নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে ছড়িয়ে পড়া ক্ষতিকর সাকারমাউথ ক্যাটফিশ চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। স্থানীয়ভাবে এই মাছ সাকার মাছ হিসেবে পরিচিত।
বুধবার (২৫ জানুয়ারি) এক তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মৃণাল কান্তি দে গত ১১ জানুয়ারি এই মাছ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপনটি জারি করেন।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এখন থেকে কেউ এই সাকার মাছ আমদানি, চাষ, পরিবহণ, বিক্রয়, সরবরাহ ও সংরক্ষণ করতে পারবে না। ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ মন্ত্রণালয় সাকার মাছ নিষিদ্ধ করতে প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ অ্যাক্ট, ১৯০৫ এর ১৮ নম্বর ধারা সংশোধন প্রস্তাব প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে।
এ ব্যাপারে কারো কোন আপত্তি বা পরামর্শ থাকলে দুই মাসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের কাছে তা পেশ করতে বলা হয়েছে।
যে কারণে নিষিদ্ধ সাকার মাছ:
এই প্রজাতির মাছ যে কোনো জলজ পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে এবং দ্রুত বংশবৃদ্ধির কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছের সঙ্গে খাদ্য ও বাসস্থান নিয়ে প্রতিযোগিতা করে। দেশীয় প্রজাতির মাছের বংশবিস্তারে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, সর্বোপরি জলজ জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে সাকার। ছোট মাছসহ জলজ প্রাণী, শ্যাওলা, শামুকজাতীয় প্রাণী খেয়ে সাকার মাছ পরিবেশের খাদ্যশৃঙ্খল নষ্ট করে। ক্ষেত্রবিশেষ পাঁচ ফুট পর্যন্ত গর্ত করে জলাশয়ের পাড়ের ক্ষতি করে এবং উৎপাদন কমায়।
গত বছরের জুনে সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সাকার মাছ থেকে দেশীয় মাছ রক্ষায় এক সভা হয়। সভায় মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালকের পক্ষে তৎকালীন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশিকুর রহমান বলেন, সাকার মাছ শ্যাওলা, প্লাঙ্কটনজাতীয় খাবার বেশি খায়, বিধায় জলাশয়ে প্রাকৃতিক খাদ্য কমে যায়। জলজ জীববৈচিত্র্য ও মাছের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই প্রজাতির মাছের মাংসে ক্যাডমিয়াম নামক ধাতুর উপস্থিতি উচ্চমাত্রায় পাওয়া গেছে।
যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে সাকার মাছ:
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, উন্মুক্ত বা বদ্ধ জলাশয়ে পাওয়া গেলে তা বিনষ্ট করতে হবে। সেচের মাধ্যমে জলাশয় পুরোপুরি শুকিয়ে নষ্ট করতে হবে। হ্যাচারিতে প্রজনন বা উৎপাদন করা যাবে না। শোভা বর্ধনকারী মাছ হিসেবে অ্যাকুরিয়ামে পালন বন্ধ করতে হবে। নতুন করে জলাশয়ে প্রবেশ করতে না পারে, সেদিকে নজর রাখতে হবে।
মৎস্য অধিদফতরের পরিচালক (অভ্যন্তরীণ মৎস্য) শামীম আরা বেগম জানান, প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সাকার মাছ নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ প্রজাতির মাছের আমদানি, চাষ ও পরিবহন যেন না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে পিরানহা মাছ এবং ২০১৪ সালে আফ্রিকান মাগুর নিষিদ্ধ করলেও এখনও সেসব প্রজাতির মাছ বিভিন্ন সময় বাজারে বিক্রি হতে দেখা যায়।