October 7, 2024 - 12:25 pm
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeকর্পোরেট-অর্থ ও বাণিজ্যঅর্থ-বাণিজ্যজমে উঠেছে গদখালির ফুলের বাজার: লাভের আশা দেখছেন চাষীরা

জমে উঠেছে গদখালির ফুলের বাজার: লাভের আশা দেখছেন চাষীরা

spot_img

বেনাপোল প্রতিনিধি : গত কয়েক বছর করোনাভাইরাস ও আম্পান ঝড়ে ফুল সেক্টরের ক্ষতি পুষিয়ে তোলার নতুন আশা দেখছেন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালির ফুল চাষীরা। যার ফলে এরই মধ্যে ফেব্রুয়ারির তিন উৎসবকে ঘিরে চাঙা হয়ে উঠেছে ফুল চাষী ও ফুলের বাজার। সামনেই পহেলা ফাল্গুন বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে প্রস্তুুত ফুলচাষীরা।

ফুল চাষিরা বলছেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূূলে থাকায় ফুল উৎপাদন ভালো হয়েছে। দামও ভালো থাকায় চাঙ্গা হয়ে উঠছে কেনাবেচা। এ মৌসুমে যশোরের ছয় সহস্রাধিক ফুল চাষি ৫০ কোটি টাকার ফুলবিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, যশোর জেলায় এ বছর ৭০০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়েছে। গতবছর ৬৪০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছিল। এ বছর ৬ হাজার চাষি ফুল চাষ করেছেন। জেলার ৯৫ শতাংশ ফুল চাষ হয় ঝিকরগাছা উপজেলাতে। সেখানে এ বছর ৬৩০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ও পানসারি ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ফুল চাষ হয়।

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, ঝিকরগাছা উপজেলায় ৬৩০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়েছে। ফুল চাষের সাথে এ এলাকার লক্ষাধিক মানুষের জীবিকার সম্পর্ক রয়েছে। কৃষি অফিস চাষিদের সার্বিক সহযোগিতা করছেন। গতবারের তুলনায় উৎপাদন অনেক ভালো হয়েছে। চাষিরা করোনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি এবার পুষিয়ে নিতে পারবে। বাজারজাতকরণে অবকাঠামো করে দেয়া হয়েছে। এ বছর চাষিরা ৫০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি, পানিসারা, নাভারণ, নির্বাসখোলা ও শার্শা উপজেলার উলাশী এলাকায় ফুল চাষ হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে চাষিদের পরিশ্রমে মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে গাঁদা, গোলাপ, জারবেরা,চন্দ্রমল্লিকা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল। গদখালীর ফুল বাজারে বর্তমানে প্রতিটি গোলাপ ৩ থেকে ৫ টাকা, গ্লাডিওলাস কালারভেদে ৮ থেকে ১৪ টাকা, জারবেরা ৬ থেকে ১০ টাকা, রজনীগন্ধা ৪ থেকে ৬ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা দেড় টাকা থেকে ২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক হাজার গাঁদা ফুল ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের পর চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যায়। তখন ফুলের দর আরও বাড়বে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। বসন্ত বরণে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় হলুদ রংয়ের গ্লাডিওলাস ও গাঁদা, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে গোলাপ আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে গাঁদা ফুল বেশি বিক্রি হয়।

গদখালী ফুলের পাইকারী বাজার ঘুরে দেখা যায়, ফুল কিনতে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন। সারাদিনই বিভিন্ন রুটের বাসের ছাদে, ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে স্তুুপ করা হয়েছে ফুল। যেগুলো পাঠানো হবে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়।

ঝিকরগাছার পানিসারা এলাকার ফুলচাষি রবিউল ইসলাম বলেন, এবার সব জাতের ফুলের দাম ভালো। আশা করছি ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে গত কয়েক বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে এবার ফুল বেচাকেনা হবে। এবছর ৫ বিঘা জমিতে চ›ন্দ্রমল্লিকা লাগিয়েছিলাম। ৩ বিঘার ফুল বিক্রি শেষ হয়েছে। কিছুদিন পূর্বে ফুলের দাম কম থাকায় ৫০০ টাকা হাজার দরে বিক্রি হয়েছে। তবে এখন দুই টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। এবছর চাষাবাদে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে এবং ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা বিক্রি হবে। তিনি চন্দ্রমাল্লকার রেনু চারা তৈরি ও টিউলিপ ফুলও চাষ করেন। গত বছর থেকে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় প্রথম টিউলিপ চাষ শুরু করেন।

ফুল ব্যবসায়ী হৃদয় হোসেম বলেন, এবছর ফুল খুব ভালো হয়েছে। আমি আড়াই বিঘা জমিতে রজনীগন্ধা, গোলাপ ও কামিনী (পাতার জন্য) চাষ করেছি। আশা করছি দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বিক্রি হবে। সারা বছরের মধ্যে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের পর ফুলের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যায়। তখন ফুলের দাম আরও বাড়বে। সব মিলিয়ে ফুল চাষের এবং বিক্রিকালে এই ফেব্রুয়ারিতে সবচেয়ে বেশি দামে ফুল বিক্রি করা হয়।

হাঁড়িয়া নিমতলা গ্রামের ফুলচাষি আশরাফ হোসেন বলেন, বসন্তের আগে কয়েকদিনে ১৭ কাঠা জমির গাঁদা ফুল বিক্রি করিছি ৭০ হাজার টাকায়। গত বছর এই সময় মাত্র দুশ টাকার ফুল বিক্রি করতে পেরেছিলাম। এবছর আবহাওয়া ভালো থাকায় উৎপাদন খুব ভালো হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছি।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি ও যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপনন সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, গত কয়েক বছর মহামারীর ভয় কাটিয়ে চাষিরা এবার আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে নতুন করে। এখন থেকেই ১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্তবরণ উৎসব, পরদিন ভালবাসা দিবস আর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুল বিক্রির আশায় চাষীরা প্রস্তুুতি গ্রহন করছে।

তিনি বলেন, গত কয়েক মৌসুমের তুলনায় চলতি বছরে দাম ও বেচাকেনা দুটোই ভালো হওয়ায় তারা দারুণ খুশি। ফুলের উৎপাদন, চাহিদা ও দাম-সবই বেশ ভালো। এ অঞ্চলের ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটেছে। এবার ৫০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। দেশের বিভিন্নস্থানে এখান থেকে ফুল যাচ্ছে। দেশের ৭০ শতাংশ ফুলের চাহিদা আমাদের এলাকা থেকে পূরণ হয়।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ