তিমির বনিক, ষ্টাফ রিপোর্টার: দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ পর্যটনের লীলাভূমির জেলা মৌলভীবাজার চায়ের রাজধানী হিসেবে পরিচিত। অপার সৌন্দর্যের সম্ভাবনাময় মৌলভীবাজারে বেড়েই চলেছে নতুন নতুন পর্যটনকেন্দ্র। এখানে প্রতিদিনই ঘুরতে আসেন হাজারো পর্যটক। প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন পর্যটকেরা। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলো নতুন রূপে সাজছে।
বিগত ১৪ বছরে প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্রে নেয়া হয়েছে বিশেষ কর্মযজ্ঞ। এর ফলে মৌলভীবাজারে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা। জেলার পর্যটনকেন্দ্র গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- নয়নাভিরাম শতাধিক চা বাগান, জীববৈচিত্র্যে ভরপুর লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, দুর্গম পাহাড়ের হামহাম জলপ্রপাত, হাকালুকি হাওর, দোসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা সেন্টার, গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট, মাধবপুর লেইক, বাইক্কা বিল, আগরের কারখানা, রাবার বাগান, জুড়ির কমলা বাগান, খাসিয়াদের চাষকৃত পানের (জুম) বরজ।
মৌলভীবাজারের পর্যটনকেন্দ্র গুলোতে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে বেড়েছে পর্যটকের সংখ্যা। ছোট বড় ২৩৮টি বিল নিয়ে এ হাওরের আয়তন ২০ হাজার ৪০০ হেক্টর। প্রকৃতির এই বিশাল দুনিয়ায় কী নেই? নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ, পাখি, শাপলা-শালুক, ঝিনুক, শতশত প্রজাতির জলজ প্রাণী আর হিজল, কড়চ, বরুন, আড়ং, কলুমসহ সবুজের মনকাড়া পরিবেশ। এখানে বেশ কিছু সংরক্ষিত স্পট গড়ে তুলা হয়েছে। এতে বেড়েছে হাকালুকির সৌন্দর্য। বর্ষা মৌসুমে থই থই পানি আর শীত মৌসুমে পাখির খেলায় বিমোহিত রূপ মাধুর্যে কাছে টানে প্রকৃতি প্রেমীদের। এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকির সীমানা মৌলভীবাজার ছাড়িয়ে সিলেট পর্যন্ত বিস্তৃত। দেশের বৃহত্তম জলপ্রপাত মাধবকুণ্ড। বড়লেখা উপজেলার কাঁঠালতলী বাজার থেকে আট কিলোমিটার পূর্ব দিকে এগোলেই কানে আসবে ক্রমাগত জল গড়ানোর শব্দ। সেইসঙ্গে থাকবে সবুজ চা পাতার তাজা গন্ধ। আগে ঝর্না দেখতে যাওয়ার জন্য ভালো কোনো রাস্তা ছিলনা। এখন সেখানে টাইলস ও রেলিং বসিয়ে সুন্দর রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এজন্য পর্যটকরা অনায়াসে বিনা প্রতিবন্ধকতায় ঝর্নার দৃশ্য উপভোগ করেন।
এছাড়া বড়লেখার আজীমগঞ্জ ও সুজানগর এলাকায় আগর বাগানে উৎপাদিত আগর স্থানীয় সুগন্ধির চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। এতে বৈদেশিক মুনাফা অর্জিত হয়। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আগর বাগানের পরিধি বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এক সময় জুড়ীর লাঠিটিলায় গাড়ি নিয়ে যাওয়া মানে ছিল যুদ্ধে অংশ নেওয়া। সেই পরিস্থিতি বদলে গেছে। সরকারের পরিকল্পনায় লাঠিটিলায় দৃষ্টিনন্দন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য অন্যতম একটি স্থান হচ্ছে শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিল। বাইক্কা বিলে পর্যটকের জন্য রাস্তা সংস্কার, ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণসহ বেশ কিছু স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে পর্যটক গিয়ে বিভিন্ন ধরনের পাখির বিচরণ দেখে মুগ্ধ হন।
পর্যটন নিয়ে কাজ করা বাঙাল ট্রাভেলারের পরিচালক রিপন চন্দ্র দে জানান, পর্যটন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এবং ব্যক্তি পর্যায়ে বেশ কিছু কাজ হয়েছে। এজন্য গত ১৪ বছরে মৌলভীবাজারের পর্যটন খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহ্সান জানান, হাওরকেন্দ্রিক নতুন নতুন পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে জেলা প্রশাসনের। বর্তমান সরকারের সময়ে পর্যটন খাত অনেকদূর এগিয়ে গেছে।