নিজস্ব প্রতিবেদক: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে আনা কয়েকটি বিষয় অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের চূড়ান্ত শুনানি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অনুষ্ঠিত হবে।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘১৫ বছরের জঞ্জাল সরিয়েছি ১৬ মাসে।’
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর শুনানির সময় অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, ‘আগের আপিল বিভাগের মতো এমন কোনো রায় দিতে চাই না, যা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।’
সকালে শুনানির শুরুতে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের মতামত জানতে চেয়ে বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু কিছু বিষয় থাকা দরকার ও কিছু কিছু পরবর্তী সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত। তিনি অ্যাটর্নি জেনারেলকে জিজ্ঞেস করেন, জামায়াতের পক্ষের আইনজীবী শিশির মনির শুনানিতে যে মত দিয়েছেন— এখন পঞ্চদশ সংশোধনীর শুনানি শেষ না করে তা মুলতবি রেখে পরবর্তী সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত— এই বিষয়ে তাঁদের মত কী?
উত্তরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তাঁরা চান এটার শুনানি শেষ হয়ে যাক ও আপিল বিভাগ থেকে একটি রায় আসুক।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা আগের আপিল বিভাগের মতো কোনো রায় দিতে চাই না, যা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কয়েকদিন পরে নতুন আপিল বিভাগ গঠিত হবে, সেখানে এটির শুনানি হলে কেমন হয় অথবা যদি শুনানিতে একটা দীর্ঘ মুলতবি করা হয় তাহলে তো সব পক্ষই সুবিধা পায়।’ পরে ফের শুনানি শুরু করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তাঁরা আজই এর শুনানি শেষ করবেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এনে, ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনী আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ ওই সংশোধনীতে সংবিধানে ৫৪টি ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছিল।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরো আইন ও আইনের কয়েকটি ধারার বৈধতা নিয়ে গত বছর হাইকোর্টে আলাদা দুটি রিট হয়। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদকসহ পাঁচ ব্যক্তি একটি এবং নওগাঁর বাসিন্দা মো. মোফাজ্জল হোসেন আরেকটি রিট করেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন।
হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তি– সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করেন। এই দুটিসহ পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত ৭ক, ৭খ, ৪৪(২) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। রায়ে গণভোটের বিধানসংক্রান্ত ১৪২ অনুচ্ছেদ (দ্বাদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে আনা) পুনর্বহাল করা হয়। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন সম্পূর্ণ বাতিল না করে অন্য বিধানগুলোর বিষয়ে আইন অনুসারে পরবর্তী সংসদ সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি আপিল হয়। সুজন সম্পাদকসহ চার ব্যক্তি একটি আপিল করেন। নওগাঁর বাসিন্দা মো. মোফাজ্জল হোসেন একটি ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আরেকটি আপিল করেন। আপিলের ওপর ৩ ডিসেম্বর (গত বুধবার) শুনানি শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় ৪, ৭ ও ৮ ডিসেম্বর এবং ১০ ডিসেম্বর শুনানি হয়। আদালতে বদিউল আলম মজুমদারসহ চার ব্যক্তির পক্ষে শুরুতে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া।
মোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ এস এম শাহরিয়ার কবির। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে শুনান করেন সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আদালতে বিএনপি’র পক্ষে ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। এছাড়া স্বতন্ত্র ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন ও ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী।


