স্পোর্টস ডেস্ক : বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাকে। ৩৪ বছর বয়সেও দুর্দান্ত প্রতাপে রিয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাবের মিডফিল্ডের নেতৃত্ব দিয়েছেন। যে ফর্মে ছিলেন খুব সহজেই আরও কয়েক বছর ফুটবলে রাজত্ব করতে পারতেন। তবে তিনি যে টনি ক্রুস। সাধারণ কিছু করা এ জার্মানকে মানায় না। তাই ফর্মের তুঙ্গে থাকা অবস্থাতেই ফুটবলকে বিদায় বললেন সর্বজয়ী এ জার্মান মিডফিল্ডার।
মঙ্গলবার (২১ মে) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে পোস্টের মাধ্যমে টনি ক্রুস জানান জুনে নিজে দেশ জার্মানিতে অনু্ষ্ঠিত হওয়া ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ শেষে ফুটবলকে বিদায় বলবেন তিনি। ক্রুসের সঙ্গে তার ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদও জার্মান এ মিডফিল্ডারের অবসরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ইউরো ২০২৪ এর মাধ্যমে ফুটবলকে বিদায় বলতে যাওয়া এই ফুটবলার নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন জামার্নির সবচেয়ে বিখ্যাত ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখে। ব্যাভারিয়ার ক্লাবিটিতে ছয় মৌসুম কাটানোর পর তিনি আসেন স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদের। লস ব্লাঙ্কোসদের হয়ে খেলা ১০ মৌসুমে তিনি পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত ক্লাবটির কিংবদন্তি তকমা পান।
লুকা মদ্রিচ ও ক্যাসেমিরোকে নিয়ে গঠিত তার মিডফিল্ড ত্রয়ী ছিল বিশ্ব সেরা। ৩৪ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার ২০১৪ সালে লস ব্লাঙ্কোস শিবিরে যোগ দেওয়ার পর ২২টি শিরোপা জিতেছেন। যার মধ্যে রয়েছে ৪টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ৪টি লা লিগার শিরোপা।
টনি ক্রুস অবশ্য ২০২২ সালেই অবসর নেওয়ার চিন্তা করেছিলেন তবে আরও এক মৌসুমের জন্য মাদ্রিদে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে এবার আর সিদ্ধান্ত বদলাচ্ছেন না। ইউরো শেষেই ফুটবল বুট তুলে রাখবে জার্মান এই ফুটবল মায়েস্ট্রো।
ক্রুস নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া পোস্টে জানান, ১০ বছর পর, মৌসুমের শেষে এই অধ্যায়টি শেষ হয়ে যাবে। বিশেষভাবে আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যারা আমাকে মাদ্রিদে উন্মুক্ত হৃদয়ে স্বাগত জানিয়েছে এবং আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছে। সবচেয়ে বেশি করে আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, প্রিয় মাদ্রিদিস্তারা প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত আপনারা আমাকে যে ভালোবাসা এবং স্নেহ দিয়েছেন তার জন্য।
তার এই আবেগপূর্ণ ইনস্টাগ্রাম বার্তায়, ক্রুস অবসরের সঠিক মুহূর্তটি বেছে নেওয়ার জন্য তার গর্বের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, যেমন আমি সবসময় বলেছি, রিয়াল মাদ্রিদই হবে আমার শেষ ক্লাব। আমি আনন্দিত এবং গর্বিত যে আমি আমার সিদ্ধান্তের জন্য সঠিক সময় খুঁজে পেয়েছি এবং আমি এটি নিজে বেছে নিতে পেরেছি। আমার সবসময় ইচ্ছে ছিল আমার ক্যারিয়ারটি আমার পারফরম্যান্সের সর্বোচ্চ স্তরে শেষ করা।
ক্রুস ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছিলেন তবে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আসন্ন ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য জার্মান জাতীয় দলে ফিরে আসেন। এই মৌসুমে লা লিগা জেতা রিয়াল মাদ্রিদ আগামী ১ জুন ওয়েম্বলিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের মুখোমুখি হবে।
আমি নিশ্চিত যে এটি সঠিক সিদ্ধান্ত ক্রুস তার পডকাস্টের একটি বিশেষ পর্বে বলেন। আমি মাসের পর মাস এটি নিয়ে ভেবেছি। এই সিদ্ধান্তের পক্ষে এবং বিপক্ষে অনেক সময় দিয়েছি। আমি চাই আপনারা মনে রাখবেন যে আমি আমার সেরা অবস্থায় খেলা ছেড়েছি। আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে আমি যখন মাদ্রিদ ছাড়ব, তখন ফুটবল ছেড়ে দেব। আমি আমার সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে পেরেছি।
এক বিবৃতিতে, রিয়াল মাদ্রিদ ক্রুসের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। লস ব্লাঙ্কোসদের ইতিহাসের অন্যতম সফল সময়কালে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করেছে মাদ্রিদ কর্তৃপক্ষ।
টনি ক্রুস ২০১৪ সালে আমাদের ক্লাবে যোগ দিয়েছিলেন এবং রিয়াল মাদ্রিদের ১২২ বছরের ইতিহাসের অন্যতম সফল সময়কালে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ছিলেন। ১০টি মৌসুম তিনি আমাদের জার্সি এবং আমাদের প্রতীকের সম্মান রক্ষা করেছেন। তিনি ৪৬৩টি খেলায় ২২টি শিরোপা জিতেছেন : ৪টি ইউরোপীয় কাপ, ৫টি ক্লাব বিশ্বকাপ, ৪টি ইউরোপীয় সুপার কাপ, ৪টি লিগ, একটি কোপা দেল রে এবং ৪টি স্প্যানিশ সুপারকোপা।
উল্লেখ্য ক্রুস তার পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন বায়ার্ন মিউনিখে, ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে তার প্রথম-টিমে অভিষেক হয় এবং ২০১৩ সালে বায়ার্নের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা দলের অংশ ছিলেন। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেই তিনি রিয়াল মাদ্রিদে চলে আসেন। ক্রুস ২০২২ সালের নভেম্বরে বলেছিলেন, আমি সবসময় বলেছি যে আমি অন্য কোথাও যাব না। আমি ক্লাব পরিবর্তন করব না। আমি এখানেই অবসর নেব। আমি শুধু জানি না কখন। তবে এখন ফুটবল বিশ্ব জানে সেই সমৗয়। টনি ক্রুস ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের পরে ফুটবলের কিংবদন্তি হিসেবে অবসর নেবেন।