বাংলাদেশের কম্পোজিট টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির এক অনন্য নাম মুন্নু ফেব্রিক্স। আন্তর্জাতিক বাজারেও সুখ্যাতি রয়েছে মুন্নু ফেব্রিক্সের। সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত হারুনার রশিদ খান মুন্নুর হাতে ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে স্পিনিং, উইভিং, ইয়ার্ন ডাইং, প্রিন্টিং, ফিনিশিং এবং ওয়াশিং সেকশন।
রাশিদ সামিউল ইসলাম লন্ডনের ইমিম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ গ্রাজুয়েশন এবং বিজনেস ম্যানেজমেন্টের উপর মাষ্টার্স করেছেন। তারপর তিনি সারাদুনিয়ায় খ্যাতনামা গাড়ির প্রতিষ্ঠান নিসান ও রোলস রয়েসে ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ করেছেন। দীর্ঘ ৮ বছর মুন্নু ফেব্রিক্সের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে নিজ যোগ্যতায় আজ তিনি প্রতিষ্ঠানের এমডির স্থানে অধিষ্টিত হয়েছেন। মুন্নু ফেব্রিক্সের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ইয়াং এন্ড ডাইনামিক এমডি রাশেদ সামিউল ইসলামের একান্ত সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কর্পোরেট সংবাদের সম্পাদক মিজানুর রহমান,এফসিএস।
সম্পাদক, কর্পোরেট সংবাদ: আমি আপনার শৈশব-কৈশর লেখাপড়া এবং আজকে এমডির চেয়ারে আপনি বসেছেন তা সম্পর্কে জানতে চাই?
রাশেদ সামিউল ইসলাম, এমডি মুন্নু ফেব্রিক্স: আমার জন্ম বাংলাদেশেই, আর ১০ বছর বয়স পর্যন্ত বাংলাদেশেই লেখাপড়া করেছি। আমার নানা হারুন-অর-রশিদ মুন্নু খান, ঊনি আমাদের তিন ভাইকে বিদেশে লেখাপড়া করানোর জন্য সিদ্ধান্ত নিলেন। তারপরে ১০ বছর বয়সেই আমি লন্ডনে চলে গেলাম। তখন থেকে আমার স্কুল এবং বিশ^বিদ্যালয়ে লেখাপড়া লন্ডনেই করেছি। লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজ থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছি এবং ওখানেই জব করেছি। কারণ আমাদের নানার সবসময় ইচ্ছা ছিলো, যেহেতু উনিও প্রফেশনাল একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে এসে তারপর ব্যবসা করেছিলেন, আমরাও যেন অভিজ্ঞতা গেইন করে নতুন পদ্ধতি নিয়ে ব্যবসায় আসি। গ্রাজুয়েশনের পরে আমি নিসান মটরস কর্পোরেশনে জয়েন করলাম। ঐখানে ছিলাম প্রায় এক বছর। তারপরে মাস্টার্স ইন বিজনেস ম্যানেজমেন্ট করলাম লন্ডনে। তারপর ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে রোলস রয়েসে ছিলাম যেখানে প্লেনের ইঞ্জিন বানানো হয়। ঐখান থেকে অভিজ্ঞতা অর্জনের পর আমি পারিবারিক ব্যবসায় জয়েন করলাম। যেহেতু আমি মুন্নু সিরামিকের ব্যবসায় নতুন ঢুকেছি, ঐখানে অনেক বছর ধরে আমাদের বাবা-মা ও বড় ভাই সবাই যুক্ত আছেন। ফলে তাদের কাছ থেকে আমি কাজটা বুঝে নেই ২০১৫ থেকে। আমার ৮ বছর হয়ে গিয়েছে অভিজ্ঞতা নিয়ে এসে পারিবারিক ব্যবসায় কাজ করছি। ঐ অভিজ্ঞতা হওয়ার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো যে বোর্ড আমাকে এমডি পজিশনটা দিবে।
সম্পাদক, কর্পোরেট সংবাদ: আপনার এই দীর্ঘ পথচলায় এমন কোন রিমার্কেবল ঘটনা রয়েছে কিনা, সেটা কি আমাদের সাথে শেয়ার করতে চান?
রাশেদ সামিউল ইসলাম, এমডি মুন্নু ফেব্রিক্স: যেটা আমার পারিবারিক ব্যবসায় জয়েনের জন্য একটা বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলো সেই স্মৃতি সব সময় মনে থাকবে। আমি তখন বাইরে চাকরি করছি। মুন্নুু সিরামিক তখন বিশ্বের সব থেকে লার্জেস্ট ট্রেড ফেয়ারে অংশগ্রহণ করে, সেটা ছিলো জার্মানির ফ্যান পার্কে। যখন ঐ মেলা হতো আমি তখন ট্রাভেল করে ইউকে থেকে জার্মানি গিয়ে ঐ সময়টা আমি মুন্নু সিরামিকের স্ট্যান্ডে সময় দিতাম। আমার যেটা মনে আছে প্রথম যখন আমি মেলায় গেলাম, মেলা যখন শুরু হলো তখন তো আমাদের সব পণ্য সাজানো রাখা বুথে। আমি বুঝলাম আমরা যেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদেশে শুনি বাংলাদেশে ম্যানুফ্যাকচারিং হয়, কারন বাংলাদেশে লেবার কস্ট কম বা প্রডাক্ট কম দামে পাওয়া যায়। যেটার মানে হচ্ছে জিনিসের মান উন্নত না। কিন্তু যখন আমি মেলায় গেলাম দেখলাম আমাদের বাংলাদেশি সিরামিক প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশগ্রহন করছে। চাইনিজ ও ভিয়েতনামিজ ম্যানুফ্যাকচাররা নি¤œ মানের হলে বুথ দিলেও বাংলাদেশের সব সিরামিকের কোম্পানিরা একটা হাই লেভেলের হলে বুথ দিয়েছে। যেখানে টারকি, ইরান, থাইল্যান্ডের মতো দেশের প্রোডাক্টও বিক্রি হচ্ছে। এই লেভেলের দেশের সাথে বাংলাদেশের সিরামিক পণ্য প্রদর্শনী হচ্ছে। এইটা যখন দেখলাম আমার ভিতরে একটা নতুন অনুভতি আসলো। বাংলাদেশে যে শুধু লো কস্ট ম্যানুফ্যাকচারিং হয়, এ কথাটা পুরাপুরি সত্য নয়। এটা দেখার পরে আমার ইচ্ছা করে সিরামিক নিয়ে কাজ করতে। দেশে ফেরার মূল উদ্দেশ্য এটাই। বাংলাদেশের ইমেজটা পরিবর্তন করতে হবে। সিরামিকের প্রতিষ্ঠানে যারা আছে আমরা সবাই জানি কত ভালোমানের জিনিস সিরামিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করে। সাথে সাথে আমাদের টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস ভালো কোয়ালিটির জিনিস বানানো হয়। কিন্তু এই ইমেজটা সারাবিশ্বের প্রচার করা হয় না। এটাই আমি প্রমোট করতে চাই, এই চিন্তাটা ধরেই আমি কাজ করি।
সম্পাদক, কর্পোরেট সংবাদ: বিনিয়োগকারীরা আপনার কাছ থেকে নতুন কিছু দেখতে পারবে কি না?
রাশেদ সামিউল ইসলাম,এমডি মুন্নু ফেব্রিক্স: ইনশাআল্লাহ, এটা নিয়ে আমি কাজ করছি। মুন্নু ফেব্রিক্সের যে সুনাম ছিলো এবং আছে এটাকে ধরে রেখে অবশ্যই আরও এগিয়ে নিতে চাই।
সম্পাদক, কর্পোরেট সংবাদ: বাংলাদেশে এখন ডলার সংকট, শ্রমিক অন্তুষ্ট ও করোনাকালীন যে টেক্সটাইলস খাতে ২ বছর সময় নষ্ট হলো এবং রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে যদ্ধের কারণে প্রাতিষ্ঠানিক প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই খুব বাজে অবস্থায় আছে, এত বড় প্রতিষ্ঠানের এমডির দায়িত্ব পালন করতে কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা কোনো চ্যালেঞ্জ এর মুখোমুখি হতে হচ্ছেন কিনা?
রাশেদ সামিউল ইসলাম, এমডি মুন্নু ফেব্রিক্স: হ্যাঁ, অনেক সমস্যা গিয়েছে কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা থেকে যা দেখেছি ব্যবসায় সমস্যা আসে আবার চলেও যায়। করোনার সময় একটা সমস্যা গেলো তারপর তো যুদ্ধের সমস্যা সেটা আপনি বললেন, তা তো চলছে। এখন ধরেন আরেকটা শিপিংয়ের সমস্যা শুরু হতে পারে। ফলে এই সব সমস্যা নিয়েই সব সময় ব্যবসার ক্ষেত্রে মনের একটা এজিলিটি রাখতে হয়। আজকে কি চ্যালেঞ্জ আসছে সেটা আমরা কিভাবে সামাল দিতে পারি। আমি বলবো এখন বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অবস্থা কম্পারেটিভলি খারাপ। কিন্তু সারা বিশ্বের সাথে তুলনা করলে বাংলাদেশ এখনও অনেক শক্তিশালী জায়গাতে আছে। যেখানে সারা বিশ্বের ইকোনোমি নিম্নমুখী, সেখানে শেষ ২ বছর বাংলাদেশের কিন্তু উন্নয়ন হয়েছে। কমপক্ষে ৫-৬% উন্নতি ঘটেছে, আমাদের এক্সর্পোটও বেড়েছে। ২০২২ সালে একটু কমেছে কিন্তু ২০২৩ সালে বেড়েছে। খারাপটার কথা বলতে মানুষ বেশি আগ্রহ হয় বেশি পছন্দ করে। কিন্তু আমরা চেষ্টা করি পজেটিভ থাকতে। পজেটিভ থেকে ব্যবসাতে কিভাবে উন্নতি করা যায়। এখনও বাংলাদেশে টেক্সটাইল বিভাগ ও গার্মেন্টস সেক্টরে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। আপনি যদি দেখেন গত ৫ বছরে গার্মেন্টস সেক্টরে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট এসেছে। ডেনিমে এ বাংলাদেশ ইউকে, ইইউ ও আমেরিকার বড় সাপ্লায়ার। যা এর আগে ছিলো চায়না। তো চায়না থেকে যেহেতু প্রতিষ্ঠান সরে আসছে তাই এখানে বাংলাদেশের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। তো আমার পরিকল্পনা মুন্নু ফেব্রিক্স এর জন্য অবশ্যই ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো। কারন পরবর্তী ২০ বছর আমরা আশা করছি গ্রোথ থাকবে। গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে যে কাপড়টা লাগে বাংলাদেশ ৪০ শতাংশও লোকাল মেড টেক্সটাইল সাপোর্ট দিতে পারে না। আপনি একটু চিন্তা করে দেখেন, যেখানে এত কাপড় ইমপোর্ট করে আনতে হচ্ছে চায়না ও ইন্ডিয়া থেকে। কাজেই এইটা যদি আমরা লোকালি বানাতে পারি। ক্রেতারা সব সময় আশা করে লোকাল উৎসের। তো আমরা যদি লোকালি সার্পোট দিতে পারি, তাও এইটা পূর্ণ করতে ১০-১৫ বছর লেগে যাবে। এরপর গার্মেন্টস আরও বড় হবে।
সম্পাদক, কর্পোরেট সংবাদ: আপনার নানু মুন্নু গ্ৰুপের চেয়ারম্যান মরহুম হারুন-অর-রশিদ মুন্নু উনি আজ আমাদের মাঝে নেই, এই পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে আপনি কোন চ্যালেঞ্জ ফেস করছেন কি না? আরও একটি বিষয় যেহেতু আপনার নানু ভাই জাতীয়তাবাদি দল বিএনপির সাথে জড়িত ছিলেন এবং উনি এক সময় মন্ত্রীও ছিলেন। বর্তমান সরকারের সাথে কাজ করতে গিয়ে আপনারা রাজনৈতিক কোন সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছেন কিনা এবং ব্যাংক লিজিং প্রতিষ্ঠান থেকে আপনারা আর্থিক কোন সহযোগিতা পাচ্ছেন কিনা?
রাশেদ সামিউল ইসলাম, এমডি মুন্নু ফেব্রিক্স: আমি বলবো ব্যবসার জন্য বাংলাদেশের পরিবেশ অনেক সহায়ক। ব্যবসায় উন্নতি করার জন্য আমাদের সরকার অনেক প্রমোশন করছে। আমি বলবো না যে রাজনৈতিক বা দলীয় কারনে আমাদের কোন সমস্যা হচ্ছে। যেটা সবার সমস্যা হচ্ছে সেটা ডলার সংকটের জন্য এলসি খুলতে কষ্ট হচ্ছে। এ সমস্যা সবাই ফেস করছে। আর ইনফ্লেশনের কারনে কাঁচামালের দাম বেড়ে গিয়েছে। এই অর্থনৈতিক সমস্যা গুলোর মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এটা স্বাভাবিক যেহেতু ডলার কম রয়েছে। এইটা প্রায় সব ব্যাংকেই এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে।
সম্পাদক, কর্পোরেট সংবাদ: মুন্নু ফেব্রিক্স ছাড়া আরো কোন কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন??
রাশেদ সামিউল ইসলাম,এমডি মুন্নু ফেব্রিক্স: আমার পারিবারিক ব্যবসায় হিসেবে আমি যেহেতু মুন্নু সিরামিকে শুরু করেছি, এখন আমি ডিরেক্টর হিসাবে আছি। আমি ওখানে এক্সপোর্ট, মার্কেট, সেলস এর কাজটা দেখি। আর এক্সপোর্ট মার্কেটের জন্য যেসব ডিজাইন হয় ঐ প্রডাক্ট ডেভলপমেন্ট এর জন্য আমি দেখাশোনা করি। আর আমাদের যেটা মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আছে ঐটার গর্ভনিং বডিতে আমি একজন মেম্বার।
সম্পাদক, কর্পোরেট সংবাদ: একটু ভিন্ন বিষয় জানতে চাইব, আপনাদের তিনটি লিস্টেট কোম্পানিতেই র্চাটার্ড সেক্রেটারি প্রফেশনে তিনজন প্রফেশনাল কো¤পানি সেক্রেটারি এপয়েন্ট করছেন, পাশপাশি আপনাদের অন্য ডিপার্টমেন্টে প্রফেশনালদের অন্তভূক্ত করেছেন। আপনাকে সাধুবাদ জানাই প্রফেশনালদের মূল্যায়ন করার জন্য। ভবিষ্যতে আপনাদের প্রতিষ্ঠানের ইন্ডিপেনডেন্ট পরিচালক এখন যে বাধ্যতামূলক দুইজন করে নিতে হয় প্রত্যেক কোম্পানিতে। এ দুইজন ডিরেক্টরের ক্ষেত্রে একজন চার্টার্ড এ্যাকাউন্টেন্ট এবং একজন চার্টার্ড সেক্রেটারিকে ইন্ডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর হিসেবে নেয়ার সুযোগ দেয়া যায় কি না?
রাশেদ সামিউল ইসলাম, এমডি মুন্নু ফেব্রিক্স: অবশ্যই, কর্পোরেট গভারনেন্স কোডটা যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে, এটাকে ওয়েলকাম জানাই। কারন তখন একটি নির্দেশনাবলি থাকে কিভাবে একটি ভালো কোম্পানি দাঁড় করানো যায় বা গঠন করা যায়। এটা হওয়াতে আমাদের ব্যবসায়িদের সুবিধা হয়েছে। সবাই একটা প্রেসক্রিপসন হিসাবে কাজ করতে পারে। কিভাবে সাজালে কোম্পানিগুলা আরও ইফিসিয়েন্টলি রান করতে পারে, এটাই মেইন উদ্দেশ্য একটা কর্পোরেট গভর্নেন্স কোড থাকার। এর সঙ্গে আমি বলবো আগে যেই সিনারিও ছিল এখন বাংলাদেশের প্রফেসনালিজম এবং এডুকেশন লেভেলও বেড়েছে। এখন প্রফেশনালদের কাজ করায় বাহিরে এবং দেশে ঐ পার্থক্যটা অতো অনুভব করা যায় না। এইটা আমি বলবো খুবই ভালো একটা ব্যাপার। আশা করি এটা কন্টিনিউ করবে।
সম্পাদক, কর্পোরেট সংবাদ: বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন কর্পোরেট গর্ভানেন্স কোড ইস্যু করেছে ২০১৮ সালে। এই কর্পোরেট গর্ভানেন্স কোড মাফিক ২০১৮ সাল থেকে একটি নির্দিষ্ঠ বিধি-বিধানের মধ্য দিয়ে কোম্পানিগুলোকে চলতে হয়। আপনারা সেটিকে কিভাবে মূল্যায়ন করেন?
রাশেদ সামিউল ইসলাম, এমডি মুন্নু ফেব্রিক্স: আমি বলবো এই প্রফেনাল বডিগুলোকে সম্পৃক্ত করা। প্রফেনাল বডিগুলো যত শক্তিশালী হবে ওভাবেই প্রফেনালদের হাইয়ার স্কিল হবে। কোম্পানিরা যদি ভাল প্রফেশনাল বডি থেকে মেম্বার নিয়োগ করে তাহলে কোডগুলো বা নতুন কোড যা যা আসছে এগুলো অনুসরণ করে কোম্পানি চালু করা কোন কঠিন কাজই হবে না। আর কোডগুলো আমরা যেভাবে আইএফআরএস সিস্টেমে এ্যাকাউন্টিং করে আসছি বহু আগে থেকে, ওটাতে তো আমরা সবাই অভ্যস্ত। কারণ এটা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড স্বীকৃত একটি প্রপার এ্যাকাউন্টিং সিস্টেম। একই রকম ভাবে কর্পোরেট গর্ভনান্সেরও উনিশ-বিশ হতে পারে দেশ থেকে দেশ কিন্তু ওয়ার্ল্ড ওয়াইড একটি সেট স্ট্রাকচার আছে কর্পোরেট গর্ভনেন্সের বেস্ট প্রাকটিস হিসাবে। কাজেই এগুলো আরো যত বেশি প্রয়োগ করা হবে আমি বলবো বিজনেস ট্রান্সফারেন্সি বা বিজনেস ইফিসেন্সি আরো বাড়বে।
সম্পাদক, কর্পোরেট সংবাদ: আপনাদের তিনটি প্রতিষ্ঠানেই প্রাকটেসিং চার্টার্ড সেক্রেটারিদেরকে দিয়ে আপনারা কমপ্লায়েন্স অডিট এবং প্রতি বছর যে এজিএম বা ইজিএম হয় সেখানে এজিএমের পর্যোবেক্ষক হিসেবে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। আগে ফিন্যানন্সিয়াল অডিট করতো শুধু সিএ ফার্ম এখন কম্পায়েন্স অডিট এবং এজিএমের পর্যোবেক্ষক হিসেবে চার্টার্ড সেক্রেটারি ফার্মদের ইনভলব করেছেন আপনারা তাদের সাথে কাজ করতে কেমন বোধ করছেন?
রাশেদ সামিউল ইসলাম, এমডি মুন্নু ফেব্রিক্স: আমি সব সময় পছন্দ করি প্রফেশনাল মেম্বারদের সাথে কাজ করতে। যত বেশি পর্যোবেক্ষনে থাকে, এমডি হিসেবে ওনারা ততো বেশি আমাকে সাহায্য করে আমার কোম্পানি কিভাবে আরো ভালভাবে চালানো যায়। আমি উপলব্ধি করি এখন আমার একজন সিএফও যদি চার্টার্ড এ্যাকাউটেন্ট হোন উনি এসে আমাকে ধারণা দিতে পারবেন যে কিভাবে এ্যাকাউন্টস করলে আরো ভাল হবে। একই রকম ভাবে কোম্পানি সেক্রেটারি যদি চার্টার্ড সেক্রেটারি হন উনি সেক্রেটারিয়াল ভিশনটা একদম প্রোপারলি রান করতে পারবেন।
সম্পাদক, কর্পোরেট সংবাদ: আরেকটি বিষয় আমি আবেদন হিসেবে রাখতে চাই যে, মার্কেটে আপনাদের তিনটি লিস্টেট কোম্পানি রয়েছে। কিছু দিন আগে অ্যাপায়েন্টমেন্ট আসছে মিনিমাম দুইজন ইডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর রাখতে হবে। সে হিসেবে আপনাদের তিন কোম্পানিতে ৬ জন ইডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর দরকার। আগে তিনজন দরকার ছিলো এখন ৬ জন। আগে যে একটা বিষয় ছিলো যে নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে কাজ করানো হতো সে যোগ্যতা থাকুক আর না থাকুক। সেখান থেকে আপনারা বের হয়ে আসছেন এটা কিন্তু অত্যান্ত ভালো দিক। তো আমার জানার ইচ্ছা যে, চার্টার্ড সেক্রেটারি প্রাক্টিজে যারা আছে আপনারা তাদের কিভাবে মূল্যায়ন করতেছেন, চার্টার্ড সেক্রেটারি মেম্বারদেরকে কোম্পানির সেক্রেটারি হিসাবে মূল্যায়ন করতেছেন। আপনাদের বোর্ডের ইনডিপেনডেন্ট ডাইরেক্টর হিসাবে কর্পোরেট প্রোফেশনে যারা আছে চার্টার্ড একাউন্টেন্ট, কস্ট একাউন্টেন্ট এবং চার্টার্ড সেক্রেটারি এদেরকে গুরুত্ব দেওয়ার ব্যাপারে পজেটিভ দিষ্টিভঙ্গি আছে কি না?
রাশেদ সামিউল ইসলাম, এমডি মুন্নু ফেব্রিক্স: ইডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর হিসেবে এটা তো এসইসি খুব ভালো নির্দেশনা ছিলো। যে ইন্ডাস্ট্রিজ প্রফেশনালদের ইডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর বানাতে হবে। এটাতে আমাদের অনেক লাভ হয়েছে। এখন আমাদের সাথে দুইজন ইডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর আছে যারা খুব হাইলেভেল কর্পোরেট ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছে। তারা আমাদের ফিন্যান্সিয়াল ম্যাটারে গাইডলাইন দিতে পারে। তার সাথে আরেকজন আছে যে ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে যেটা মুন্নু এগ্রোতে একজন আসছে উনি এগ্রিকালচার ব্যাকগ্রাউডে লেখাপড়া করা আর অভিজ্ঞতা নেয়া। যেহেতু সবাই তো আমরা সব কিছু পারি না আর সব কিছু জানিও না, এটা মানতে হবে। এভাবে আমরা ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ব্যাকগ্রাউড বা কর্পোরেট ব্যাকগ্রাউডে অভিজ্ঞ সিনিয়র যারা আছে তাদেরকে নিয়ে কাজ করে আমরা এগিয়ে যাওয়া চেষ্টা করছি। ইনশাআল্লাহ, আমি বলবো না এখন যদি কেউ ইন্টারেস্ট দেখায় বা আমরা যদি বের হই নতুন ইডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর খুঁজতে কেউ যদি জয়েন করতে চায় উনি যদি চার্টার্ড এ্যাকাউন্টটেন্ট হোন বা চার্টার্ড সেক্রেটারি হোন আমারা তাকে স্বাগতম জানাবো।
সম্পাদক, কর্পোরেট সংবাদ: ২০২৩ সালে যে ইনকাম ট্যাক্স আইন আসলো এ ট্যাক্স আইন আসার কারণে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মুন্নু ফেব্রিক্স ইনকাম ট্যাক্সে নেগেটিভ কিছু আছে কিনা? এনবিআরের ইনকাম ট্যাক্সের নতুন আইনের কারণে আপনাদের কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা? আর বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে কি বলবেন?
রাশেদ সামিউল ইসলাম, এমডি মুন্নু ফেব্রিক্স: না, এনবিআরের ইনকাম ট্যাক্সে আমাদের কোন সমস্যা নেই। এটা আমরা অনেক আগে থেকেই নিয়ম-মাফিক দিয়ে আসছি। আর শেয়ারহোল্ডাদের ব্যাপারে যেটা বলতে পারি এমডি হিসেবে আমি অবশ্যই চেষ্টা করবো ডিভিডেন্ড বাড়ানোর জন্য। ব্যবসা যত ভাল হবে ডিভিডেন্ড তত বেশি দেয়া যাবে। এটা নিয়েই কাজ করবো, ইনশাআল্লাহ। যেটা বলেছি পোড্রাক্টশন বাড়াবো, পোডাক্টশন বাড়ায়ে এক্সপেনশনে গেলে ইনকাম বাড়বে, ইনকাম বাড়লে প্রফিট বাড়বে, ডিভিডেন্ড আরো বেশি দেয়া যাবে।
সম্পাদক, কর্পোরেট সংবাদ: ভাল লাগলো আপনার সাথে কথা বলে। কর্পোরেট সেক্টরে যারা ভাল করছেন তাদেরকে নিয়ে আমার কর্পোরেট সংবাদ এর পক্ষ থেকে আমরা যে বক্তব্য নিয়ে থাকি, নতুনরা আপনাদের কথায় উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত হবেন এবং যারা কর্পোরেট প্রফেশনে আছেন তারাও আপনার বক্তব্য শুনার পর অনুপ্রাণিত হবেন। পরিশেষে আর কিছু সংযুক্ত করতে চাইবেন?
রাশেদ সামিউল ইসলাম, এমডি মুন্নু ফেব্রিক্স: যেটা বলতে চেয়েছিলাম আপনার একটি প্রশ্ন ছিল যে এমডি হিসাবে কি চ্যালেঞ্জিং ফাইন্ড করি বা কি করতে চাচ্ছি? তো আল্টিমেটলি আমার যেটা ফিলোসফি হচ্ছে এমডি হিসাবে বোর্ড হিসাবে ম্যানেজমেন্ট হিসাবে আমাদের কাজ হচ্ছে একটা কোম্পানির ভিশন সেট করা। আমি ৫-১০ বছরে আমার কোম্পানি ঐখানে নিতে চাই। আর প্রফেশনালদের কাজ হচ্ছে এই রিজনটাকে বাসÍবায়ন করা। এর ভিতর আমরা হচ্ছি মাধ্যম। যে আল্টিমেটলি আমার উৎপাদন আমরা এইচআর আমরা সেক্রেটারি সব ডিভিশন জানি এক সাথে কাজ করে, ওদের কি সমস্যা কি সুবিধা লাগবে এক সাথে কাজ করায় এক সাথে কমিনিকেশন করায় একটা হারমনি ক্রিয়েট করে ভিশনটা যেন এচিভ করতে পারে। তো এটাই আমার ফিলোসাফি যে আমি ভিশন আনছি স্ট্রাটেজি আনছি। এটা হচ্ছে আমার দায়িত্ব। মার্কেটে কি হচ্ছে কোথায় কোন দিকে গেলে ব্যবসায় লাভ হবে। আমার আন্ডারে আমার সার্পোটে এ প্রফেশনাল যারা থাকবে প্রফেশনালরা ডিটেলস কাজ করবে। আর আমি উপরের আর একটি বড় স্ট্রাটেজির কাজ করব। এভাবে করে একটি কোম্পানিকে আগানো যায় বড় করা যায়। তো এটাই আমার চেষ্টা থাকবে।