October 7, 2024 - 5:27 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeআইন-আদালতএকই পরিবারের ৪ জনকে হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি গ্রেপ্তার

একই পরিবারের ৪ জনকে হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি গ্রেপ্তার

spot_img

নিজস্ব প্রতিবেদক : কুড়িগ্রামে একই পরিবারের ৪জনকে কুপিয়ে হত্যাসহ ও দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক হত্যা মামলাসহ ১০ এর অধিক মামলার দীর্ঘদিনের পলাতক মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি এবং ভাড়াটে সন্ত্রাসী পলাশ গাজী ওরফে জালাল গাজী (দাঁত ভাঙ্গা পলাশ) কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৩)।

মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী থানায় গভীর রাতে মুখোশ পরে একই পরিবারের ৪ জনকে কুপিয়ে হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড সাজাপ্রাপ্তসহ একাধিক মামলায় যাবজ্জীবন ও বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত কুখ্যাত খুনী পলাশ গাজী ওরফে জালাল গাজী ওরফে দাঁত ভাঙ্গা পলাশকে নারায়ণগঞ্জ জেলার কাঁচপুর এলাকা হতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত পলাশ গাজী ২০১০ সাল থেকে ডাকাতি, মাদক, চুরিসহ বিভিন্ন অপকর্মে ভাড়াকৃত সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করত। ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারি এলাকায় মমতাজ উদ্দিন নামে একজন ব্যক্তির সাথে তার ছোটভাই সুলতান আহমেদকে খুন করার বিষয়ে তাদের চুক্তি হয়। ভিকটিম সুলতান ও বড়ভাই মমতাজের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিল। এক পর্যায়ে মমতাজ ছোটভাই সুলতানকে খুন করার জন্য পলাশ ও তার বাহিনীকে ৫ লক্ষ টাকা ও ভুরুঙ্গামারি থানায় ১ বিঘা জমি লিখে দেয়ার বিনিময়ে চুক্তি করে। মমতাজের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর ধৃত আসামি পলাশের নেতৃত্বে ৬ জন (নজরুল ওরফে মনজু, আমির, জাকির, জালাল ওরফে পলাশ, হাসমত ও মমতাজ) মিলে ২০১৪ সালে ১৩ জানুয়ারি গভীর রাতে ভুরুঙ্গামারি উপজেলার দিয়াডাঙ্গা গ্রামে মমতাজের নিজ বাড়িতে বসে সুলতানকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ জানুয়ারি রাতে পলাশের নেতৃত্বে অন্যান্য সহযোগীরা মুখোশ পরে দেশিয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নিহত সুলতানের বাড়িতে দল বেঁধে হামলা চালায়। প্রথমে তারা সুলতানের শয়নকক্ষে প্রবেশ করে তাকে মুখমন্ডলসহ সারা শরীরে এলোপাতাড়ী কোপাতে থাকে। এসময় তার স্ত্রী হাজেরা বেগম বাঁধা প্রদান করলে তাকেও পিঠে এবং পেটে ধারালো রামদা দ্বারা কোপানো হয়। এরপর সুলতানকে তারা আবারও এলোপাতাড়ী কুপিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। শব্দ শুনে পাশের ঘর থেকে দুই নাতনি রুমানা ও আনিকা ছুটে এসে বাঁধা দিলে তাদেরকেও তারা বুকে এবং পেটে-পিঠে এলোপাতাড়ী কুপিয়ে হত্যা করে। এভাবেই তারা একই পরিবারের ৪ জনকে কুপিয়ে হত্যা করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসে।

ঘটনার পরবর্তী দিন সকালে নিহত সুলতানের ছেলে হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে ভুরুঙ্গামারি থানায় কয়েকজন কে অজ্ঞাত আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। ঘটনার কিছুদিন পর ভুরুঙ্গামারি এলাকায় অন্য একটি হত্যা মামলায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ২ জনকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা স্বপরিবারে সুলতান হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে এবং তাদের সাথে জড়িতদের নাম প্রকাশ করে যেখান থেকে গ্রেফতারকৃত পলাশ গাজী ওরফে দাঁত ভাঙ্গা পলাশের নেতৃত্বে এই হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা মমতাজ উদ্দিন, পলাশ গাজী ওরফে জালাল গাজীসহ ৭ জনকে অভিযুক্ত করে বিজ্ঞ আদালতে চার্জশীট দাখিল করে। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে বিজ্ঞ আদালত গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখ অভিযুক্ত হত্যাকারী মমতাজ উদ্দিন, পলাতক পলাশ গাজী ওরফে জালাল গাজী ওরফে দাঁত ভাঙ্গা পলাশসহ ৬ জনকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন এবং অপর একজনকে খালাস প্রদান করেন। রায় শুনানির দিন মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত ৬ জন আসামি আদালতে উপস্থিত থাকলেও পলাশ গাজী ওরফে জালাল গাজী ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিল।

এছাড়াও, ২০১৫ সালের জুলাই মাসে বগুড়া জেলার শেরপুরের মির্জাপুর এলাকায় মাইক্রোবাস চুরির উদ্দেশ্যে মাইক্রোবাসের চালক নুরুল হককে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মরদেহ বগুড়ার শেরপুরের মির্জাপুর এলাকায় একটি পুকুরে ফেলে রাখে পলাশ গাজী ও তার সহযোগীরা। উক্ত হত্যার ঘটনায় গত ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে বিজ্ঞ আদালত গ্রেফতারকৃত পলাশ গাজী ওরফে জালাল গাজীসহ মোট ৯ জন আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। উক্ত ৯ জন সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে পলাশ জালাল গাজী, নজরুল ইসলাম মনজু এবং আমির হামজা ২০১৪ সালের কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারি এলাকায় একই পরিবারের ৪ জন সদস্যকে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডেরও আসামি ছিল।

এছাড়াও গ্রেফতারকৃত পলাশ জালাল গাজীর বিরুদ্ধে পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানায় ২০১৫ সালে হত্যা চেষ্টা মামলা, গাজীপুরের কালীগঞ্জ সড়কে ২০১৫ সালে ডাকাতির প্রস্তুতির মামলা, রাজধানীর মতিঝিল এলাকার সড়কে ২০১৬ সালের ভুয়া ডিবি পরিচয়ে ১টি ডাকাতি ও ১টি অস্ত্র মামলা, ২০১৭ সালে চুরি ও ভাঙ্গচুরের ২টি মামলা এবংরাজধানীর চকবাজার থানায় ২০১৯ সালে বেপরোয়া গাড়ী চালিয়ে একটি হত্যা মামলাসহ মোট ১১টি মামলা রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত পলাশ গাজীর কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। সে ১৯৯০ সাল থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে একটি গ্যারেজে কাজ করত। পরবর্তীতে সে ট্রাকের হেলপারির পাশাপাশি মাঝে মাঝে চালকের ভূমিকা পালন করত। ১৯৯৫ সাল থেকে লাইসেন্সবিহীনভাবে কাভার্ডভ্যান চালাত। পেশায় মূলত একজন ড্রাইভার হলেও ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন প্রকার অপরাধ কার্যক্রমের সাথে তার সম্পৃক্ততা ছিল। ২০০৯ সালে সে একটি পুরাতন মাইক্রোবাসক্রয় করে চালানো শুরু করে। মাইক্রোবাসটি ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় মাদকের চালান সরবরাহ করত। এছাড়াও ভূয়া ডিবি পুলিশ পরিচয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ শুরু করে। এরপর ২০১০ সালে তার নেতৃত্বে কয়েকজন সহযোগীসহ সে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীর একটি দল তৈরি করে। তারা রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলারমহাসড়কে ডাকাতি, খুন, মারামারিসহ নানাবিধ অপরাধমূলক কার্যক্রম চালাত।

গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় একাধিক মামলা এবং ওয়ারেন্ট থাকায় সে নারায়ণগঞ্জ, কাঁচপুর, উত্তরা ও শ্যামবাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসা বদল করে পলাতক জীবন যাপন করে। পলাতক থাকা অবস্থাতেও সে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে তার দলসহ বিভিন্ন জায়গায় অপকর্ম করত। মূলত রাতের বেলায় সিএনজি চুরি, ভূয়া ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি এবং ভাড়ায় খুন ও মারামারির মত অপরাধমূলক কার্যক্রম চালাত। এছাড়াও এসকল মামলায় একাধিকবার কারাভোগ করেছে।

গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ