নিজস্ব প্রতিবেদক : সদ্য বিদায়ী বছর শেষে ব্যাংক খাতের আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে ৫.৬৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ইতিহাসে এ যাবৎকালের সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট ও রেমিট্যান্সের পতনে আমানতের প্রবৃদ্ধি ব্যাপকহারে কমছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
করোনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশের সার্বিক খাতে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আবারও মুখ থুবড়ে পড়ে অর্থনীতির বেশ কয়েকটি সূচক। এরপরে কমতে থাকে ব্যাংক খাতের আমানত প্রবৃদ্ধি। আর ব্যাংক খাতে আমানতের চেয়ে ঋণের প্রবাহ বেশি বাড়ায় তারল্য সংকট প্রকট আকার ধারন করেছে। ফলে প্রতিদিনই ব্যাংকগুলোকে বড় অঙ্কের তারল্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক খাতের আমানত প্রবৃদ্ধি কমার ক্ষেত্রে দুটি বিষয় কাজ করেছে। মূল্যস্ফীতির প্রভাবে মানুষের খরচ বেড়ে গেছে। এতে মানুষ সঞ্চয় ভেঙ্গে খরচ করেছে। নতুন করে সঞ্চয় করার সুযোগ ছিলো না। অন্যদিকে ব্যাংক খাতে ব্যাপক ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় মানুষের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। তবে দুই-তিন মাস আগের তুলনায় হয়তো সেই সংকট কিছুটা দূর হয়েছে। তবে প্রবৃদ্ধি কমার ক্ষেত্রে এর প্রভাব রয়েছে। এছাড়া গত বছর বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স আসায় ধস নেমেছিলো। আবার জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স প্রবাহে সামান্য উত্থান হয়েছে। রেমিট্যান্সের কারনে যে আমানত তৈরি হতো তা কমে গিয়েছিলো। এসবের কারনে ব্যাংক আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে আসছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে করোনা আঘাত আসার আগে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বার্ষিক আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১২.৮২ শতাংশ। সেই প্রবৃদ্ধি বাড়তে বাড়তে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৪.৪৭ শতাংশে ওঠে। কিন্তু এরপর থেকেই টানা কমছে আমানতের প্রবৃদ্ধি। সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে আমানতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫.৬৬ শতাংশ, যা ইতিহাসে এ যাবৎকালের সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি।
এর আগে ২০১৮ সালের এপ্রিলে ব্যাংকগুলোর আমানতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নেমে আসে ৫.৯৮ শতাংশে। গত বছরই সবচয়ে কম বেড়েছে আমানত। করোনার বছর ২০২০ সালে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা। বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সাড়ে ১৩ শতাংশ। তার পরের বছর ২০২১ সালে আমানত বেড়ছিল ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। সেখানে গত বছর বেড়েছে মাত্র ৭৯ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যাংকে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমলেও ঋণের প্রবাহ বাড়ছে। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ২৬ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। যা ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ছিল ১২ লাখ ৬৩ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা। ফলে গত এক বছরে বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা।