্রাইস ছিলো ১০.১০ টাকা। আজকেও কোম্পানিটির শেয়ার দর ১.৯৮ শতাংশ বেড়ে শেয়ার মূল্য দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৩০ পঁয়সায় ।
প্রতিষ্ঠানটির কোম্পানি সেক্রেটারি না থাকায় দর বৃদ্ধির কারন এবং কোম্পানি সংক্রান্ত কোন তথ্য জানা যায়নি। এছাড়া ডিএসইর কোম্পানি প্রোফাইলে দেওয়া নাম্বার গুলোও বন্ধ পাওয়া যায়।
১৯৬০ সালে ট্রেডিং ব্যবসার মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করেন প্রয়াত শিল্পপতি দীন মোহাম্মদ। ফিনিক্স গ্রুপ ও এ্যাপোলো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের অধীনে ডজন খানেক শিল্প ও সেবাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এই শিল্পপতি । তার গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পাঁচটি বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে।
এর মধ্যে এ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেডের ব্যবসায়িক ও আর্থিক অবস্থা বেশ কয়েক বছর ধরেই নাজুক অবস্থানে রয়েছে। ঋণের দায়ে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা মৃতপ্রায়। এ অবস্থায় দীন মোহাম্মদের প্রয়াণের পর তার উত্তরাধিকারীরা দেনা থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজনে কোম্পানিটি বিক্রি করে দেয়ার কথাও ভাবছেন বলে জানা গেছে।
বর্তমানে এ্যাপোলো ইস্পাতের বিভিন্ন খাতে মোট ঋণের পরিমান দাঁড়িয়েছে ৮৪৫ কোটি টাকা। তার মধ্যে ব্যাংক ঋন দাঁড়িয়েছে ৫৫০ কোটি টাকায়। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণ রয়েছে ২৪০ কোটি টাকা। এছাড়া পার্টিদের কাছে ঋণ রয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। কিন্তু এই ঋণ পরিশোধ করতে ব্যার্থ এ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেড।
পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধেরও কোনো উদ্যোগ নেই। দিচ্ছি, দেব বলেই পার করছেন বছরের পর বছর। ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা পথে বসেছেন।
কোম্পানিটির বিভিন্ন কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শোয়েবের অদক্ষতা, যোগ্যদের অপসারণ করে অদক্ষ লোক নিয়োগের কারণে ডুবেছে কোম্পানিটি। নানা কাজে কোম্পানিতে অযাচিত হস্তক্ষেপ করেন ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শোয়েব। তারা আরোও বলেন, ব্যাংকঋণ পরিশোধের কোনো চিন্তা নেই তার এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কয়েক মাস ধরে কোন প্রকার বেতন না দিয়ে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন শোয়েব।
এর আগে কোম্পানিটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) রাজিব হোসেনের বিরুদ্ধে ৯ কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্নসাতের মামলায় তাকে জেলে পাঠানো হয়।
কোম্পানিটি বিগত ৪ বছর ধরে এজিএম করেনি, দেয়নি কোন লভ্যাংশ। কোম্পানিটি বিগত ৫ বছরে লভ্যাংশ দিয়েছে যথাক্রমে ২০১৮ সালে ৩ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড, ২০১৭ সালে ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড, ২০১৬ সালে ৫ শতাংশ স্টক ও ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড, ২০১৫ সালে ১২ শতাংশ স্টক ও ৩ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড এবং ২০১৪ সালে ১৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড।
৫০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধন নিয়ে ২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় এ্যাপোলো ইস্পাত এবং কোম্পানিটির বর্তমান পরিশোধিত মুলধনের পরিমান ৪০১ কোটি ৩০ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। কোম্পানিটির অভিহিত শেয়ারের মূল্য ১০ টাকা। আজকে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয় সর্বোনিম্ন ১০.১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০.৮০ টাকায়। আজকে কোম্পানিটি ২ হাজার ৮৪৭ বারে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৫১ টি। যার বাজার মূল্য ১৪ কোটি ৫৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ার দর ওঠানামা করে সর্বনিম্ন ৫.১০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১৪.৮০ টাকা।
কোম্পানিটির মোট শেয়ার ৪০ কোটি ১৩ লাখ ৮ হাজার ৬০০ টি। তার মধ্যে ২০.২৪ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারি ২০.৫৩ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারি ০.৪২ শতাংশ এবং বাকি ৫৮.৮১ শতাংশ শেয়ার সাধারন বিনিয়োগ কারিদের হাতে।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
অনিয়মে ডুবছে এ্যাপোলো ইস্পাত, দাম বাড়ছে শেয়ারের https://corporatesangbad.com/13878/ |