নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এ তালিকাভুক্ত সরকারি মালিকানাধীন তিন কোম্পানির লসের ধারা চলমান। প্রকাশ করেনি চলতি কিংবা বিগত কয়েক বছরের আর্থিক প্রতিবেদন। দীর্ঘদিন লসের ধারায় চলছে কোম্পানি তিনটি। কোম্পানি তিনটি হলো খাদ্য ও আনুসাংগিক খাতের জিল বাংলা সুগার মিলস্ এবং শ্যামপুর সুগার মিলস ও প্রকৌশল খাতের অন্তর্ভুক্ত রেনউইক যঞ্জেশ্বর এন্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড।
ডিএসই তথ্য অনুযায়ী কোম্পানি তিনটি দীর্ঘদিন দেয়নি কোন ক্যাশ ডেভিডেন্ড কিংবা স্টক ডেভিডেন্ড। এমনকি চলতি অর্থ বছরেও হতাশ করেছে বিনিয়োগকারিদের। চলতি বছরে কোন প্রকার লভ্যাংশ প্রদান ছাড়াই এজিএম করবে বলে জানান দিয়েছে কোম্পানি গুলো।
ডিএসই তথ্য অনুযায়ী দীর্ঘ দিন লসের ধারাবাহিকতায় চলছে কোম্পানি তিনটি। শ্যামপুর সুগার মিলস্ এর চলতি বছরের প্রকাশিত অনিরিক্ষত ১ম প্রান্তিক অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লস হয়েছে ২১.৬২ টাকা। যা আগের বছর একই সময়ে লস হয়েছিলো ২৫.১৫ টাকা। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট ওপারেটিং ক্যাশ ফ্লো বেড়েছিলো ০.১২ টাকা। একই সময়ে আগের বছরে শেয়ার প্রতি নিট ওপারেটিং ক্যাশ ফ্লো কমেছিলো ০.৪২ টাকা। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি এনএভি কমেছে ১১৩৬.১৪ টাকা যা একই সময়ে আগের বছর কমে ছিলো ১১১৪.৫২ টাকা। কোম্পানিটির কোন প্রকার লভ্যাংশ প্রদানেরো রেকর্ড পাওয়া যায়নি। এবং চলতি বছরেও কোন প্রকার লভ্যাংশ না দেওয়ার ঘোষনা দিয়েছে কোম্পানিটি । কোম্পানিটি সর্বশেষ এজিএম করে ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর।
এদিকে গত সপ্তাহের শেষ কার্য দিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বাড়লেও কমেছে বাকি দুই কোম্পানির। ঐ দিন কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছিলো ৪.৫৪ শতাংশ। ঐ দিন কোম্পানিটির ওপেনিং প্রাইস ছিলো ৮৭ টাকা। এবং ক্লোজিং প্রাইস ৮৮.৬০ টাকা। কোম্পানিটি ২১৩ বারে ১৮ হাজার ৯১৩ টি শেয়ার লেনদেন করেছিলো । যা বাজার মূল্য ছিলো ১৬ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা।
জিল বাংলা সুগার মিলস্ এর চলতি বছরের প্রকাশিত অনিরিক্ষত ১ম প্রান্তিক অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লস হয়েছে ১৯.৯৬ টাকা। যা আগের বছর একই সময়ে লস হয়েছিলো ১৯.৩৬ টাকা। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট ওপারেটিং ক্যাশ ফ্লো কমেছে ১৯.৫৮ টাকা। একই সময়ে আগের বছরেও শেয়ার প্রতি নিট ওপারেটিং ক্যাশ ফ্লো কমেছিলো ১৯ টাকা। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি এনএভি কমেছে ৮৩৭.৪০ টাকা যা একই সময়ে আগের বছর কমে ছিলো ৮১৭.৪৩ টাকা। কোম্পানিটির কোন প্রকার লভ্যাংশ প্রদানেরো রেকর্ড পাওয়া যায়নি। কোম্পানিটি সর্বশেষ এজিএম করে ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর।
এদিকে গত সপ্তাহের শেষ দিনেও কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৪.৬২ শতাংশ। ঐ দিন কোম্পানিটির ওপেনিং প্রাইস ছিলো ১২০ টাকা। এবং ক্লোজিং প্রাইস ১১৭.৮০ টাকা। ঐ দিন কোম্পানিটি ৯৫ বারে ১১ হাজার ২০১ টি শেয়ার লেনদেন করে । যা বাজার মূল্য ১৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা।
আরেক কোম্পানি রেনউইক যঞ্জেশ্বর এন্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড এর চলতি বছরের প্রকাশিত অনিরিক্ষত ১ম প্রান্তিক অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লস হয়েছে ৫.৯২ টাকা। যা আগের বছর একই সময়ে লস হয়েছিলো ০.৪০ টাকা। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট ওপারেটিং ক্যাশ ফ্লো কমেছে ২.১২ টাকা। একই সময়ে আগের বছরেও শেয়ার প্রতি নিট ওপারেটিং ক্যাশ ফ্লো কমেছিলো ১.৯৬ টাকা। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি এনএভি কমেছে ২৯.১৭ টাকা। যা একই সময়ে আগের বছর কমে ছিলো ২৩.২৫ টাকা। কোম্পানিটি সর্বশেষ লভ্যাংশ প্রদান করে ২০১৮ সালে ১২ শতাংশ। বিগত তিন বছর ধরে কোম্পানিটি বিনিয়োগ কারিদের কোন প্রকার লভ্যাংশ প্রদান করেনি। এবং চলতি বছরেও কোন প্রকার লভ্যাংশ না দেওয়ার ঘোষনা দিয়েছে কোম্পানিটি। কোম্পানিটি সর্বশেষ এজিএম করে ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর।
এদিকে গত সপ্তাহের শেষ দিনেও কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৬.১৯ শতাংশ। ঐ দিন কোম্পানিটির ওপেনিং প্রাইস ছিলো ১১৮৮.১০ টাকা। এবং ক্লোজিং প্রাইস ১১১৪.৬০ টাকা । ঐ দিন কোম্পানিটি ১৯৯ বারে ১ হাজার ৫১০ টি শেয়ার লেনদেন করে । যা বাজার মূল্য ১৭ লক্ষ ১০ হাজার টাকা।
ডিএসইর কোম্পানি প্রফাইলে দেয়া ওয়েবসাইট লিঙ্ক দিয়েও ওয়েবসাইট বন্ধ করে রেখেছে কোম্পানি তিনিটি। দীর্ঘদিন ধরে কোন প্রকার পিএসআই, নোটিশ এবং আর্থিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করেনি কেউ। যার কারনে কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারছেনা বিনিয়োগ কারিরা। যদিও এ ধরনের তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বিনিয়োগ কারিদের জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে লসে থাকায় বিনিয়োগকারিদের কোন প্রকার ডেভিডেন্ট দেয়নি কোম্পানি গুলো। এমনকি চলতি বছরেও লভ্যাংশ না দেয়ার ঘোষনা করেছে কোম্পানি গুলো। যার কারনে পুজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারিরা।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মোঃ মিজানুর রহমান, এফসিএস কে এই তিন কোম্পানির এই অবস্থার কারন এবং সমাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “শুধু এই তিন কোম্পানি নয় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সকল সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি বিএসইসি, ডিএসই এবং সিএসই এদের কাউকেই তারা কেয়ার করে চলেনা। যার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারন বিনিয়োগকারিদের। এর কারন হিসেবে পুজিবাজারের এই তিন রেগুলেটরের দুর্বল মনিটরিং কে দায়ি মনে করেন এই বিশ্লেষক”। তিনি আরোও বলেন, এভাবে চলতে থাকলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানরা যেসব আশার বানি শোনাচ্ছেন তা অচিরেই দুরাশায় পরিনত হবে।