স্পোর্টস ডেস্ক : প্রথম বারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে বিধ্বস্ত করে শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। টাইগার যুবাদের দেয়া ২৮৩ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৮৭ রানেই গুটিয়ে যায় আরব আমিরাত। ১৯৫ রানের বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। এবারই প্রথম যুব এশিয়া কাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ।
এ আসরের অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হলো টাইগার যুবারা। সেটিও রেকর্ড গড়ে। যুব এশিয়া কাপ ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় জয়। আগেরটি ছিল আফগানিস্তানের, ২০১৭ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৮৬ রানে জিতেছিল তারা।
রোববার (১৭ ডিসেম্বর) দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ।
আগে ব্যাট করে আশিকুর রহমান শিবলির শিবলির দুর্দান্ত শতকে আগে ব্যাট করে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৮২ রান করেছিল বাংলাদেশ। জবাবে আমিরাত অলআউট হয়ে গেছে মাত্র ৮৭ রানে।
আজ লক্ষ্য তাড়ায় নেমে নড়বড়ে শুরু পায় আমিরাত। পঞ্চম ওভারে ওপেনার আরিয়ানশ শর্মাকে (৯) বিদায় করেন বাংলাদেশের পেসার মারুফ মৃধা। এরপর সপ্তম ওভারে ফের আঘাত হানেন মারুফ। এবার আরেক ওপেনার অক্ষত রাই (১১) বোল্ড করে ফেরেন ড্রেসিংরুমে। উইকেট পতনের মিছিল সেই থেকে শুরু। এরপর একে একে তানিশ সুরি (৬), এথান ডি’সুজা (৪) এবং আয়ান আফজাল খান (৫)-এর উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। পরের ৩টি উইকেটই নেন মিডিয়াম পেসার রোহানাত দৌল্লা বর্ষণ।
দলীয় ১২ রানের প্রথম উইকেট হারানো আমিরাত পাওয়ার প্লে’তে হারায় আরও ৩ উইকেট। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পর দ্বাদশ ওভারেই যোগ হয় আরও এক উইকেট। সেই ধাক্কা আর সামলে উঠতে পারেনি আমিরাত। উইকেট পতনের মিছিলে যুক্ত হয় বাকিরাও। চারে নেমে হারের ব্যবধান কমানো ২৫ রানের ইনিংস খেলেন ধ্রুব।
ফাইনালে উইকেট শিকারীর তালিকায় নাম লেখান বাংলাদেশের চার বোলার। এর মধ্যে মারুফ ও বর্ষণ ৩টি করে, ইকবাল হোসেন ইমন এবং পারভেজ রহমান জীবন পান২টি করে উইকেট।
এর আগে আশিকুর রহমান শিবলির দারুণ এক সেঞ্চুরিতে ভর করে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের ফাইনালে আজ সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ২৮৩ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছে বাংলাদেশের ছেলেরা। দুবাইয়ে আজ টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে অবশ্য ভালো শুরু পায়নি বাংলাদেশ। ওপেনার জিশান ইসলাম (৭) বিদায় নেন দ্রুতই। কিন্তু এরপর ১২৫ রানের জুটি গড়ে মোড় বদলে দেন শিবলি এবং চৌধুরী মোহাম্মদ রিজওয়ান।
রিজওয়ান ৭১ বলে ৬০ রান করে বিদায় নিলেও চাপে পড়েনি বাংলাদেশ। কারণ এরপর ফের আরিফুল ইসলামকে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি জুটি গড়েন শিবলি। এর মাঝেই আসরে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি। এই ম্যাচের আগের চার ম্যাচে ২টি ফিফটি ও একটি সেঞ্চুরি ছিল তার। আসরে একমাত্র ব্যাটার হিসেবে ৩৫০-এর বেশি রানও করেছেন শিবলি।
শিবলি ধরে খেললেও অন্যপ্রান্তে আরিফুল হক রানের চাকা সচল রাখতে দারুণ ভূমিকা রাখেন। ব্যাট হাতে দৃষ্টিনন্দন কিছু শট খেলে তিনি তুলে নেন ফিফটিও। ব্যক্তিগত ফিফটির পর অবশ্য টিকতে পারেননি আরিফুল। ৪০ বলে ৬ চারে সাজানো এই ইনিংসটি শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশের রানরেট ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু তার বিদায়ের পর দ্রুত আরেকটি উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
৫ বলে ৫ রান করে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন আহরার আমিন। মোহাম্মদ শিহাব জেমসও (৩) পারেননি দাঁড়াতে। তবে অপরপ্রান্তে অটল থাকেন শিবলি। যদিও স্ট্রাইকরেট তুলনামূলক কম ছিল তার, তবে শেষদিকে অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান রাব্বি মাত্র ১১ বলে ২ ছক্কা ১ চারে ২১ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে রানের গতি ঠিক রাখেন।
শেষ ওভারে অবশ্য বেশি রান তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। উইকেটও হারিয়েছে ৩টি। আমিরাতের পেসার আয়মান আহামেদের করা ওভারের দ্বিতীয় বলেই লং অনে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন লোয়ার অর্ডার ব্যাটার রাব্বি। পঞ্চম বলে একই পথ ধরেন শিবলি। ১৪৯ বলে ১২৯ রানের ইনিংসটি খেলার পথে ১২টি চার ও ১ ছক্কা হাঁকান এই ওপেনার। ওভারের শেষ বলে অষ্টম উইকেট হিসেবে বিদায় নেন রোহানাত দৌল্লা বর্ষণ। ৮ উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৮২ রান।
বল হাতে আমিরাতের আয়মান তুলে নিয়েছেন ৪ উইকেট। এছাড়া ওমিদ রহমান ২টি এবং হার্দিক পাই ও ধ্রুব পারাশার ১টি করে উইকেট নেন।
এর আগে ২০১৯ সালে প্রথম এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। ভারতের কাছে হেরে স্বপ্ন ভেঙেছিল। এবার শুরু থেকেই দাপট দেখিয়েছে টাইগার বাহিনী। গ্রুপপর্বে সংযুক্ত আরব আমিরাত, শ্রীলঙ্কা ও জাপানকে হারিয়ে সেমিতে পা রাখে কোচ ওয়াসিম জাফরের শিষ্যরা, সেমিতে কোচের জন্মভূমি ভারতকে ৬১ রানে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট কাটে। অন্যদিকে পাকিস্তানকে ১১ রানে হারিয়ে ফাইনালে এসেছিল আরব আমিরাত।