স্পোর্টস ডেস্ক : বিশ্ব ক্রিকেটে অপরিচিত দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শনিবার (বাংলাদেশ সময় রোববার সকাল সাড়ে ছয়টা) শুরু হতে যাচ্ছে ক্রিকেটের অন্যতম বড় টুর্নামেন্ট টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা একবারেই শূণ্যের কোটায়।
কারন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হলো- আমেরিকান ফুটবল, বাস্কেটবল, বেসবল, আইস হকি এবং সকারের মত খেলাগুলো। সেখানেই ক্রিকেটের মেগা ইভেন্টের পর্দা উঠবে। সংক্ষিপ্ত ভার্সন নবম আসরের যৌথ আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
আকর্ষনীয় ও উত্তেজনাপূর্ণ এই ক্রিকেট উৎসব এক মাসব্যাপী চলবে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, ফ্লোরিডা, নিউ ইয়র্কের সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বেশ কিছু ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো। ডালাসে গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে সহ-আয়োজক যুক্তরাস্ট্রও কানাডা। ম্যাচটি শুরু হবে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়( বাংলাদেশ সময় রোববারভোর ৬টা ৩০ মিনিটে)। একই দিন স্থানীয় সময় রাত রাত ৮টা ৩০ মিনিটে গায়ানায় পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে খেলতে নামবে আরেক সহ-আয়োজক ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
প্রথমবারের মতো ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) কোন বড় ইভেন্টে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যদিও টুর্নামেন্টের বেশিরভাগ ম্যাচ ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হবে। ২০ দলের এই টুর্নামেন্টে গ্রুপ পর্বের ১৬টি ম্যাচ যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে বিশ্বকাপের সবচেয়ে হাইভোল্টেজ ম্যাচে নিউ ইয়র্কে মুখোমুখি হবে ভারত ও পাকিস্তান।
টুর্নামেন্টের বাকি সব ম্যাচ ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে সুপার এইট পর্ব, সেমিফাইনাল এবং ফাইনালও ক্যারিবীয়রান অঞ্চলে। ২৯ জুন বার্বাডোজের ব্রিজটাউনের কেনসিংটন ওভালে ফাইনাল দিয়ে বিশ্বকাপের পর্দা নামবে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রে বিনোদন হিসেবে অনেক বেশি ক্রিকেট খেলা হয়ে থাকে। তবে আয়াজকদের ধারনা, ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটই নিয়মিতভাবে আয়োজন করা গেলে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়া প্রেমিদের কাছে ক্রিকেট জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের আয়োজক কমিটির প্রধান নির্বাহী ব্রেট জোন্স এএফপিকে বলেন, ‘প্রথমত আমি মনে করি, যারা ক্রিকেটের অন্ধভক্ত, আমরা তাদের সাথে আনন্দে মাততে চাই। এখানে খেলতে আসা বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের সরাসরি দেখার সেরা সুযোগ পেতে যাচ্ছে ক্রিকেটপ্রেমিরা। দ্বিতীয়ত হলো- এর মাধ্যমে যুক্তরাস্ট্রে খেলাটির প্রতি আরো আগ্রহ বাড়বে এবং ক্রমান্বয়ে এখানে জনপ্রিয়তা লঅভ করবে।
এবারের বিশ্বকাপকে ২০২৮ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে অর্ন্তভুক্ত করার পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছে আইসিসি। ঐ অলিম্পিকে টি-টোয়েন্টি ভার্সনে খেলা হবে।
গত বছর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে মেজর লিগ ক্রিকেট চালু হয়। পাওয়া হিটিং ক্রিকেট, দর্শকদের আগ্রহের কারনে এই ফরম্যাটের জনপ্রিয়তা অনেকখানি বেড়ে যাবে।
তবে এটি শুধুমাত্র আমেরিকান বাজারের উপরই নজর রাখছে না আইসিসি। ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দিতে নতুন ক্রিকেট দেশগুলোকে বড় মঞ্চের মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ করে দিচ্ছে তারা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডকে টেস্ট মর্যাদা দিয়ে বড় ফরম্যাটে খেলুড়ে দেশের সংখ্যাটা ১২তে উন্নতি করে ঐতিহ্যবাহী ক্রিকেটকে প্রসার করতে পেরেছে আইসিসি।
কিন্তু টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটকে ক্রিকেটের উন্নতির মাধ্যম হিসেবে দেখছে আইসিসি। আসন্ন বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং উগান্ডার মত দলের বড় মঞ্চে অভিষেক হতে যাচ্ছে। এছড়াও রয়েছে নেপাল, পাপুয়া নিউ গিনি এবং ওমানের মত দলগুলো। যাদের বড় মঞ্চে নতুন হিসেবে ধরা হয়। এবারের আসরে বড় দলগুলোকে হারিয়ে অঘটনের জন্ম দিয়ে বিশে^র সামনে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমান দিতে চায় তারা।
পাঁচটি করে দল নিয়ে চারটি গ্রুপ সাজানো হয়েছে। গ্রুপের সেরা দুই দল সুপার এইটে খেলবে। ছোট দলগুলো গ্রুপ পর্বের বাঁধা টপকাতে পারবে না বলে ধারনা করা হচ্ছে এবং দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট দেখা যাবে।
২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরের শিরোপা জয় করে ভারত। সদ্য শেষ হওয়া ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) খেলোয়াড়দের পারফরমেন্সের উপর ভিত্তি করেই বিশ্বকাপের দল সাজিয়েছে টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট টিম ইন্ডিয়া।
অভিজ্ঞ ব্যাটার স্টিভেন স্মিথকে ছাড়াই বিশ্বকাপ পুনরুদ্ধারের মিশনে নামবে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। স্মিথ না থাকলেও অসিদের বিশ্বকাপ দলে অভিজ্ঞতার অভাব নেই। ডেভিড ওয়ার্নার, মিচেল স্টার্ক এবং প্যাট কামিন্সের মত বিশ্ব জয়ী ক্রিকেটাররা রয়েছেন।
এছাড়া শিরোপা জয়ের অন্যতম দাবীদার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। ২০২২ সালে সর্বশেষ আসরে শিরোপা জয়ী দলের সদস্য তারকা অলরাউন্ডার বেন স্টোকসকে ছাড়াই খেলতে নামবে ইংলিশরা। হাঁটুর অস্ত্রোপচারের পর নিজের ফিটনেস ফিরে পেতে লড়ছেন তিনি। বৃহস্পতিবার লন্ডনে পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে ভালোভাবেই বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শেষ করেছে ইংল্যান্ড।
ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ হওয়ায়, তৃতীয়বারের মত শিরোপা জয়ের স্বাদ পেতে বদ্ধপরিকর ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০১২ সালে শ্রীলংকায় এবং ২০১৬ সালে ভারতের মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিলো ক্যারিবীয়রা। দু’বারই ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ছিলেন ড্যারেন সামি। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচের ভূমিকায় আছেন স্যামি।
শিরোপা জয়ের দৌড়ে আছে- পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলংকাও। বিশ্বকাপের আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরেছে পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ইংল্যান্ডের কাছে চার ম্যাচের সিরিজে পাকরা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে প্রোটিয়ারা।
আইপিএল নিয়ে ব্যস্ত থাকায় মূল ক্রিকেটারদের ছাড়া গত এপ্রিলে দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে পাকিস্তানের মাটিতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ২-২ সমতায় শেষ করে নিউজিল্যান্ড। তবে আইপিএলের অভিজ্ঞতা বিশ্বকাপে কাজে লাগিয়ে প্রথমবারের মত শিরোপা জিততে চায় কিউইরা।
ছোট দল হিসেবে বিশ্বকাপে চমক দেখাতে পারে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের আগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ২-১ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে টাইগাররা। কিন্তু বড় মঞ্চে জ¦লে উঠতে বদ্ধপরিকর টাইগাররা।
গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে চমকে দেখিয়েছিলো আফগানিস্তান। পাকিস্তান-ইংল্যান্ডের মত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়েছিলো তারা। এবার টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে জ¦লে উঠতে চায় তারা।
আরও পড়ুন:
দেখে নিন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলগুলোর স্কোয়াড
ফিক্সিংয়ের সন্দেহে মালিক গ্রেপ্তার, মোস্তাফিজের দলের চুক্তি বাতিল